রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
কোয়েলানসে ৎসাইতুৎ পত্রিকায় ৯ই মে তারিখে আমাকে সর্বপ্রথম তিরস্কার করিয়া যে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তাহার ভাষা যথেষ্ট ভদ্র ও সংযত ছিল।
১৯৩৩ সালের জুন মাসে ফ্যাশিস্ট-বিরোধী আন্তর্জাতিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি উহার সভাপতি নির্বাচিত হই। ইহার পরেও কিছুদিন পর্যন্ত জার্মান সংবাদপত্রগুলি আমাকে শত্রু বলিয়া প্রচার করিল না। কোয়েলনিসে ৎসাইতুং পত্রিকা আমার জবাব যথাযথভাবেই প্রকাশ করিল এবং জবাবে যাহা লিখিল তাহার মধ্যেও উগ্রতা ছিল না। যতই এই বিতর্ক দীর্ঘ হইতে লাগিল ততই বহু জার্মান লেখক এই বিতর্কে যোগ দিতে লাগিলেন। ইহাদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন রুডলফ্ জি বিণ্ডিং। আমার জ্যা ক্রিস্তফের জার্মান প্রকাশক এই সমস্তগুলিকে সংকলিত করিয়া একখানি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেন। আমার প্রকাশক ছিলেন ফ্র্যাঙ্কফুর্টের একজন পাকা ব্যবসায়ী ও ঝানু বুর্জোয়া। আমি এই পুস্তিকার কোনো জবাব দিলাম না। আমার আর একজন জার্মান প্রকাশকও (তাহার কার্যও নিশ্চয়ই সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হইতেছিল) নিষ্পত্তির চেষ্টা করিতেছিলেন। তাহার চেষ্টা ছিল আমার প্রতিবাদ যাহাতে আদর্শগত আলোচনার নিরাপদ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে। ‘লাইপজিগ বিচারে’ মিটমাটের শেষ আশাটুকুও নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল।
হে অতীত, বিদায়
১৯১৪ সাল হইতে ১৯১৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত আমার দুই সিরিজ প্রবন্ধ সম্প্রতি আবার পড়িতেছি। প্রবন্ধগুলি দুইটি বিভিন্ন নামে (ও-দস্যু দ্য লা মলে ও লে প্রেক্যুরসোর) সংকলিত ও প্রকাশিত হইয়াছে। প্রবন্ধগুলি একটি চিন্তাধারারই তথা একটি কর্মধারারই ক্রমবিকাশ; তখনকার দিনের ভাবাবেগকে তাই উহা গভীরভাবে আলোড়িত করিয়াছিল। আর পড়িতেছি যুদ্ধের কয়েক বৎসরের আমার ব্যক্তিগত ডায়েরী। এই ডায়েরীর ত্রিশটি অপ্রকাশিত খণ্ডে রহিয়াছে বহু চিঠিপত্র এবং পূর্বোক্ত প্রবন্ধাবলীর ভাষ্যরূপে আমার ভাববিবর্তনের পথরেখা; রহিয়াছে আমার অন্তর্দ্বগ্ধ নাট্যের চাবিকাঠি। এ যেন এক দীর্ঘ, ঝটিকাসংকুল সমুদ্রযাত্রা; যুদ্ধ শেষ হইয়াছে, কিন্তু এ যাত্রার শেষ হয় নাই। গত সতের বৎসর ধরিয়া এই যাত্রা চলিয়া আসিতেছে অবিশ্রান্তভাবে।
(ক্রমশ)