উদ্বেগের বিষয়

প্রতীকী চিত্র

ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ (র)-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে আমেরিকার ফেডারেল সরকার গঠিত কমিশন। আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন (ইএসসিআইআরএফ) তাদের বার্ষিক রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে তারা। ওই মার্কিন কমিশনের দাবি, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার চেষ্টায় ‘র’-এর হাত রয়েছে। সেই কারণেই এই সুপারিশ করেছে তারা। ওই রিপোর্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে।

আমেরিকার ওই সরকারি কমিশনের দাবি, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি ওই কমিশনের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল বিজেপি প্রসঙ্গে ও কটাক্ষ করেছে কমিশন। তাদের দাবি, গত বছরে নির্বাচনী প্রচারের সময়ে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ প্রচার করেছেন মোদী এবং শাসক দল বিজেপি। বস্তুত, এর আগেও মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কিছু রিপোর্টেও সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতির কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৪ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বার বার দাবি করেছেন তিনি কোনও বৈষম্য করেন না এবং তাঁর সরকারের প্রকল্পগুলি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কথা ভেবে তৈরি করা। বস্তুত, খালিস্তানপন্থী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে ২০২৩ সালে হত্যার ষড়যন্ত্রে ‘র’-এর এক প্রাক্তন কর্তার যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে আমেরিকা। পান্নুন আমেরিকার নাগরিক।

মার্কিন তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই দাবি করেছিল, ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘শিক ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর নেতা পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ‘র’-এর এক প্রাক্তন কর্তা বিকাশ যাদবের যোগ রয়েছে। যদিও দিল্লি তখনই জানিয়ে দিয়েছিল, এই ঘটনার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও যোগ নেই। রয়টার্স জানিয়েছে, বিকাশ এবং ‘র’ উভয়ের উপরেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য সুপারিশ করেছে মার্কিন কমিশন।


উল্লেখ্য, মার্কিন প্রশাসনের অধীনস্ত এই কমিশনটির মূল কাজ হল, বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর নজর রাখা। সেই মতো ধর্মীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে এই কমিশন। অর্থাৎ এটি হল মার্কিন প্রশাসনকে পরামর্শ দেওয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। তবে কমিশনের সুপারিশ যে আমেরিকাকে মানতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়া তথা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে চিনের প্রধান ঠৈকাতে ভারতকে একটি পছন্দের বিকল্প হিসাবে দেখে আমেরিকা। ফলে, কমিশনের সুপারিশমতো ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থাকে মার্কিন প্রশাসন নিষিদ্ধ করে দেবে, সেই সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

এদিকে আমেরিকার ফেডারেল কমিশনের রিপোর্টের কড়া সমালোচনা করেছে ভারত সরকার। ওই রিপোর্টটি একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে নয়াদিল্লি। মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কশিনের বার্ষিক রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসতেই তার নিন্দা করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, আমেরিকার ফেডারেল কমিশনের ওই রিপোর্টটি বিদেশ মন্ত্রকের নজরে এসেছে। তিনি বলেন, ‘ওই রিপোর্ট পক্ষপাতমূলক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মূল্যায়ন করার ধারা জারি রয়েছে। আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ভুল ভাবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির।

মার্কিন কমিশনের ওই রিপোর্টে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি এজেন্ডাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারত গণতন্ত্র এবং সহনশীলতায় বিশ্বাস রাখে। ভারতের অবস্থানকে দুর্বল করার এই ধরনের চেষ্টা কখনও সফল হবে না বলেই কেন্দ্র মনে করে। মার্কিন কমিশনের রিপোর্টের সমালোচনা করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, ১৪৪ কোটি মানুষের দেশ ভারত। এখানে সব ধর্মের মানুষ রয়েছেন। মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন ভারতের বহুত্ববাদী চিত্র বা সব ধর্মের সহাবস্থানকে স্বীকৃতি দেবে, এমন কোনও আশা আমরা করি না। উল্টে মার্কিন এই কমিশনই ‘উদ্বেগের বিষয়’ বলে মনে করে কেন্দ্র।