প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি সোনিয়ার , বিশেষ অধিবেশনে ৯ টি বিষয় নিয়ে আলোচনার দাবি 

দিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বর –  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কে চিঠি দিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি । সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর বিশেষ অধিবেশন বসবে সংসদের। তার আগে এই চিঠি দিয়ে সোনিয়া গান্ধি জানালেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের এই বিশেষ অধিবেশনের কোনও অ্যাজেন্ডা জানানো হয়নি। তাই, পাঁচদিনের অধিবেশনে মণিপুর হিংসা এবং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক-সহ ৯টি বিষয়ে আলোচনার দাবি জানাচ্ছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেত্রী লিখেছেন, “অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কোনও পরামর্শ ছাড়াই এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আমরা শুধু জানি, পাঁচ দিনই সরকারি কাজের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।” তবে, বিরোধীদের তোলা বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য সময় বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সোনিয়া।

চিঠিতে সনিয়া জানিয়েছেন, কংগ্রেস এই বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিতে চায়। কারণ, এই অধিবেশন জনগণের উদ্বেগের বিষয়গুলি উতথাপন করার বড় সুযোগ। এরপরই তিনি ৯টি বিষয় আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত করেছেন। এই বিষয়গুলি হল – মূল্যবৃদ্ধি, এমএসপি-সহ কৃষকদের দাবি, আদানি ইস্যুতে যৌত তদন্ত কমিটি, মণিপুর হিংসা, হরিয়ানার হিংসা, চিন সীমান্তের উত্তেজনা, জাতি-ভিত্তিক জনগণনা, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং কয়েকটি রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা। চিঠিতে সনিয়া বলেছেন, “আশা করি, গঠনমূলক সহযোগিতামূলক চেতনা থেকে এই বিষয়গুলি নিয়ে আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে আলোচনা হবে।”

বুধবার সকালে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “সংসদের বিশেষ অধিবেশন কেন ডাকা হয়েছে কেউ জানে না। আমরা তো মোদি চালিশা শুনতে যাব না। দেশের মানুষের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।”


সোনিয়া গান্ধি যে বিষয়গুলির কথা জানিয়েছেন, তার পাশাপাশি সংসদের আসন্ন অধিবেশনে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও আলোচনা চান বিরোধীরা। সম্প্রতি দুই ব্রিটিশ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে ভারত থেকে টাকা বেআইনি ভাবে বিদেশে পাচার করে সেই টাকা ঘুরিয়ে আদানির সংস্থায় বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। আর তার মাধ্যমে স্টক মার্কেটকে প্রভাবিত করে আদানির শেয়ার দর বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করে সংসদে সরব হতে চায় কংগ্রেস ও বিরোধীরা।

সংসদের বিশেষ অধিবেশন আগামী ১৮  থেকে ২২ সেপ্টেম্বর অবধি চলবে। তবে কী নিয়ে এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি সরকার।  জল্পনা, “এক দেশ, এক নির্বাচন” বিল পেশ করা হতে পারে। মঙ্গলবার জি-২০ আমন্ত্রণ পত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র বদলে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লেখা থাকার কারণে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে যে দেশের নাম ইন্ডিয়ার বদলে ভারত রাখতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আসন্ন অধিবেশনে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার কী অবস্থান হবে, তা নিয়ে বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখবেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি। সংসদের বিশেষ অধিবেশনে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা চাইছে বিরোধী দলগুলি, তা তুলে ধরা হবে ওই চিঠিতে।

মঙ্গলবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাসভবনে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ নৈশভোজ ও বৈঠকের। ওই বৈঠকে যোগদে দেন ইন্ডিয়া জোটের সংসদীয় দলের নেতারা। দীর্ঘক্ষণ তাদের মধ্যে আলোচনা চলে। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার সকলকে অন্ধকারে রেখে অধিবেশন ডেকেছে। কী নিয়ে আলোচনা হবে বিশেষ অধিবেশনে, তাও জানানো হচ্ছে না।

বিরোধীদের অভিযোগ, ইন্ডিয়া জোটকে ভয় পেয়েছে সরকার। প্রচারের আলো থেকে ইন্ডিয়া জোটকে সরাতেই ভারত নাম নিয়ে মাতামাতি করছে ।

সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাবনা পর্যালোচনার জন্য কেন্দ্রের গঠন করা কমিটিতে প্রধান হিসাবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে মনোনীত করা নিয়েও আপত্তি তুলেছে ইন্ডিয়া জোট। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে লোকসভার সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া জোট।

এদিকে, কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৌ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “বিজেপি নিজেই বলতে পারছে না কী কারণে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। বিজেপি গোটা দেশকে অন্ধকারে রেখেছে। সরকার দেশের প্রতি স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল নয়”। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গেও টুইট করে বলেন, “কোনও কারণ ছাড়াই মোদি সরকার প্রথমবার বিশেষ অধিবেশন ডাকল। বিরোধী দলের কাউকে এই বিষয়ে অবগত করা হয়নি। গণতন্ত্রে এমন হয় না। ‘

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিরোধীরা সরকারের খেলা ধরতে পেরেছেন। তাঁরা মনে করছেন, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মোদির গুণগান   ছাড়া কিছু হবে না। তা ছাড়া সরকার প্রকৃত বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে এই সব কাজকর্ম করছে। তাই সংসদের মধ্যেই চেপে ধরা হবে  সরকারকে। বিজেপির অস্ত্রকেই পাল্টা ব্যবহার করে ফিরিয়ে দেওয়া হল সোনিয়ার চিঠি মারফত।