ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান অত্যন্ত আপত্তিকর। শান্তির বার্তা ছাড়া এখনও পর্যন্ত ভারত কোনও স্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করেনি। নিরপেক্ষ থেকে ভারতের এই মেনৈ অবস্থান সরাসরি নীতিবিরুদ্ধ এবং কাপুরুষোচিত। ইরানের সাধারণ মানুষের উপর ইজরায়েল যে হামলা চালাচ্ছে, সেটা একতরফা ও আইনবিরুদ্ধ। ভারত সরকারের উচিত এ নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করা।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের আবহে মোদী সরকার নীরব থাকলেও বিরোধী দলগুলি যে ইরানের পক্ষে তা স্পষ্ট হয়ে উটেছে। ভারতের সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, ইরানের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক যোগও রয়েছে। অতীতে একাধিকবার কাশ্মীর ইস্যুতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। এ কারণেই মোদী সরকারের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরব হওয়া।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহুকে ‘নিষ্ঠুর’ আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, ইজরায়েল যেভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে, সেটা ইরানের সার্বভৌমত্বে আঘাত। এটা বেআইনি, একতরফা এবং আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা। কংগ্রেস এই হামলার তীব্র নিন্দা করছে। ইরান ও আমেরিকার মধ্যে যখন কথাবার্তা চলছিল, তখন ইজরায়েল হামলা চালালো কেন? এই প্রশ্ন তুলেছেন সোনিয়া গান্ধী।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ডই জানিয়েছেন, ইরান কোনোরকম পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। ২০০৩ সালে সেই চেষ্টা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লা খামেইনি এই অস্ত্র তৈরির অনুমতিও দেননি। তারপরও ইরানে কেন হামলা চালালো ইজরায়েল। আর শুধু ইরান নয়, ইজরায়েল যেভাবে গাজা ভূখণ্ডে লাগাতার ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে তাও নিন্দনীয়। প্রায় ৬০ হাজার প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন ইতিমধ্যে। গোটা পরিবার, একটার পর একটা পাড়া, এমনকি হাসপাতালগুলি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে গাজা এবং ওখানকার মানুষ এখনও অবর্ণনীয় কষ্টভোগ করছেন। গাজা এবং ইরানের এই মানবিক সংকটের সময় নয়াদিল্লির নীরবতা আমাদের নৈতিক এবং কূটনৈতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী। এতে মধ্যপ্রাচ্যে ভারত যে ক্রমশ একঘরে হবে শুধু তাই নয়, এটা আমাদের নৈতিকতার সঙ্গেও আপস করা। তবে এখনও দেরি হয়ে যায়নি। মোদী সরকারের উচিত এখনই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান বদলানো। ভারতকে স্পষ্টভাবে যেমন নিজের কথা বলতে হবে, তেমনই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজও করতে হবে। পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা প্রশমণ করতে এবং আলাপ-আলোচনায় দু’পক্ষকে নিয়ে ফিরে আসতে প্রতিটি কূটনৈতিক পর্যায় ব্যবহার করতে হবে ভারতকে।
১৩ জুন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইরানে ৪৩০ জন নিহত, ৩৫০০ জন জখম। ইরানে সরকারি সংবাদ সংস্থা মারফত এ খবর মিলেছে। উল্টো দিকে ইজরায়েল শুধুমাত্র ২৪ জনের প্রাণহানির খবর জানিয়েছে। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতির ততোই অবনতি হচ্ছে। সুইৎজারল্যান্ডের জেনিভায় ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানির বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সেখানে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘আলোচনায় রাজি, কিন্তু সমঝোতায় নয়।’ তিনি বলেন, ‘ইরান কূটনৈতিক পথে হাঁটতে আগ্রহী। কিন্তু তার আগে আগ্রাসন (ইজরায়েলের) পুরোপুরি থামাতে হবে এবং হামলাকারীকে যুদ্ধাপরাধের দায় নিতে হবে।’ যদিও যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। দুই দেশই জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যেতে তারা বদ্ধপরিকর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়, ‘ইজরায়েল যুদ্ধে কিছুটা এগিয়ে। ইরান কিছুটা পিছিয়ে। কিন্তু কোনও একজনকে থামানোও কঠিন।’