কে কেমন প্রতিবেশী

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে ভারত সরকার এখন দিশাহীন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান তার জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সঙ্গে শত্রুতা বজায় রেখেছে। পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধে ভারতের কাছে হেরেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটক হত্যার প্রত্যাঘাত করতে যে ‘সিঁদুর অপারেশন’ হল, তাতেও পাকিস্তান নাস্তানাবুদ হয়েছে। তিনদিনের সংঘর্ষে বিস্তর ক্ষতি হয়েছে পাকিস্তানের। তারপরেই পাকিস্তান উঠে পড়ে লেগেছে ভারতকে কূটনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করতে। সংঘর্ষ না থামলে পাকিস্তান আরও বিপদের সম্মুখীন হতো। চিন ও উত্তর কোরিয়া এই তিনদিনের যুদ্ধে পাকিস্তানকে সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে।

নেপাল, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্ক দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যেভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে দিন দিন তা নয়া দিল্লিকে উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে। কী করে এই দেশগুলির (পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে) সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করা যায় তার জন্য ভারত কিন্তু নিয়ত চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু তারা ভারতের চেষ্টাকে আমল না দিয়ে বিরোধিতার পথেই হাঁটছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে নেমেছে তা অত্যনম্ত দুঃখজনক। পাকিস্তান ও চিন বাংলাদেশকে মদত দিচ্ছে ভারত বিরোধিতায়।

বাকি রইল শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনও সময় ভারতের বড় সংঘর্ষ বাঁধতে পারে। শ্রীলঙ্কা এখনও ভারত বিরোধিতায় নামেনি। তা যাতে না করে তার জন্য ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ দূত হিসেবে জয়শঙ্কর শ্রীলঙ্কায় গিয়ে সম্প্রতি এই দেশের উন্নয়নের জন্য ৪৫ কোটি ডলার পুনর্গঠন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। রাস্তাঘাট, রেলপথ এবং সেতুগুলির পুনর্নিমাণে এই অর্থ ব্যয় হবে। প্রয়োজনে জয়শঙ্কর আরও অর্থ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করবে বলে শ্রীলঙ্কার সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন। এই প্যাকেজ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে আরও অর্থ বরাদ্দ করবে ভারত সরকার। কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানাকের সঙ্গে দেখা করে বলেন, শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে আরও সাহায্য করবে ভারত। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী শ্রীলঙ্কার পুনর্গঠনে সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। জয়শঙ্কর আশ্বাস দেন, শ্রীলঙ্কার যে কোনও বিপদে ভারত পাশে থাকবে।


শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক না হয় স্থাপিত হল, কিন্তু নেপাল ও চিনের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। চিন ভারতের ভূখণ্ড দখল করে আছে। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধি ভারতের ভূখণ্ড দখল করার জন্য বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও, চিন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করেন।

অপরদিকে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক মধুর ছিল— যা এখন আর নেই। চিন নেপালে এসে তার আধিপত্য বিস্তার করছে এবং নেপালের উন্নয়নে ব্যাপক সাহায্য করছে। নেপালে চিনের খবরদারি আদৌ সুখের নয় ভারতের কাছে। কারণ নেপালের উন্নতির জন্য ভারত নানাভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু নেপাল তা ভুলে গিয়ে চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। নেপালে চিনের অবাধ বিচরণ ভারতের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। যদিও ভারত চিনের আধিপত্য সত্ত্বেও, নেপালকে এখনও নানাভাবে সাহায্য করছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টো দুই দেশের মধ্যে বৈরতা লেগেই রয়েছে। তাই পাকিস্তান ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ হলেও, তার সঙ্গে কোনও দিন ভারতের সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই যতদিন এই দেশখ বেঁচে থাকবে।

বাকি রইল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে ভারতের অবদান বিরাট। জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু— কিন্তু নানা অনভিপ্রেত কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন তলানিতে নেমেছে। বাংলাদেশের তদারকি সরকারের আমলে সে দেশে ভারত বিরোধিতা চরমে উঠল। তদারকি সরকারের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি হলেন শান্তির জন্য নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস, যিনি দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশের এখন বড় বন্ধু হল চিন ও পাকিস্তান। দহরমমহরম তাদের সঙ্গেই।