২ দিন পরও টানেলে আটকে ৪০ জন শ্রমিক, স্টিলের পাইপ বসিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা

উত্তরকাশী, ১৪ নভেম্বর –  উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে টানেলের ভিতরে আটকে থাকা ৪০ জন শ্রমিককে ২ দিন পরও উদ্ধার করা সম্ভব হল না৷ সরকারি সূত্রে খবর, ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে ধ্বংসস্ত্তপ খুঁড়ে তার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করানো হবে বিশাল আকারের স্টিলের পাইপ, যার ব্যাস ৯০০ মিলিমিটার৷ ওই পাইপের সধ্যে দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের বাইরে বের করে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল৷

উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে, সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার চওড়া জায়গা জুড়ে ধস নেমেছিল৷ বড় বড় পাথর, বোল্ডার ভেঙে পডে় পুরো অংশটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে৷ পাথরের অন্য প্রান্তে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা৷ বর্তমানে টানেলের ভিতরে ধসে পড়া ওই পাথর কাটার চেষ্টা চলছে৷ শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পানীয় জল পাঠানো হচ্ছে৷ সোমবার পর্যন্ত স্টেট ডিজাসটার রেসপন্স ফোর্স -এর তরফে জানানো হয়েছিল, আটকে পড়া শ্রমিকদের কোনও সাড়া-শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তবে শেষ পর্যন্ত ওয়াকি-টকির মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সফল হন উদ্ধারকারীরা৷ সুড়ঙ্গের ভিতরে উদ্ধারকারী দলের থেকে প্রায় ৪০ মিটার দূরত্বে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা৷ এরমধ্যে পাথর কেটে ২১ মিটার রাস্তা চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে৷ এখনও ১৯ মিটার পাথর কাটার কাজ চলছে৷ আর সেটুকু দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে পারলেই শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে৷
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে হরিদ্বার থেকে ট্রাকে করে মোট ৮টি পাইপ নিয়ে আসা হয়৷ আরও পাইপ সেখানে নিয়ে আসা হবে৷ তবে ধ্বংসস্তূপ কেটে সেগুলিকে সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করাতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা স্পষ্ট জানা যায়নি৷ উদ্ধারকাজ শুরুর প্রথমে ৩০ মিটার চওড়া পাথর কেটে বেশ কিছুটা ভিতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন উদ্ধারকারী দল৷ কিন্ত্ত সুড়ঙ্গের উপর থেকে মাটি ধসে পড়তেই ফের কিছুটা রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়৷ আলগা মাটি ধসে যাতে ফের বিপত্তি না হয়, সেই কারণে ‘শটক্রেটিং’ নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কংক্রিট স্প্রে করা হচ্ছে৷ এর ফলে মাটি ধসে পড়ার সম্ভাবনা কম৷
ইতিমধ্যে শ্রমিকদের হাঁটাচলা ও নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সুড়ঙ্গের ভিতরে ৪০০ মিটার বাফার জোন তৈরি করা হয়েছে৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে গর্ত করে সেখানে হাইড্রোলিক জ্যাক ব্যবহার করে ৯০০ মিলিমিটারের পাইপ ঢোকানো হবে৷ এরপরে অ্যাগুয়ার মেশিন ব্যবহার করে আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্ধারকারীদের৷
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে আটকে পড়া নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার ৩ জন৷ তাঁদের নাম-ঠিকানা সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী৷ জয়দেব প্রামাণিক, মণির তালুকদার ও সৌভিক পাখিরা৷ এর মধ্যে জয়দেব হুগলির বাসিন্দা, মনির তালুকদারের বাডি় কোচবিহারে৷ এঁদের পরিবারে খবর দেওয়ার পাশাপাশি আশ্বস্ত করা হয়েছে যে সকলেই নিরাপদ রয়েছেন৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে বাইরে বের করে আনা সময়ের অপেক্ষামাত্র৷
এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারকাজ নিয়ে কথা বলেছেন৷ তবে নিরাপদে তাঁরা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তা কাটছে না৷
মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সুড়ঙ্গের নির্মাণকারী সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়েল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকটার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের এক পদস্থ আধিকারিক৷ আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার প্রক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি, উদ্ধারের নতুন ব্লু প্রিন্টও তুলে ধরা হয়েছে৷
উত্তরাখণ্ড প্রশাসন জানিয়েছে, সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে খাবার, জল ও অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে৷ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে তাঁদের বের করে আনার মরিয়া চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিক৷

এদিকে প্রশ্ন উঠছে টানেল নির্মাণের সময় একটি পাস ব্লক থাকে, যা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শ্রমিকদের উদ্ধার করা যায়৷ অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণকারী সংস্থাগুলি এই পাস ব্লক না রেখেই কাজ চালায়৷ উত্তরকাশীর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে৷