তখতে ফের ইয়েদুরাপ্পা

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা (বাঁদিকে) (File Photo: Twitter | @CMofKarnataka)

বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা গত ২৬ জুলাই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ায় পঞ্চদশ রাজ্য বিধানসভায় তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হলেন এই নিয়ে চারবার। কিন্তু কোনওবারই তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে বেশিদিন স্থায়ী হননি।

তাঁর প্রথমবারের মুখ্যমন্ত্রী পদের মেয়াদ ছিল এক সপ্তাহ। দ্বিতীয় দফায় তাঁর মুখ্যমন্ত্রী পদের মেয়াদ কমে যায় আদালতে দুর্নীতির অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কিছুদিন জেলে কাটানােয়।


নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কর্ণাটকের জনগণ ২০১৮-এর বিধানসভা নির্বাচনে স্বীকৃত কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সুষ্পষ্ট রায় দেননি। তবু বিজেপি-নিযুক্ত কর্ণাটকের রাজ্যপাল বাজুভাই বালা সরকার গড়ার জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে আমন্ত্রণ জানান।

ইয়েদুরাপ্পা তৃতীয়বার সরকার গড়লে তাঁর মেয়াদ মাত্র তিনদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু তাঁর লােভ দেখিয়ে বিধায়ক ভাঙিয়ে আনার ক্ষমতার কোনও তুলনা নেই। তাঁর এই প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়ে দল শাসক জনতা দল (সেকুলার), কংগ্রেস জোট থেকে যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়ক শিকার করার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়। যার ফলে এইচ ডি কুমারস্বামী সরকারের পতন ঘটে।

ইয়েদুরাপ্পা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন যার জেরে কুমারস্বামী সরকারের পতন ঘটে। তাঁর এই অভূতপূর্ব মেধার কারণে বিজেপি’তে ৭৫ বছরের বেশি বয়সের কেউ কোনও পদ অলঙ্কৃত করতে পারবেন না বলে যে নীতি রয়েছে ইয়েদুরাপ্পার ক্ষেত্রে তার পরিবর্তন ঘটিয়ে দলীয় হাইকম্যান্ড তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়ােগ করেছে।

এই ইয়েদুরাপ্পা কিছুদিনের জন্য বিজেপি ত্যাগ করেছিলেন, যার জেরে পরবর্তী নির্বাচনে দল ধরাশায়ী হয়। বেগতিক বুঝে বিজেপি তাঁকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানিয়ে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

বেঙ্গালুরু চিত্রটা ছিল খুবই দুঃখজনক শিকার করা বিধায়কদের মুম্বইর একটি বিলাসবহুল ফাইভ-স্টার হােটেলে আটকে রাখা হয়। অথচ এদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করেই ইয়েদুরাপ্পা চতুর্থবার সরকার গঠনের জন্য তাঁর দাবি পেশ করেন।

শুক্রবার রাজভবনে ইয়েদুরাপ্পার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁদের যােগ দিতে দেওয়া হয়নি, পাছে তাঁরা তাঁদের পুরনাে দলে ফিরে যান এই ভয়ে। দলত্যাগী বিধায়কদের যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইয়েদুরাপ্পাকে যদি তা পূরণ করতে হয় তাহলে অনুগত বিজেপি বিধায়কদের ভাগে আর কি থাকবে?

কংগ্রেস জনতা দল (সেকুলার)-এর কয়েকজন বিধায়ক যারা ইয়েদুরাপ্পার জাল কেটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরাও এখন আবার ইয়েদুরাপ্পার দরজায় কড়া নাড়ছেন। ফলে দলত্যাগীদের ভিড় সামলানােও ইয়েদুরাপ্পার পক্ষে একটা কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে।

কুমারস্বামী নিজেও বিজেপি’র সঙ্গে সামিল হওয়ার ভাবনাচিন্তা করছেন বলে খবর যা কংগ্রেসকে অসহায় করে দিয়েছে। ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়তে দেওয়া ছাড়া বিজেপির জাতীয় নেতৃত্বের কোনও পথ ছিল না এটা যেমন ঠিক, তেমনি যিনি একবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁকে আবার সুযােগ দেওয়া রাজ্যপাল বাজুভাই বালার দিক থেকেও অস্বাভাবিক ব্যাপার।

ইয়েদুরাপ্পার সমর্থকের তালিকায় থাকা তিন বিদ্রোহী বিধায়কের সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছে বিধানসভার স্পিকার। বাকি ১২ বিদ্রোহী বিধায়কের ভাগ্যও সুতাের ওপর ঝুলছে। এই অবস্থায় বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনই কেবল কর্ণাটকে রাজনৈতিক স্থিরতা আনতে পারে।