ক্ষমাহীন অপরাধ

প্রতীকী চিত্র

সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নেই। ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াই করেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জারি রেখে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথে যেতে হবে। ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদ ও তার মদতদাতাদের বিরুদ্ধে। গোটা বিশ্বকে এই লড়াইয়ে সামিল হতে হবে। সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের সরাসরি সমর্থনের অনেক প্রমাণ মিলেছে। পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের খুন করার পর জঙ্গিরা পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক জঙ্গি ঘাঁটিগুলির উপর ‘সুনিশ্চিত ও পরিমিত’ হামলা চালায়। ভারতের এই আক্রমণ শুধুমাত্র পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোর উপর, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে নয়, তার অজস্র প্রমাণ মিলেছে। আক্রমণে ধ্বংস হয়েছে জঙ্গি ঘাঁটি। একজন সাধারণ মানুষও মারা যাননি। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো এবং জাতীয় পরিকাঠামোর উপর কোনও হামলা করা হয়নি। সামরিক উত্তেজনা এড়ানোই ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তান নিজেও তা স্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের আকাশপথে ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ঢোকেনি।

সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করে গত ৩০ বছর ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গেছে পাকিস্তান। এই অন্যায় এবং অনৈতিক কাজ থেকে পাকিস্তানকে বিরত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়াতে হবে। পহেলগামের ঘটনা নৃশংসতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়েছে। ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং সেই যুদ্ধ চলবে। যাদের মধ্যে কোনও মনুষ্যত্ব নেই, তাদের প্রতি ভারত কোনও মায়াদয়া দেখাবে না। ৭ মে ২০২৫ তারিখে রাত সাড়ে আটটার সময় পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল এবং সেই সময় নিজেদের এয়ারস্পেস বন্ধ করেনি। যাত্রীবাহী বিমানকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার চক্রান্ত করেছিল পাকিস্তান। ৮-৯ মে রাতের অন্ধকারে পাক সেনাবাহিনী ভারতীয় সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে একাধিকবার হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক সীমান্তে ৩৬টি জায়গায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হয়। প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ড্রোনগুলির উদ্দেশ্য ছিল ভারতের গোয়েন্দা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই ড্রোনগুলি ছিল তুরস্কের দেওয়া। ভারতীয় সেনাবাহিনী এগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। একটি ইউএভি-ও সক্রিয় ছিল, সেটিকেও নিষ্ক্রিয় করা হয়।

পাঞ্জাব সেক্টরে উচ্চ পর্যায়ের এয়ার ডিফেন্স সতর্কতা থাকা অবস্থায় ভারতের আকাশসীমা নাগরিক বিমানের জন্য বন্ধ ছিল। কিন্তু পাকিস্তানে তখন যাত্রীবাহী বিমান চলাচল করছিল। একটি পাকিস্তানি বিমান সাম্মামা থেকে উড়ে লাহোরে পৌঁছয়। ভারতীয় বায়ুসেনা পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সংযম দেখায় এবং আন্তর্জাতিক অসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পাকিস্তানের ইউএভি ভাতিন্দা সেনাঘাঁটিকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা করেছিল, সেটিকে ধ্বংস করা হয়। পাকিস্তানের উসকানি, সামরিক হামলার জবাবে ভারত ‘নিয়ন্ত্রিত’ পদক্ষেপই নিয়েছে।


বিভাজনের কারবারিরা যে ভাগাভাগির বিষ ছড়িয়ে দেশের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা চাইছিল, তা পহেলগাম হামলারও একটা অন্যতম লক্ষ্য ছিল। কিন্তু আজ দেশের ঐক্যই যে সে চক্রান্ত বানচাল করতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার তা প্রমাণ করেছে ভারত। পাকিস্তান মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছিল। পাকিস্তানের দাবি, ওরা কোনও ধর্মীয় স্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। কিন্তু ওরা পুঞ্চে একটি গুরুদোয়ারার উপর হামলা করেছে। ওরা ওদের অপরাধ ঢাকতে বলছে, ভারত নানকানা সাহিব গুরুদোয়ারায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ওরা ঘটনাগুলিকে ধর্মীয় রং দিতে চাইছে, পহেলগাম হামলাতেও যা করেছিল। পুঞ্জে গুরুদোয়ারায় পাক হামলায় কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক প্রাণ হারান। পাক বলছে ভারত নিজের শহরেই হামলা চালাচ্ছে। এটি নিছকই কল্পনা। পাকিস্তানের ইতিহাস এমন মিথ্যার সঙ্গেই জড়িত।

সামরিক ঘাঁটি, অসামরিক লক্ষ্যে আঘাত হানার ব্যর্থ প্রচেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তান এখনও সীমান্ত পার থেকে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদীদের ভারতে ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে বিএসএফ জানিয়েছে, জম্মু অঞ্চলে ভারত-পাক আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে। অভিযানে অন্তত সাত জন সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করা হয়েছে এবং পাকিস্তান রেঞ্জার্সের একটি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।

সংঘাতকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ ডলার ‘ভিউয়ারশিপ রেভিনিউ’ তোলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবরের কারবার চলছে। এতে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিদেরও মদত রয়েছে। ‘সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগোরিদমে’ যুদ্ধের ‘এক্সক্লুসিভ ফুটেজ’ শেয়ার করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার ‘ভিউ’ ও ‘শেয়ার’ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘ভিউ’ বাবদ আয় বাড়ানোর লোভে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে তাই আরও বেশি করে ভুয়ো খবর ছড়ানোর কাজে নেমে পড়েছেন দুই দেশের সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা। এতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে এবং আগামী দিনে কূটনৈতিক দরাদরির ক্ষেত্রে ভারতের সমস্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে।

ভারত সংঘাত শুরু করেনি বরং আত্মরক্ষার স্বার্থে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোয় প্রত্যাঘাতী হামলা করেছে। কেন্দ্রের এই অবস্থান উড়িয়ে দিয়ে, ভারতকে জোর করে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখাতে চেয়ে বড় রকমের সমস্যার মুখে ফেলছে বিজেপির আইটি সেল, মোদীর প্রচারক মিডিয়া এবং মোদী ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল। এই ধরনের ভুয়ো সম্প্রচারে পাকিস্তানেরই সুবিধা হবে। ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনায় এইসব ভুয়ো যুদ্ধবাদী সম্প্রচারকে প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরতে পারে পাকিস্তান। দেশপ্রেমের নামে এমনই সর্বনাশ করে চলেছে মোদী ঘনিষ্ঠ মিডিয়াগুলি। এই মুহূর্তে আরও সংযত ও পরিণত হওয়ার প্রমাণ রাখতে হবে, যেমন রেখেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।