সম্প্রতি এশিয়াটিক সোসাইটির ‘বিদ্যাসাগর’ হলে বিখ্যাত ২৪১ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এশিয়াটিক সোসাইটির সাথে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর করলো ইনস্টিটিউট অফ লিডারশিপ, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সংক্ষেপে আইলিড। যার স্বাক্ষী হিসেবে থাকল কয়েক শত মানুষ এবং যা আগামীদিনে শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক মাইলস্টোন হিসেবে খ্যাত হবে। ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলা তথা ভারত তথা বিশ্বের একটি অগ্রণী গবেষণা কেন্দ্র। স্যার উইলিয়াম জোনস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যেই ছিল এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অবস্থিত প্রকৃতি ও মানুষ দ্বারা সৃষ্ট যেকোন বিষয় সম্বন্ধে অনুসন্ধান, অধ্যয়ন ও তার সংরক্ষণ করা।
১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ফোর্ট উইলিয়ামে এটি প্রতিষ্ঠা হলেও ১৮০৮ সালে বর্তমানের পার্ক স্ট্রিটে একটি বাড়িতে এটি স্থানান্তরিত হয়ে আসে। পরে ১৯৬৫ পরে এর পাশেই আর একটি নতুন ভবন তৈরি হয়। বিভিন্ন ঘাত-পতিঘাত টপকে বর্তমানে এটি একটি প্রত্নতত্ত্ব, বিরল বই বা ম্যাগাজিন, ভাষাতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত। সেকারণে দেশ-বিদেশ থেকে গবেষকরা এখানে আসেন গবেষণার স্বার্থে। আর আইলিড বর্তমানের এমন একটি সংস্থা যারা এই জগতে আধুনিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি মিডিয়া, ম্যানেজমেন্ট এবং প্রযুক্তিগত উচ্চপর্যায়ের অগ্রগন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইলিড- এর লক্ষ্য বর্তমানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বা প্রয়োগ করে শিক্ষা জগতের সঙ্গে শিল্প জগতের মেলবন্ধন করা।
সেই এতিহ্যবাহী এশিয়াটিক সোসাইটি তার আরও ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নের অগ্রগতির জন্য আইলিড-এর সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক স্মারক চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো। এটি ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও অধ্যয়নের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে ভারতীয় ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নথিভুক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং উদ্ভাবনী গবেষণা পদ্ধতির ব্যবহার হবে এখানে। বলা যায় এই জোট বন্ধনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের একটি নতুন যুগ শুরু হল। এই সমঝোতা স্বাক্ষরের ফলে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে :-
মেরিন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা – সুন্দরবন এবং মুর্শিদাবাদের জলের সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করা।
হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ এবং অনুবাদ – ব্রাহ্মী এবং অন্যান্য প্রাচীন লিপিতে লেখা পাণ্ডুলিপিগুলি ইংরেজিতে ডিজিটালাইজ এবং অনুবাদ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা, পাশাপাশি ম্লান পাঠ্য এবং চিত্রগুলিকে উন্নত করা।
মিউজিয়োলজি এবং আর্কাইভ সংরক্ষণ – ঐতিহাসিক নথি এবং বস্তু সংরক্ষণের জন্য এআই ব্যবহার করে সংরক্ষণ পদ্ধতি গুলি কে উন্নত করা।
ডকুমেন্টারি এবং ওয়েব সিরিজ নির্মাণ – ভারতীয় ইতিহাস, এশিয়াটিক সোসাইটির ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এবং ঘটনার উপর চিত্রনাট্য ভিত্তিক বিষয়বস্তু তৈরি করা।
টেক্সটাইল ডকুমেন্টেশন – ভারতের বস্ত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক বইপত্র তৈরি করা।
এই যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এশিয়াটিক সোসাইটি তার ব্যাপক আর্কাইভ সংগ্রহ এবং ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলোর অ্যাক্সেস প্রদান করবে, পাশাপাশি গবেষণা প্রচেষ্টাকে পথনির্দেশ করার জন্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিশেষজ্ঞতা সরবরাহ করবে। আইলিড, যার এআই-ভিত্তিক উদ্ভাবন এবং মিডিয়া প্রোডাকশনে দক্ষতা রয়েছে, পাণ্ডুলিপি পুনর্স্থাপনের জন্য উন্নত ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করবে, পাশাপাশি আকর্ষণীয় ডকুমেন্টারির বিষয়বস্তু তৈরি করতে নেতৃত্ব দেবে যা ইতিহাসকে আরও সাধারণ মানুষ ও গবেষকদের কাছে পৌঁছে দেবে।
এই সহযোগিতায় এআই-এর ব্যবহার, ঐতিহাসিক গবেষণা এবং সংরক্ষণে, পাশাপাশি মিউজিয়োলজি এবং বস্তু সংরক্ষণে বিশেষায়িত কর্মশালা, সেমিনার এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ভবিষ্যতকে শক্তিশালী করা।
যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে, এশিয়াটিক সোসাইটি এবং আইলিড গবেষণা এবং প্রোডাকশন প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহের সুযোগগুলি অন্বেষণ করবে, যাতে তাদের উদ্যোগের স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়। উভয় প্রতিষ্ঠান তাদের অনুসন্ধানগুলি পণ্ডিত, ছাত্র এবং বৃহত্তর জনগণের সঙ্গে ভাগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য।
এই অংশীদারিত্ব সম্পর্কে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রশাসক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অনন্ত সিনহা বলেন, “এই সহযোগিতা ভারতের ঐতিহাসিক রত্নসমূহ অধ্যয়ন এবং সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে একটি রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ঐতিহ্যবাহী পাণ্ডিত্য এবং এআই-ভিত্তিক উদ্ভাবন কে একত্রিত করে, আমরা গবেষণা এবং গল্প বলার নতুন মাত্রা উন্মুক্ত করতে পারব।”
আইলিড সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ চোপড়া বলেন, “আমরা ঐতিহাসিক সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আনতে পেরে উত্তেজিত। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র অমূল্য রেকর্ডগুলি সংরক্ষণ করবে না বরং নতুন প্রজন্মকে ইমার্সিভ ডকুমেন্টারি এবং ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে ভারতের ইতিহাসে যুক্ত করবে।”
এশিয়াটিক সোসাইটি এবং আইলিড-এর মধ্যে এই ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে যে কীভাবে একাডেমিয়া এবং প্রযুক্তি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বর্ধন এবং প্রচারে একত্রিত হতে পারে।