অমানবিক

ফাইল চিত্র

মাওবাদীরা বার বার আলোচনায় বসতে চাইলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র এবং চত্তিশগড় সরকার কথা বলে সমস্যা সমস্যা মেটানোর পথ নিচ্ছে না। বদলে তারা হত্যা এবং নিকেশ করে দেওয়ার অমানবিক নীতি নিয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাগাতার ডেডলাইন দিয়ে চলেছেন। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কথা বলার কোনও প্রয়োজনই নেই। এই ধরনের বক্তব্য স্পষ্টতই ফ্যাসিস্ত মনোভাবের পরিচয়, যারা মানুষের প্রাণ কেড়ে উল্লাস করে। এই ধরনের আচারণ গণতন্ত্র বিরোধী। একাধিক রাজনৈতিক দল এবং সচেতন নাগরিকরা সরকারের কাছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আরজি জানিয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দলই মাওবাদী রাজনীতির বিরোধী। তবুও তাদের আরজি আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে আধাসেনা অভিযান বন্ধ করা হোক। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশবরাও ওরফে বাস্তবরাজ সহ ২৭ জনের মৃত্যুর কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো।

‘অপারেশন কাগার’ নিয়ে মাওবাদীদের নিশ্চিহ্ন করতে কেন্দ্রীয় সরকার যে অভিযান চালাচ্ছে, তা নিরীহ আদিবাসীদের মনে ভয় তৈরি করছে। অস্ত্র ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান হবে না। নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের গুলির লড়াইয়ে একজনও নিরীহ আদিবাসীর যেন প্রাণ হারাতে না হয়। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও বলেছে, ঠাণ্ডা মাথায় বিচার বর্হিভূতভাবে কেশবরাও সহ একাধিক মাওবাদী এবং আদিবাসীদের হত্যা করা হয়েছে নারায়ণপুর—বিজাপুরে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, অপারেশন কাগার বিচার বহির্ভূত নিকেশ অভিযান। কর্পোরেট লুট এবং মাওবাদ দমনের নামে সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধ করতে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে তার কৃতিত্ব দাবি করছে কেন্দ্র। মাওবাদীরা একতরফা সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করেছে। এখন সেনা অভিযান বন্ধ করে এই গণহত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা দরকার।

তথাকথিত এই এনকাউন্টারে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই আরও ২৬ জন মারা গিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই ঘটনা শুধু পুলিশ প্রশাসনের অভিযান নয়, আইন লঙ্ঘন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর আক্রমণ এবং আমাদের সাধারণতন্ত্রের ইতিহাসের একটি নির্লজ্জ অধ্যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রক্তপাতে উল্লাস প্রকাশ করে শুধু কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন তা-ই নয়, ন্যায়বিচার এবং সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থাকেও উপহাস করছেন। নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে সিপিআইএম, সিপিআই, ফরোয়ার্ড ব্লক সহ বিরোধী দলগুলি। সরকারের কাছে গোপন খবর থাকলে আইনত তাদের গ্রেপ্তার করা সঠিক ছিল। সংবিধান স্বীকৃত এই প্রক্রিয়া নির্বিচারে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। শুধু ছত্তিশগড় নয়, গোটা দেশের মানুষের প্রকৃত সত্য জানা প্রয়োজন। গুলির লড়াইয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীরা কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, তাও স্পষ্ট করে জানাতে হবে কেন্দ্রকে। গুলির লড়াইয়ের জেরে সাধারণ গ্রামবাসী আদিবাসীদের কী ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।


গত পাঁচ বছরে গোটা দেশে মাওবাদী হিংসা ২৫ শতাংশ কমেছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি। তবে ছত্তিশগড় এখনও মাওবাদী হিংসার শীর্ষে। গোটা দেশের ৭০ শতাংশ ঘটনাই ছত্তিশগড়ে হচ্ছে। তার কারণ হলো, গত তিন-চার বছরে মাওবাদীদের শিকড় উপড়ে ফেলতে নিরাপত্তা বাহিনী লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে ছত্তিশগড়ে। তাই মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেড়েছে। মাওবাদীদের সদর দপ্তর অবুঝমাঢ় ঘিরে ফেলা হচ্ছে বুঝে তারাও মরিয়া হয়ে হিংসা ছড়াতে চাইছে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের কাছে পেতে এবার উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকার। ছত্তিশগড়ের মাটির নিচে থাকা খনিজ তুলে মোদী সরকার আদিবাসীদের মধ্যে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে চাইছে, যাতে ভবিষ্যতে মাওবাদীরা নতুন করে ছত্তিশগড়ের অবুঝমাঢ়ে প্রভাব ছড়াতে না পারে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের বিশেষ বাহিনী ঢুকে পড়লেই সেখানে উন্নয়নের কাজকর্ম শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার।