ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ার জালিয়াতি মামলার শমন পাঠায়নি মোদী সরকার। খোদ আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিযোগ এনেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) নিউইয়র্ক জেলা কোর্টকে জানিয়ে দিয়েছে তারা শেয়ার জালিয়াতি মামলায় আদানিকে তলব করতে সমন পাঠালেও তা ভারত সরকার আদানিকে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্লেখ্য, আমেরিকার নিউইয়র্ক কোর্টে আদানির বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতি ও ঘুষ কলেঙ্কারি মামলা চলছে গত এক বছর ধরে। আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার লোপার্টের অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে আমেরিকার কোর্টে আদানিকে বারে বারে তলব করা হয়। তাকে আদালতে হাজিরার জন্য সমন পাঠানো হয়। আমেরিকার ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে তা আদানির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। আদানিকে সমন পৌঁছে দেয়নি ভারত সরকার। এ খবর প্রকাশিত হলেও ভারত সরকার ও আদানি গোষ্ঠীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। আদানির বিরুদ্ধে মামলায় ভারত সরকারের কাছ থেকে কোনওরকম সহযোগিতা পেতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন সরকার। যদিও বিরোধী রাজনৈতিক মহলের মত হলো, আদানির যাবতীয় বেনিয়মের সুরক্ষা দিয়ে এসেছে মোদী সরকার। আর এক্ষেত্রেও যে সুরক্ষা পাবে তা স্বাভাবিক।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতিতে শেয়ার বাজারের বিপুল অর্থ লোপাটের তথ্য প্রথম ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ফাঁস করে দেয় আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেন বার্গ। বিশ্বজুড়ে এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ধস নামে শেয়ার বাজারে। এই ধসে বিপুল অর্থ লোপাট হয়ে যায়। সর্বস্বান্ত হন ছোট লগ্নিকারকরা। এনিয়ে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় বিরোধীরা। তা মানেনি মোদী সরকার। কেন্দ্রের তরফে আদানি গোষ্ঠীর যাবতীয় কেলেঙ্কারি আড়াল করা হয়েছে। এই শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলা গড়িয়েছে আমেরিকায়। সেখানে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি-র অভিযোগ হলো, আদানি গোষ্ঠীর সৌর বিদ্যুৎ সংস্থা ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ ভারত সরকারের আধিকারিকদের ঘুষ দিয়ে সরকার থেকে বেশি দামে সৌর বিদ্যুৎ কেনার বরাত বাগিয়ে নেয়। এই ঘুষ দিয়ে বরাত পাওয়ার তথ্য গোপন করে আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে আদানির গ্রিন এনার্জি বিপুল টাকা তুলেছে। আমেরিকার শেয়ার বাজারে ঘুষ দিয়ে বরাত নেওয়ার তথ্য গোপন চরম অপরাধ বলে গণ্য হয়। এনিয়ে ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর আদানির গ্রিন এনার্জির বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের হয়। তাতে সিইসি-র তরফে জানানো হয়, আদানি গোষ্ঠী ভারতে সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দিয়ে সৌর বিদ্যুতের বরাত আদায়ের তথ্য গোপন এতে চরম প্রতারণা করা হয়েছে। এনিয়ে কোর্টে হাজিরা দিতে গৌতম আদানি ও সাগর আদানিকে নোটিস পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, গ্রিন এনার্জির শেয়ার বিক্রি করে মোট ৭৫০ মিলিয়ন ডলার তোলে আদানি। তার মধ্যে আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে তারা তোলে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার।

নিউইয়র্ক জেলড়া আদালতে এই মামলার শুনানিতে ফেরে এসইসি জানায়, তারা আদানি গোষ্ঠীকে হাজিরা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের আইন মন্ত্রকের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেছে। আদানি গোষ্ঠীকে হাজিরা দিতে তলব করতে আইনি নোটিশ ও নথি আইনমন্ত্রকের সঙ্গে এই আদানি গোষ্ঠীকে আইনি নোটিস পাঠানো নিয়ে যোগাযোগ হয়েছে। কিন্তু এব্যাপারে আইনমন্ত্রক নিশ্চিত করে কোনও খবর জানাতে পারেনি। কার্যত ভারত সরকার আদানি গোষ্ঠীকে জালিয়াতির মামলার নোটিস পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। হগ সার্ভিস কনভেনশনের নিয়ম অনুসারে এনিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারতের সঙ্গে যোগোযোগের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে এসইসি।