নেট দখলে স্টারলিঙ্ক

ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রিয় বন্ধু আদানির মতো এবারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রিয় বন্ধু এলন মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ রাখলেন। মোদীর অনুমতিতে ভারতে ইন্টারনেট কারবারে প্রবেশ করল ট্রাম্পের ধনকুবের বন্ধু মাস্ক। ভারতের ইন্টারনেট পরিষেবার দুই কর্পোরেট সংস্থার অংশীদার হয়ে এই কারবারে আচমকা প্রবেশ ঘটল ট্রাম্পের ডান হাত এলন মাস্কের।

রীতিমতো অস্বাভাবিক দ্রুততায় ভারতের দুই টেলিকম কর্পোরেট সংস্থা মুকেশ আম্বানির জিও টেলিকম এবং সুনীল ভারতী মিত্তালের এয়ারটেলের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিতে ইন্টারনেট কারবারে প্রবেশ ঘটল এলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্কের। এয়ারটেল মালিক মিত্তাল স্টারিলিঙ্ক মালিক মাস্কের সঙ্গে যৌথ কারবার ঘোষণা করার পরেই স্টারলিঙ্কের সঙ্গে জিও মালিক মুকেশ আম্বানিও সেই স্টারলিঙ্কের সঙ্গে তাদের যৌথ কারবারের কথা ঘোষণা করেন। এয়ারটেলের মাধেম স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবার কারবার যেমন চলবে, একইভাবে জিও মালিক আম্বানি জানিয়ে দেন স্টারলিঙ্কের যাবতীয় সলুয়েশন জিও আউটলেট থেকে বিক্রি হবে। কয়েকমাস আগেই ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবায় বিদেশি সংস্থা স্টারলিঙ্কের প্রবেশের প্রবল বিরোধী ছিল জিও এবং এয়ারটেল। ভারতে আচমকা মার্কিন কর্পোরেট এলন মাস্কের ইন্টারনেট পরিষেবার বাজার দখলে এই অভিযানের পিছনে আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে দেখছেন অনেকে। রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

জিও-স্টারলিঙ্ক বাণিজ্য চুক্তির পিছনে মোদীর ট্রাম্পকে তোষামোদের নীতি কাজ করছে। এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি। কয়েক মাস আগেও ভারতে স্টারলিঙ্কের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবার বিরোধিতা করেছিল জিও। তাদের স্পেকট্রামের অধিকার দেওয়ার বিরুদ্ধে একজোট হয় দেশের দুই টেলিকম কর্পোরেট সংস্থা জিও এবং এয়ারটেল। সেই বিরোধিতা থেকে হঠাৎই সরে গিয়ে দুই কর্পোরেট সংস্থা কেন স্টারলিঙ্কের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় এসেই ইন্টারনেট পরিষেবার কারবারে নামল? যেখানে দেশি কর্পোরেটের বিদেশি স্টারলিঙ্কের বিরোধিতার মূল প্রশ্ন ছিল দেশের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গোপনীয়তা। সেই নিরাপত্তা, গোপনীয়তাকে উপেক্ষা করে কেন এই গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবায় স্টারলিঙ্কের অবাধ অনুপ্রবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুমোদন দিলেন, বিরোধীদের সেই প্রশ্নে মোদী ও কেন্দ্রীয় সরকার একেবারে নিশ্চুপ।


স্টারলিঙ্কের সঙ্গে রিলায়েন্সের জিও এবং এয়ারটেল যৌথ উদ্যোগে দেশে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবার কারবার স্পেকট্রাম বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এতে দেশের নিরাপত্তা বড় প্রশ্ন হিসাবে সামনে চলে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পেকট্রাম নিয়ে মামলার রায়ে পরিষ্কার জানিয়েছিল, স্পেকট্রাম হলো খুবই দুর্লভ সম্পদ। তা বেসরকরি সংস্থাকে বরাদ্দ করতে হবে প্রকাশ্যে স্বচ্ছ পদ্ধতি মেনে নিয়েই। কোনও স্বচ্ছতা না রেখে বেসরকারি সংস্থাকে এই দুর্লভ সম্পদ বরাদ্দ করা হলে তা হবে দেশের আইন লঙ্ঘন করার সামিল। জিও এয়ারটেল স্টারলিঙ্ক যে একজোট হয়ে কারটেল তৈরি করে যেভাবে স্পেকট্রামের একচেটিয়া দখল নিচ্ছে তাতে মূল্য দিতে হবে সাধারণ টেলিকম গ্রাহকদের।

এই দুর্লভ সম্পদ স্পেকট্রাম শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা উচিত। শুধু স্পেকট্রামের বরাদ্দ নয়, তার অরবিটাল স্লট সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ অরবিটাল স্টল বরাদ্দ অবাধ করে দেওয়া হলে তা ব্যবহার করে আমাদের খনিজ সম্পদ, আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও দেশের নানা বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবে বেসরকারি সংস্থা। টেলিকম তথ্য পরিষেবা আমাদের কাছে দেশের সুরক্ষা ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সবাই জানে, আজকে আমেরিকা ইউক্রেনে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। জেলেনস্কিকে আমেরিকা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার চাপ দিয়ে তাদের খনিজ সম্পদের দখল নিতে চাইছে। আমেরিকার সংস্থা স্টারলিঙ্কের প্রতিরক্ষার স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম, অরবিটল স্লটের অবাধ অধিকার মহাকাশ পরিষেবায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ অনিবার্য করে তুলবে, যা দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করবে। তাই জিও-এয়ারটেল-স্টারলিঙ্কের যৗথ কারবার দেশের স্বার্থই অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।