উচ্চশিক্ষায় বিপুল পরিবর্তন, কেন্দ্রবিন্দুতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রতীকী চিত্র

উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এখন আসছে এক বড় পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যে প্রযুক্তিকে একসময় সাধারণ একটি ডিজিটাল সাহায্যকারী মনে করা হত, আজ সেটাই হয়ে উঠছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শক্তিশালী সহকারী। ব্যক্তিভিত্তিক পাঠদান থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের কর্মজগতের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা— ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে শ্রেণিকক্ষের চেহারা ও শিক্ষা থেকে কর্মজীবনে পৌঁছনোর পথরেখা।

বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রচলিত এক ছাঁচে তৈরি শিক্ষাপদ্ধতি থেকে সরে এসে এমন স্মার্ট ও নমনীয় ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে যে, প্রত্যেকে কীভাবে কতটা শিখছে, তা বুঝে পাঠদান করা হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কলেজগুলি জানতে পারছে, কোন শিক্ষার্থী কোথায় পিছিয়ে পড়ছে, শেখার ধরন কেমন— সেই অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে আলাদা সহায়তা পরিকল্পনা। পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রযুক্তি আগেভাগেই শিক্ষকদের ভবিষ্যদ্বাণীর মতো সতর্ক করতে পারে— কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়তে পারে। ফলে সমস্যা গভীর হওয়ার আগেই তাকে উপযুক্ত সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই ডিজিটাল সহচররা শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট ব্যাখ্যা, অনুশীলনী প্রশ্ন দিয়ে শেখায় সাহায্য করছে। অন্যদিকে, শিক্ষকদেরও কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে এই প্রযুক্তি। কারণ উপস্থিতি, মূল্যায়নসহ নানান কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাওয়ায় তাঁদের হাতে আরও বেশি সময় থাকছে আলোচনা, মেন্টরিং ও দক্ষতা উন্নয়ন করার জন্য।

শ্রেণিকক্ষের রূপটাও পাল্টে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল ল্যাব, সৃজনশীল সহায়ক প্রযুক্তি, কল্পিত পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা এখন হাতে-কলমে ধারণা খতিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। নতুন ধারণা পরীক্ষা করে দেখা এবং বইয়ের বাইরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, যে কারণেই হোক না কেন শিল্পক্ষেত্র দ্রুত বদলাচ্ছে— স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব নীতি বা ডিজিটাল বিপ্লব। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকেও তাল মেলাতে হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই যোগসূত্রকে আরও দৃঢ় করছে।

একটি উদাহরণ দেখা যায় এক্সএলআরআই-তে। প্রতিষ্ঠানটি শিল্পক্ষেত্রের চাহিদা ও একাডেমিক কোর্সের সমন্বয় আরও মজবুত করছে। শিল্পসংস্থার বিশেষজ্ঞরা পাঠ্যসূচি তৈরিতে নিজেদের মতামত দিচ্ছেন, বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদাররা পড়াচ্ছেন, নিয়মিত কোর্স আপডেট করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনশীল দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হন।

এই ভাবনাকে তুলে ধরে এক্সএলআরআই–এর অধ্যাপক (একাডেমিক) ড. সঞ্জয় পাত্র বলেন, ‘দায়িত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। সেই পথেই শিল্প ও শিক্ষার বন্ধন আরও জোরদার করছি আমরা।’

মূলত যে কথা স্পষ্ট, তা হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষককে সরিয়ে দিতে নয়, বরং শিক্ষার মান উন্নত করতে এসেছে। শিক্ষা আরও মননশীল, আরও প্রাসঙ্গিক ও ভবিষ্যত-প্রস্তুত হওয়ার পথে এই প্রযুক্তি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠছে।