যাত্রীর মালের দায়িত্ব নেবে না রেল, রায় সুপ্রিম কোর্টের

দিল্লি, ১৬ জুন– এবার ট্রেনে যেখানেই যান নিজের জিনিসের দায়িত্ব কিন্তু নিজেকেই রাখতে হবে। ট্রেন আপনাকে গন্তব্যে  পৌঁছে দিয়ে দায়বদ্ধ থাকলেও আপনার মালপত্রের সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ নয়। এমনটাই রায় দেশের শীর্ষ আদালতের। 

একটি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এক যাত্রীকে তার মালপত্র খোয়া যাওয়ায় এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায় বহাল রেখেছিল রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও। শুক্রবার সেই আদেশ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সর্বোচ্চ আদালতের অবকাশকালীন বেঞ্চের দুই বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং আসাউদ্দিন আমানুল্লাহ শুক্রবার বলেছেন, চুরির দায় কখনই রেল কর্তৃপক্ষের উপর চাপানো যায় না।


মূল মামলাটি ২০১৫ সালের। ওড়িশার এক যাত্রী রেলের বিরুদ্ধে জেলা ক্রেতা আদালতে মামলা দায়ের করে বলেন, যাত্রাকালে চলন্ত ট্রেন থেকে তার মালপত্র চুরি গিয়েছে। নথিপত্র দিয়ে তিনি দাবি করেন, চুরি যাওয়া মালপত্রের আর্থিক মূল্য এক লাখ টাকা।

দীর্ঘদিন মামলা চলার পর জেলা আদালত যাত্রীকে এক লাখ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। শুনানিতে রেলের তরফে বলা হয়, আইনে এমন ক্ষতিপূরণের কোনও বিধান নেই। এত বড় রেল পরিষেবায় যাত্রীদের নন-বুকিং মালপত্রের দায় রেলের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই তারা চুরির দায় নেয়নি। রেলের আইনেও সে কথা বলা আছে। একজন যাত্রী আর একজনের মালপত্র নিয়ে নেমে গেলে রেলের কিছু করার নেই। মাল রক্ষার দায়িত্ব যাত্রীর, বারে বারে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। তবে যাত্রী অভিযোগ করলে রেল পুলিশ চোর ধরার চেষ্টা করে।

কিন্তু জেলা ক্রেতা আদালতের বক্তব্য ছিল, একজন যাত্রী টিকিট কেটে স্টেশনে প্রবেশের পর থেকেই তাঁর দায়িত্ব রেলের। মালপত্রের দায়িত্বও রেলকেই নিতে হবে। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বক্তব্য, মানুষ শুধু দ্রুত, আরামে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ট্রেনে চাপে না, নিরাপদ যাত্রাও কাম্য। ট্রেনের সংকল্প হিসাবে নিরাপত্তা, সুরক্ষার কথাও বলা আছে। মানুষ সে সব দেখে ট্রেন যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। আইন দেখে নয়।

জেলা আদালতের নির্দেশ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও বহাল রাখে। তারাও যাত্রীকে এক লাখ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে রেল সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে।

রেলের এক আধিকারিক বলেন, এক লাখ টাকা ভারতীয় রেলের কাছে কিছুই না। কিন্তু ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশ মেনে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ করা হলে রেল মহা বিপাকে পড়ে যেত। প্রতিদিন শত শত চুরির অভিযোগ দায়ের হয়। সব ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণের দাবি উঠবে। এই ভাব চললে ক্ষতিপূরণ করতে গিয়ে রেল দেউলিয়া হয়ে যাবে।