হিমন্তবিশ্বের চক্রান্ত

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অসমে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এই অভিযোগ করেছেন ওই রাজ্যের বিরোধী দলের ঐক্যমঞ্চের নেতৃবৃন্দ। গুয়াহাটিতে সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলগুলি নিয়ে গঠিত অসম সম্মিলিত মোর্চার একটি সভা হয়। সভা শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মোর্চার সভাপতি তথা সাংসদ অজিতকুমার ভুঁইয়া বলেন, নির্বাচনে বিজেপির রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে হিমন্তবিশ্ব শর্মা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র করছেন। লাগাতার সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে চলেছেন। উচ্ছেদকে হাতিয়ার করে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালাচ্ছেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যকে দেউলিয়া করে দিয়েছে হিমন্তবিশ্ব শর্মা সরকার। ঋণ নিয়ে সরকার চলছে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী সহ তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে বিজেপি সরকার। সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি ঢাকতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী শর্মা। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পরাস্ত করতে রাজ্যজুড়ে বিরোধীরা আন্দোলনে নামছে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ওইদিন গুয়াহাটিতে সমাবেশ হবে। পরবর্তীতে জেলায় জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।

গরিব মানুষদের উচ্ছেদ করে হাজার হাজার বিঘা জমি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে হিমন্তবিশ্ব শর্মার সরকার। গোলাঘাট জেলায় উচ্ছেদ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গোয়ালপাড়া জেলায় উচ্ছেদ নিয়ে সরকারের কাছে জবাব চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু আদানিদের স্বাথরক্ষা করতে গিয়ে কোনও আইনকানুন মানছে না হিমন্তবিশ্বের সরকার। রাজ্যে ৮ হাজার ৬১৩টি সরকারি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারের সংখ্যা ৩১ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। স্মার্ট মিটার বসাতে আদানিকে ৮৪০ কোটি টাকার বরাত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব। এ নিয়ে মানুষ যাতে কথা না বলতে পারে, তার জন্য চলছে দমন-পীড়ন। এদিকে বিহারের মতো অসমেও এসআইআর করে বহু মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।


এনআরসি’র তালিকা থেকে ১৯ লক্ষাধিক মানুষের নাম বাদ দিয়েএেছ। এই পরিস্থিতিতে এসআইআর হলে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হলেও আজ পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ পড়াদের হাতে রিজেকশন স্লিপ না দেওয়ায় তাঁরা আইনি প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন না। আগে বাদ পড়াদের রিজেকশন স্লিপ দিয়ে তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ দিতে এনআরসি সম্পূর্ণ করতে হবে। এর আগে এসআইআর বন্ধ রাখতে হবে। বিরোধী দলগুলি জানিয়েছে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন ওই রাজ্যে নাকি ১০৩ শতাংশ মানুষের আধার কার্ড হয়ে গিয়েছে। অথচ, আধার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্যে গত ৩১ জুলাই থেকে ৯৫ শতাংশ লোকের আধার হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সের ১০-১২ লক্ষ মানুষের এখনও আধার হয়নি।

এনআরসি এখন আতঙ্ক হয়ে মানুষের মনে ঢুকে গিয়েছে। পড়শি রাজ্য অসমের স্মৃতি মানুষের মনে এখনও উজ্জ্বল। সেখানে এনআরসি-র নোটিশ প্রাপ্তির তালিকা বাড়ছে। যাঁর নোটিশ পাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই অসমের পাকাপাকি বাসিন্দা নন। অনেকেই বাংলার। আর বাকিরা দীর্ঘদিন অসমে থাকলেও, রেশন কার্ড ও ভোটার কার্ড থাকলেও, আধার দেখিয়ে পরিচয় পত্র দেখালেও শুধুমাত্র ‘মুসলিম’ হওয়ার কারণে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত। বাংলায় কথা বলার জন্য এঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। পুশব্যাক? তারপর কী? বাংলাদ্শের জেলে শেষ জীবন কাটানো। অসমের এনআরসি কাণ্ড ছ’বছর পূর্ণ করেছে কয়েকদিন হলো। তাই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে আশঙ্কার সুর। এসআইআর হলো এনআরসি-র প্রথম ধাপ।