৮২২ নয়, বাংলার জন্য ৩৩৭ কোম্পানির অনুমোদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

দিল্লি, ২৩ জুন– এবার পঞ্চায়েত ভোট এক দফায় ৮ জুলাই হওয়ার কথা। সেই ভোট নিয়ে আগুন ঝরছে বঙ্গে। মনোনয়ন ঘিরেই ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ বাংলার ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল সরকার বিরোধীদেরা যাতে মনোয়ন জমা দিতে না পারে তারজন্য নেমেছে খুনোখুনিতে। এই হিংসা দেখে বিরোধীরা পৌঁছেছে আদালতে। তাদের অনুরোধ বাংলার পঞ্চায়েত ভোট পুরোটাই হোক কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্বাবধানে। 

সেই অনুরোধেই কলকাতা হাইকোর্ট বুধবার নির্দেশ দিয়েছে এবার পঞ্চায়েত ভোটে ২০১৩ সালের মতো অন্তত ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাতে হবে। অর্থাৎ ৮২০ কোম্পানির বেশি সেন্ট্রাল ফোর্স নামাতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কমিশন গত মঙ্গলবারই ২২ কোম্পানি ফোর্সের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিক্যুইজিশন পাঠিয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরও ৮০০ কোম্পানি ফোর্সের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়েছে।

এদিন রাতেই সেই জবাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা ২২ কোম্পানি ফোর্স ইতিমধ্যে অনুমোদন করেছে। আরও ৩১৫ কোম্পানি ফোর্স আপাতত দিতে পারবে। অর্থাৎ ৩১৫ +২২, মানে ৩৩৭ কোম্পানি ফোর্স অনুমোদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।


হাই কোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রের কাছে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সেই দাবি এখনই পূরণ করতে পারছে না কেন্দ্র। আপাতত পাঠানো হচ্ছে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী। তাও সবটা কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। ১২টি রাজ্য থেকে স্পেশ্যাল আর্মড ফোর্সও পাঠানো হচ্ছে রাজ্যে।
হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর নির্দেশ দেওয়ার পর ২২টি জেলার জন্য মোট ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। সেই ২২ কোম্পানি বাহিনী তৎক্ষণাৎ পাঠিয়েও দেয় কেন্দ্র। কিন্তু পরে হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, অন্তত ২০১৩ সালের সমান বাহিনীকে ভোটে কাজে লাগাতে হবে। আদালতের সেই নির্দেশ পেয়ে আরও ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠান রাজীব সিনহারা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে চাওয়া হয় ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।

শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এর মধ্যে ৩১৫ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। এর মধ্যে ২০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে ৫০ কোম্পানি সিআরপিএফ, ৬০ কোম্পানি বিএসএফ, ২০ কোম্পানি আইটিবিপি, ২৫ কোম্পানি এসএসবি, ২০ কোম্পানি আরপিএফ এবং সিআইএসএফ ১৫ কোম্পানি। এর বাইরে ১২টি রাজ্য থেকে স্পেশ্যাল আর্মড ফোর্স আসছে আরও ১১৫ কোম্পানি। রাজ্য সরকারও ভোটের জন্য অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী আনার পরিকল্পনা করেছিল। কেন্দ্রও সেই ভিনরাজ্য থেকেই বাহিনী পাঠাচ্ছে। এছাড়া ২২ কোম্পানি বাহিনী আগেই পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রথম পর্যায়ে মোট ৩২৭ কোম্পানি বাহিনী আসছে রাজ্যে।

নির্বাচন কমিশন তথা হাই কোর্ট যে পরিমাণ বাহিনী চেয়েছিল কেন্দ্র প্রাথমিকভাবে সেই চাহিদা পূরণ করতে পারল না। সুত্রের খবর, এই মুহূর্তে অশান্ত মণিপুরে প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। ফলে দ্রুত বাংলায় ৮০০ কোম্পানি বাহিনী পাঠানো কঠিন। তাতে খানিকটা সময় লাগবে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনে করছে, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিজেপি আবেদন করতে পারে যে এবারও পঞ্চায়েত ভোট কয়েক দফায় ভেঙে দেওয়া হোক। তার পর ৩৩৭ কোম্পানি সেন্ট্রাল ফোর্স ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রতি দফায় প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা হোক। কমিশন ও সরকার মনে করছে, তা বিজেপি তথা দিল্লি চার বা পাঁচ দফায় করানোর খেলায় নেমেছে।

তবে কমিশনের এক কর্তা এদিন বলেন, কত দফায় ভোট করানো হবে তা নির্ধারণ করার এক্তিয়ার এক মাত্র রাজ্য নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে কমিশনের কাজে আদালতও হস্তক্ষেপ করতে পারে না।