শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ১৮০ খ্যাতনামা সাংবাদিকদের ফোনে  পেগাসাসের কান

ওয়াশিংটন, ২৯ ডিসেম্বর– শুধু সারা বিশ্বের ১৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের ওপর নজরদারিই নয় তাদের ফোনেও আড়ি পাতছে ইজরায়েলি নজরদারি সংস্থা এনএসও৷ এমনটাই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক তদন্ত-রিপোর্ট৷ আর ওয়াশিংটন পোস্টের এই রিপোর্ট প্রকাশ হতেই  হইচই পডে় গেছে৷ ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, তদন্তমূলক সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদেরই টার্গেট করছে ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস৷ ভারতের দুই সাংবাদিকের আইফোনে আডি় পাতছে পেগাসাস যাঁরা আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে তদন্তমূলক রিপোর্ট ছাপছেন৷ তবে ওই রিপোর্টে আরেকটি যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা ভারতের বিরোধীদের হাতে মোক্ষমঅস্ত্র তুলে দেওয়ার মত৷ রিপোর্টে জানান হয়েছে, ভারতে যে সাংবাদিদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে সেক্ষেত্রে ভারত সরকারের মদতেই এই নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে৷
২০২১ সালে পেগাসাস কাণ্ড সামনে আসায় তাই তোলপাড় শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে৷ মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত৷ সেখানে অবশ্য টেকনিক্যাল কমিটি জানিয়ে দেয় যে, পেগাাসাসের মতো স্পাইওয়্যার সবসময় ব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ পেগাসাস দিয়ে আডি় পাততে হলে তারজন্য আলাদা কন্ট্রোল ইউনিট খুলতে হবে৷ তাই ফোনে আডি় পাতা নিয়ে মামলা খারিজ হয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টে৷ এরপর দু’বছর কেটে গেছে৷ এখন হঠাৎ করেই পেগাসাসের নজরদারি দিয়ে রিপোর্ট বের করেছে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট৷ তাদের দাবি, বিশ্বের নামী সাংবাদিকদের আইফোনে গোপনে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে পেগাসাস৷
এবারের শিকার দুই খ্যাতনামা সাংবাদিক৷ তাঁদের মধ্যে একজন আবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তমূলক রিপোর্ট বের করেন৷ মার্কিন সংবাদপত্রের দাবি, ‘দ্য ওয়্যার’ নিউজ পোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন ও ‘দ্য অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড কোরাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট’ (ওসিসিআরপি)-এর দক্ষিণ এশিয়ার সম্পাদক আনন্দ মাঙ্গনালের আইফোনে নজরদারি চালাচ্ছে পেগাসাস৷ ভারত সরকারের মদতেই এই নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে৷ ওয়াশিংটন পোস্টের আরও দাবি, গত কয়েকমাস ধরেই খ্যাতনামা সাংবাদিকদের আইফোনে অ্যাপলের সতর্কবার্তা আসছিল যে রাষ্ট্রের মদতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নজরদারি চালাচ্ছে৷ তারপরেই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে৷
ইজরাইলের প্রাক্তন সাইবার গোয়েন্দাদের হাত ধরে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল এনএসও গ্রুপ৷ তাদেরই তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার৷ এটি ব্যবহার করে বিশ্বের অন্তত ৪৫টি দেশে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ-সহ বিভিন্ন পেশার বহু ব্যক্তির স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে জানা যায়৷ এনএসও গ্রুপের দাবি, গুরুতর অপরাধ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের বাইরে পেগাসাস সফটওয়্যারকে কাজে লাগানো মানে তা এটির অপব্যবহার করা৷ এ কথা পেগাসাসের চুক্তিতেও উল্লেখ করা রয়েছে৷ এনএসও আরও দাবি করেছে, কেউ যদি এটির অপব্যবহার করে, তা জানতে পারলে এনএসও-র তরফে পদক্ষেপ করা হয়৷ এর আগে ফ্রান্সের পাঁচ মন্ত্রীর ফোনে পেগাসাস আডি় পেতেছিল বলে অভিযোগ ওঠে৷