মামলা থেকে সরে গেলেন মহুয়ার আইনজীবী, অস্বস্তিতে তৃণমূল সাংসদ 

দিল্লি, ২০ অক্টোবর –  একের পর এক ধাক্কা তৃণমূল সাংসদের।  টাকার বিনিময়ে তিনি সংসদে প্রশ্ন করেন, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ  এমনই । বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে গত সপ্তাহে মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন এবং তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করার দাবি জানান। এদিকে, বিজেপি সাংসদের এই অভিযোগের পরই মানহানির মামলা দায়ের করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আগামী ৩১ অক্টোবর দিল্লি হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে। শুক্রবারই  মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী। ফলে আবার অস্বস্তিতে তৃণমূল সাংসদ। মানহানির মামলার শুনানিও পিছিয়ে গেল দিল্লি হাই কোর্টে।

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অভিযোগ ছিল, টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করে মহুয়া স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রও করেছেন। বিজেপি সাংসদকে নাকি ওই সব অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদরি। এই দুজনের বিরুদ্ধেই দিল্লি হাই কোর্টে মানহানির মামলা করেন মহুয়া। শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টে মামলার শুনানি ছিল।

মহুয়ার পক্ষে মামলা লড়ছিলেন আইনজীবী গোপাল শংকরনারায়ণ। এদিন শুরুতেই জয় অনন্ত দেহাদরি দাবি করেন, মহুয়ার আইনজীবীর স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। এর আগে মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে অন্য একটি মামলায় তিনি মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিলেন। বিচারপতি বলেন, আইনজীবী গোপাল শংকরনারায়ণ যদি মহুয়া এবং জয় অনন্ত দেহাদরির মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে থাকেন, তাহলে তিনি এই মামলায় যুক্ত থাকতে পারবেন না। এরপরই গোপাল শংকরনারায়ণ এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে মামলাটিও পিছিয়ে যায়। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩১ অক্টোবর। স্বার্থের সঙ্গে সংঘাতের কারণ দর্শিয়ে তিনি এদিন মামলা থেকে সরে দাঁড়ান।  বিপক্ষের আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদরাই দিল্লি হাইকোর্টে জানান, মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্য়াহার করে নিতে বলেন।  যদি তিনি সিবিআই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন, তবে পোষ্য কুকুর হেনরিকে ফেরত দিয়ে দেবেন মহুয়া।

প্রসঙ্গত, মহুয়া মৈত্রের প্রাক্তন প্রেমিক আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদরাই। টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ সামনে আসতেই তৃণমূল সাংসদ দেহদরাইকে প্রেমে হতাশ প্রাক্তন বলে উল্লেখ করেন এবং আইনজীবী বদলা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন। জানা গিয়েছে, সম্পর্ক ভাঙার পর দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের মধ্যে পোষ্য রটহুইলার কুকুর, হেনরিকে নিয়ে বিবাদ চলতে থাকে । বিগত ছয় মাস ধরে মহুয়া মৈত্র একাধিকবার আইনজীবী দেহদরাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ করেন। অনুপ্রবেশ, চুরি, অশালীন বার্তা এবং অভব্য আচরণের অভিযোগ আনেন মহুয়া ।


মানহানির মামলায় ধাক্কা খেলেও মহুয়া এদিন বিজেপিকে পালটা আক্রমণ করেছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদের এথিক্স কমিটি বা সিবিআই তাঁর কাছে কোনও প্রশ্ন করলে তিনি তার জবাব দেবেন। কিন্তু বিজেপির ট্রোল আর্মির কোনও প্রশ্নের জবাব তিনি দেবেন না। আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নেরও জবাব তিনি দেবেন না।

এদিকে আবার তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানি। একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক বিবৃতিতে হীরানন্দানি দাবি করেছেন, ব্যবসায়িক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁর কাছ থেকে অন্যায্য সুবিধা নিয়েছেন মহুয়া। যদিও তৃণমূল সাংসদ পালটা ওই বিবৃতির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলছেন, জাতীয় সংবাদমাধ্যমে যে বিবৃতি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা সাদা কাগজে লেখা। হীরানন্দানি গ্রুপের লেটারহেডে লেখা নয়। মাথায় বন্দুক না ঠেকালে ভারতের অন্যতম সম্মানীয় ব্যবসায়ী এই ধরনের কোনও বিবৃতি লিখবেন না। তাছাড়া দর্শন হীরানন্দানিকে কোনও তদন্তকারী সংস্থা তলব করেনি। তাহলে এই বিবৃতি তিনি কাকেই বা জমা দিলেন, আর এলই বা কোথা থেকে? তৃণমূল সাংসদের সরাসরি অভিযোগ, বিজেপি আইটি সেলের কোনও অর্ধশিক্ষিত কর্মী হীরানন্দানির নামে এই বিবৃতিটি লিখেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মহুয়া মৈত্র লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে একটি প্রভাবশালী বন্দুক রয়েছে। দর্শন এবং তাঁর বাবার মাথায় সেই বন্দুক ধরে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যেই সই করতে বলা হয়েছে ওই চিঠি। তাঁদের সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’ মহুয়ার অভিযোগ, ‘বিজেপি সরকার যেন তেন প্রকারে আমাকে আদানি ইস্যুতে কথা বলার থেকে আটকাতে চাইছে। এই হলফনামার সমস্ত বিষয়টি হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এমন কেউ এই হলফনামাটি লেখেন   যিনি আংশিক সময়ের জন্য বিজেপি আইটি সেলের ক্রিয়েটিভ রাইটার হিসেবেও কাজ করেন।’