কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা পিছিয়ে দিল কংগ্রেস 

বেঙ্গালুরু, ১৭ মে –  বুধবার কর্ণাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হচ্ছে না।  ফলে  বৃহস্পতিবার কর্নাটকের নয়া মুখ্যমন্ত্রীর শপথ কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।  এআইসিসি সূত্রে খবর , বুধবার সকালে রাহুল গান্ধির  সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক হয়। কিন্তু সেই সময় মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে ‘অনমনীয়;  মনোভাব দেখিয়েছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিত্ব ছাড়াও শিবকুমারকে পছন্দের দফতর-সহ উপমুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেন । সেই সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের জন্য ৬টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপদ দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু  এত কিছু করার পরেও অনড় শিবকুমার । যদিও কংগ্রেসের তরফে এমন ‘প্রস্তাবের’ কথা অস্বীকার করা হয়।

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই বেঙ্গালুরুতে ‘উৎসব’ শুরু হয়ে যায়। সিদ্ধারামাইয়া  শিবির ধরেই নেয় মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন তিনিই । তাঁর গোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, কর্নাটকের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁকেই বেছেছে  কংগ্রেস হাইকমান্ড। যদিও কর্নাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা জানান , বুধবার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা নির্বাচন করা হবে।”  

সূত্রের খবর , কর্নাটক বিধানসভা ভোটে দলের বিপুল জয়ের জন্য শিবকুমারের বিরাট অবদান থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।  সেই কারণে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্ত শুরু করলে  শিবকুমারের বিপক্ষে যেতে পারে। আর এখানেই এগিয়ে রয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সিদ্ধারামাইয়া । 

এর মধ্যে আবার বুধবারেই শিবকুমারের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে  সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন চায়  সিবিআই। গত সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুর গ্রামীণ জেলার কনকপুরা, ডোড্ডা আলাহল্লি এবং কোডিহল্লিতে কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শিবকুমারের মালিকানাধীন বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল তারা।  এরই মাঝে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে।


২০১৭ সালের অগস্টে কর্নাটকের তৎকালীন মন্ত্রী শিবকুমারের বিরুদ্ধে ৭০টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছিল আয়কর দফতর। এর পর আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে ২০১৮ সালে মামলা দায়ের করে ইডি। ২০২০ সালের অক্টোবরে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্তে নেমেছিল সিবিআই। কিন্তু কর্নাটক হাই কোর্ট শিবকুমারের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে এই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু হাই কোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দীর্ঘ দিন ধরে তদন্ত বন্ধ রাখা যায় না।

গত বছর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-র সময় রাহুল গান্ধির পাশেই  ছিলেন কর্নাটকের এই দুই প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা। মিছিলে হাতে হাত রেখে হেঁটেও ছিলেন তাঁরা। রাহুলের উদ্যোগেই বিভেদ ভুলে কাছাকাছি এসেছিলেন দুই নেতা। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রাহুল কোন সমাধান করতে পারবেন কিনা সেদিকে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।