কর্নাটকে বিজেপির পরাজয়ের কারণ কি দুর্নীতি ? ম্যাজিক স্লোগান কংগ্রেসের দুর্নীতিমুক্ত কর্ণাটক  

দিল্লি , ১৩ মে – লোকসভা ভোটের আগে বড় ধাক্কা বিজেপি শিবিরে। দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকে বিজেপিকে পরাস্ত করে বিপুল ভোটে জয়ী হল কংগ্রেস। পূর্বাভাস থাকলেও দক্ষিণ ভারতের একমাত্র বিজেপি শাসিত রাজ্য কর্নাটকে বিজেপির এই পরাজয়ের আঁচ কোন জনমত সমীক্ষাতেই সেভাবে মেলেনি। কংগ্রেসের ‘সুশাসন’ আর ‘দুর্নীতিমুক্ত’ কর্নাটকের স্লোগান যে এভাযে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে তার পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। ফলে দক্ষিণের একমাত্র রাজ্যতেও শোচনীয় পরাজয় বিজেপির। কাজে আসলো না হিন্দুত্ব বা মেরুকরণের রাজনীতি।  

হিন্দুত্ব বা মেরুকরণের রাজনীতি ছিল প্রধান হাতিয়ার।  কর্নাটকে বিজেপির এই অস্ত্র প্রয়োগের  অনুকূল পরিস্থিতিও তৈরী হয়েছে অনেকবার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বিতর্ক, ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে শহিদ টিপু সুলতানের ধর্মীয় পরিচিতি, ওবিসি মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল, কংগ্রেসের ইস্তাহারে বজরং দল নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতির মতো বিষয়কে হাতিয়ার করে মেরুকরণের চেষ্টা করেছে বিজেপি। এমনকি, ভোটের প্রচারে উঠে আসে ‘হালাল মাংস’ এবং বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি , কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো বিজেপির তারকা প্রচারকদের সেই মেরুকরণের স্রোতে গা ভাসাতে দেখা গিয়েছে। কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এ বার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা ছিল প্রবল। লাগামছাড়া দুর্নীতি, সরকারি কাজে কমিশন নেওয়া-সহ বহু অভিযোগ ওই বিরোধিতায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। ওই সব অভিযোগের কোনও জবাব ছিল না মোদী-শাহদের কাছে। তাই ভোট প্রচারে তার ধারকাছ দিয়েও তেমন হাঁটেননি বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে গেরুয়া শিবিরের ভরসা ছিল হিন্দুত্ব, মেরুকরণ।
‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান, ‘কেরালা স্টোরি’, ‘ কংগ্রেস ভারত থেকে কর্নাটককে বিচ্ছিন্ন করতে চায়’, তাঁকে ‘৯১ বার কংগ্রেস অপমান করেছে’,  অস্ত্র হিসেবে এমন নানা বাক্যবাণ ব্যবহার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।  বিতর্কিত ছবি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সমর্থনেও মুখ খুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আসলে সন্ত্রাসবাদকে মদত দিতে চাইছে। সেই কারণে এই ছবিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। তারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে।’’ আবার ভোটের আগে কর্নাটকে ওবিসি মুসলিমদের ৪ শতাংশ কোটা বাতিল করে রাজ্যের দুই প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার যে পদক্ষেপও নিয়েছে কর্নাটকের বিজেপি সরকার।  
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির তারকা নেতারা সেই মেরুকরণের অস্ত্রে ধার দিয়ে গেছেন। কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে এ বার প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা ছিল প্রবল। দুর্নীতি, সরকারি কাজে কমিশন নেওয়া-সহ বহু অভিযোগ ওই বিরোধিতাকে আরও শক্তিশালী করেছে । যদিও এই সমস্ত অভিযোগের কোনও উত্তর মেলেনি পদ্মশিবিরের কাছ থেকে । ভোট প্রচারে গিয়েও নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি প্রমান করার পথেই হাঁটেননি বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে গেরুয়া শিবিরের ভরসা ছিল হিন্দুত্ব, মেরুকরণ, যার পরাজয় ঘটল ‘ভালোবাসা’-র কাছে।