শিল্পীর নবজন্ম

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

এই কর্মসূচীর প্রধান দুইটি বিষয় হইবে শিক্ষাব্যবস্থাকে অধিকার করা এবং চিন্তাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকতাবাদকে প্রতিষ্ঠা করা। মানসিক ও নৈতিক স্বাধীনতাকে বহির্জগতের কর্মের মধ্যে রূপদান করিবার যে পদ্ধতি গ্যুস্তাভ, দুপ্যাঁ উত্থাপন করেন প্রায় সকলেই তাহা সমর্থন করেন। আন্দ্রেয়াস লাৎসকো, জাক মেনিল রেনে আর্কস এই সমর্থনে যোগ দেন। চিন্তার স্বাধীনতাকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমর্থক ভিলদাক কিন্তু চিন্তাকে কর্ম হইতে পৃথকের বিরোধী ছিলেন, আজও সেই মতই তিনি পোষণ করেন। তিনি সর্বদাই পুরোভাগে রহিয়া গিয়াছেন। কাজ করিতে হইবে, কিন্তু কাজ করিতে হইবে স্বাধীনভাবে! একমাত্র পিয়ের জাঁ জুভই ‘‘আর্টের বিশেষ উদ্দেশ্যের’’ কথা তোলেন, ব্যাপারে তিনি স্তেফান ৎসাইগের খুব কাছাকাছি ছিলেন, কিন্তু তাহার আবেগময় প্রকৃতির জন্যই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে তিনি আবেগের সহিত সংগ্রাম ঘোষণা করেন।


মোটের উপর বুদ্ধিজীবীদের এই সমাবেশ বিপ্লবের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি জ্ঞাপনেরই পরিচায়ক, স্বাতন্ত্র্যরক্ষার দিকে যাহাদের সবচেয়ে বেশি ঝোঁক তাহারাও ইহার ব্যতিক্রম নহেন। তার উপর আলোচনা চলে একটা প্রশান্ত আবহাওয়ার মধ্যে, প্রত্যেকেই বিপক্ষের প্রতি মৈত্রী ও সহনশীলতার ভাব লইয়া বিতর্ক চালান, কেবল মাত্র একজন বিতর্ককালে বারবুসের প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শন করেন নাই। দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিতর্ক যখন সভাস্থল হইতে পত্রিকার পৃষ্ঠায় বিস্তৃতিলাভ করিল তখন ভাষার আর সে সংযম রহিল না। বারবুসের অসাধারণ আত্মসংযমের প্রশংসা আমি চিরদিনই করিয়া আসিয়াছি। সংঘর্ষের একেবারে মধ্যে দাঁড়াইয়া শত্রুর বহু আঘাত গ্রহণ করিয়াও কখনও তিনি তাহার স্থৈর্য হারান নাই। কিন্তু মার্সেল মাতিনের এতখানি ধৈর্য ছিল না। অধীর আবেগে তিনি রণাঙ্গণে ঝাঁপাইয়া পড়িলেন। ১৯২২ সালের ৮ই মার্চ লা আঁতেরনাসিয়নাল পত্রিকায় এবং ২৫শে মার্চের ল্যুমানিতে পত্রিকায় দুইটি প্রবন্ধে (দি রিভলিউসন এণ্ড লিবার্টি; ইন্টলেকচুয়ালস্ এণ্ড দি রিভলিউসন) তিনি সংগ্রাম শুরু করেন। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বিপ্লব উভয়ের জন্যই একসঙ্গে এতখানি উৎকণ্ঠা বোধকরি আর কাহারও ছিল না, এবং এই দুইয়ের মধ্যে যে শোচনীয় সংগ্রামের শুরু হইল তাহাতে তাহার মত এতখানি ব্যথাও বোধ করি কেহ অনুভব করে নাই। কিন্তু যে জ্বরের আগুন তাহার মনে ও মস্তিষ্কে তখন জ্বলিতেছিল তাহার ফলে তিনি বাক্যের সংযম হারাইয়া বসিলেন। লিখিলেনঃ ‘‘নৈতিক সূচিতা বাঁচাইয়া আমাদের কতটুকু লাভ হইবে! (সোভিয়েট রাশিয়ায়) যখন এত লোক আমাদের জন্য যন্ত্রণা ভোগ করিতেছে ও মরিতেছে তখন তুচ্ছ সম্মানের সূচিতাকে বর্জন করিয়া বিপ্লবী দলের সঙ্গে নিজেদের মিশাইয়া দিতে আমাদের কিসের বাঁধা!…’’

বিরুদ্ধবাদীর প্রতি (জুভ, কল্যাঁ, আর্কস, দুরত্যাঁ) তাহার আঘাত অনেক সময় সম্মান ও শিষ্টতার সীমা ছাড়াইয়া গেল; বুদ্ধিজীবীর বক্তব্যকে তিনি ‘‘শিশুর আহার’’ বলিয়া তাচ্ছিল্যের সহিত উড়াইয়া দিলেন, স্বাতন্ত্র্যরক্ষাকে বলিলেন, ‘‘প্রবঞ্চকের আত্মগোপন।’’ আদর্শনিষ্ঠ আন্তরিক মহাপ্রাণগণকে নিজের চারিপাশে টানিয়া আনিবার চেষ্টা না করিয়া তিনি তাহাদিগকে ক্রুব্ধ ভর্ৎসনায় বিদ্ধ করিতে লাগিলেন। অথচ এই সকল ব্যক্তিরই বিপ্লবের কার্যে আত্মনিয়োগ করিবার আকাঙ্ক্ষার অন্ত ছিল না।

(ক্রমশ)