সুদীপ্ত দে
বর্তমানে সারা ভারতবর্ষে বাঙালি পরিচয় শ্রমিকের ওপর যেভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে তাতে মূলত নিম্ন বর্গের পরিযায়ী শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ছোটখাটো হস্তশিল্পী, দিনমজুর এরাই ভুক্তভোগী। কিন্তু কর্পোরেট সেক্টরের এটা প্রভাব ফেলে নি। আদালত, সরকারি প্রশাসন, সর্বত্র ইংরেজি শিক্ষিত হিন্দুদের আধিপত্য। যখন কর্মসংস্থান ও সুযোগ থাকে আংশিক, সকলের জন্য নয়, তখন কর্মপ্রার্থী নানান ধরনের আত্মপরিচয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণের দাবি তোলে। যা হিন্দু মুসলমান সমস্যা, সেটাই ভিন্ন পটভূমিতে বাঙালি বিহারী সমস্যা হতে পারে। এটা এক সাধারণ সর্বজনীন সমস্যা।
আসামে বাঙালিদের বিরুদ্ধে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। কিন্তু অতি সম্প্রতি একটা হিরিক উঠেছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে, বলা ভালো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি থেকে, বঙ্গবাসী বাঙালি তারাও বাংলাভাষী মানেই তারা বাংলাদেশি বা বিদেশি । বাংলা একটা বিদেশি ভাষা। এমনকি অতি উৎসাহে বহু ক্ষেত্রে তাদের আটকে রেখেছে, বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য।
ডাবল ইঞ্জিন সরকার যেভাবে বাংলাদেশি খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাকে দেশের মানুষের পক্ষে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশি হাসিনা তো আপনার আশ্রয় ও প্রশ্রয় নিরাপদে এ দেশ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। তাহলে সরকার স্পষ্ট বলুন হাসিনাকে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে শুধুমাত্র বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে, এর সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এর সঙ্গে জুড়ে আছে এনআরসি। এই বিষয়গুলো সাম্প্রতিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি তারাও নীতির পটভূমিতে রাখতে হবে। ২০২৪ সালে এই রাজ্যের বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসহ বিজেপির নেতারা উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গকে একটি পৃথক রাজ্য করে অন্য রাজ্যের সাথে যুক্ত করে বাঙালিকে সংখ্যালঘু একটি জাতিতে পরিণত করার প্রস্তাব পেশ করেন। ২০২১ সালে বঙ্গ বিজয় প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছিল ডাবল ইঞ্জিন সরকার সেই সঙ্গে এমন দাবি তুলেছিল ওই সময় ডবল ইঞ্জিন পরিচালিত রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে চলে এসেছে কিন্তু পরবর্তী সময় দেখা গেল সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কৃষক শ্রমিক আরো অন্যান্য সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠ গঠন করে পশ্চিমবাংলায় রাজ্য সরকার গঠন করে। তখন থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত এই ডবল ইঞ্জিন সরকারের এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও রাজ্যের বিজেপি পার্টি তারা বিভিন্ন সময় বাঙালি জাতিকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আগামী ২০২৬ এ বিধানসভা নির্বাচন তাই এই বিষয়টি আরো জোরদার করে প্রচার করা হচ্ছে যাতে সমগ্র বাঙালি জাতি সম্ভ্রান্তিত ভিত হয়ে থাকে।২০২৬ সালে এ পশ্চিমবঙ্গে ডবল ইঞ্জিন সরকার যাতে গঠন করা যায় সেই দিবা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
এই বাঙালী বিদ্বেষ এর তীব্র প্রকাশ দেখা যাচ্ছে উড়িষ্যায়, অথচ বাংলা বিহার উড়িষ্যা এই তিন রাজ্য নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিলেন আমাদের দেশের মনীষীরা। একজন পরিযায়ী শ্রমিক তিনি যে বাংলায় বসবাস করেন সেই প্রমাণ জন্য আধার কার্ড ভোটার কার্ড সহ আরো নানান তথ্যাদি দেখিও কোন লাভ হয়নি কোন কিছুই রাজ্য করা হচ্ছে না শুধু বাংলা বলছে বলে তাকেই বাংলাদেশী তকমা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙ্গালীদের ওপর নির্মম ও অমানবিক অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশ পাচ্ছে। সেই কাহিনী নতুন করে উপস্থাপন করব না যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর নির্মম অত্যাচার কাহিনী প্রকাশ হচ্ছে সংবাদপত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়ার এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায়, তাতে বোঝা যায় যে শুধুমাত্র বাঙালি হওয়ার কারণে এই রকমের নির্যাতন তাদের ওপর আসছে। এটা ডবল ইঞ্জিন সরকারের কাছে খুব সাধারণ ব্যাপার ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের সাংসদরা বারংবার একটাই প্রশ্ন চলে। মাতৃভাষায় কথা বলাটা কি বাংলার শ্রমিকদের অপরাধ। পরিযায়ী শ্রমিক ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের বাইরে বড় বড় কোম্পানিতে বড় বড় পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাঙলিরা, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ধরনের অত্যাচার লাঞ্ছনা গঞ্জনা হচ্ছে না শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকের উপর এই ধরনের অত্যাচার চলছে। অথচ অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা পশ্চিমবাংলায় যে সমস্ত অন্য ভাষাভাষীর পরিযায়ী শ্রমিকরা আছেন তারা কিন্তু বর্তমানে সংরক্ষিত এবং সুরক্ষিত আছেন। তাই আগামী দিন পশ্চিমবাংলার সমস্ত মানুষকে ভাবতে হবে বুঝতে হবে এই ডবল ইঞ্জিন সরকার যদি ২০২৬-এ পশ্চিমবাংলায় নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে পশ্চিমবাংলায় কি ভয়ানক অবস্থা হতে পারে তার আগাম বার্তা ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।