ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মিথ্যাচার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নরেন্দ্র মোদী সরকারের বহুল প্রচারিত ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পটি বাগাড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই নয়। ১ জুলাই পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্প আপামর দেশবাসীকে একেবারে ছুঁতে পারেনি। উচ্চাভিলাষী এই কর্মসূচি ডিজিটাল ক্ষমতায়নের থেকে বেশি শুধু ব্যর্থ নয়, এর মধ্যে জালিয়াতিও চলেছে দেদার। ডিজিটাল ইন্ডিয়া একটি ফাঁপা স্লোগান মাত্র।

মোদী সরকার উচ্চস্বরে দাবি করলেও প্রতিশ্রুতি অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। দেশের বহু মানুষ এখনও ডিজিটাল প্রকল্পের বাইরে রয়ে গিয়েছে। আবার এর সঙ্গে গোটা প্রকল্পটিতে রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব।

১০ বছর আগে মোদী সরকার এই প্রকল্প ঘোষণার সময় ভারতকে ডিজিটাল দিক থেকে এক ক্ষমতাবান সমাজ এবং জ্ঞানগর্ভ অর্থনীতিতে পরিণত করা হবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ওই দাবি ‘ফাঁকা আওয়াজ’ ছাড়া আর কিছু নয়। প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে যে অজস্র ফারাক রয়েছে তার প্রমাণ মেলে সরকারি তথ্যেই। ঘোষণা অনুসারে ‘ভারত নেট’ প্রকল্পের অধীনে ৬.৫৫ লক্ষ গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪.৫৩ লক্ষ গ্রামে অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ গ্রামে ব্রডব্যান্ড সংযোগ এখনও পর্যন্ত করতে পেরেছে মোদী সরকার। অবশ্য এই ১০ বছরে আট বার সময়সীমা সংশোধনও করা হয়েছে। দেশের মাত্র ৭৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ০.৭৩ শতাংশ সক্রিয় ওয়াই-ফাই পরিষেবা রয়েছে। যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলি ৫-জি পরিষেবা দিচ্ছে তখন বিএসএনএল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১ লক্ষ ৪-জি টাওয়ারই বসাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত এক-তৃতীয়ংশ টাওয়ার বসানোর কাজ বাকি রয়েছে।


ডিজিটাল জগতে সরকারি পরিষেবা বেসরকারি পরিষেবার থেকে পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-এর ঋণের হার যথাক্রমে ২৯১.৭ শতাংশ এবং ১৩৬.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাও পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়নি ওই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তবে শুধু পরিকাঠামো গড়ে তোলার ব্যর্থতাই নয়, মোদী সরকার দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষকে ডিজিটাল দিক থেকেও বাদ রেখেছে।

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তথ্যে জানা গিয়েছে, ১৫ বছরের বেশি বয়সি ৭৫.৩ শতাংশ ভারতীয় এখনও কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানেন না, যার মধ্যে ৮১.৯ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করেন। দেশে ৫৪ শতাংশ সরকারি স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ নেই, ৭৯ শতাংশ স্কুলে ডেস্কটপ কম্পিউটার নেই, ৮৫ শতাংশ স্কুলে প্রজেক্টর নেই এবং ৭৯ শতাংশ স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম নেই। উল্টে এই তথাকথিত ডিজিটাল ইন্ডিয়া গোপনীয়তাকে আঘাত করার পাশাপাশি স্বচ্ছতাকেও ক্ষুণ্ণ করেছে।

পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার পর থেকে দেশে ১০ কোটিরও বেশি সাইবার আক্রমণ দেখা গিয়েছে। সিআইআরটি—আইএন তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনা ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য অধিকার আইনকে দুর্বল করে এর বদলে একটি ত্রুটিপূর্ণ তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের শুরু করা উদ্যোগগুলির কৃতিত্ব নিজেদের দিকে টানতে ওস্তাদ বিজেপি ও মোদী সরকার।

মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ইউপিএ সরকারই আধার, ইউপিআই এবং সরাসরি সুবিধা স্থানান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। মোদী সরকারের উচিত, ডিজিটাল ভারতের ১০ বছরের কৃতিত্ব দাবি করার পরিবর্তে নিজের সরকারের একাধিক ব্যর্থতা ও জালিয়াতির কথা। জালিয়াতি ও মিথ্যা দাবিতে পরিপূর্ণ মোদীর ডিজিটাল ইন্ডিয়া।