রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
সংকটমুহূর্তে যখনই পথ খুঁজিয়া পাই না তখনই আমার হাত ধরিয়া বলে আগাইয়া চল।
পথের সন্ধান পাইয়া আমি আবার যাত্রা শুরু করিলাম। কিন্তু মোড় ঘুরিতেই এবার আমাকে অতীতের নিকট হইতে চিরবিদায় গ্রহণ করিতে হইল। আমার সেদিনের বন্ধুরা এই পথপরিবর্তনের জন্য আমার অপেক্ষা করিয়া ছিলেন না। কিন্তু নূতন পথে আসিতেই আমার বহু নূতন বন্ধু লাভ হইল। দুঃসাহসী পাখীরা যেমন ঝড়ের বাতাস ঠেলিয়া আসে তেমনি তাহাদেরও অনেকেই আমার দিকে ছুটিয়া আসিলেন। আমার ‘সংগ্রামের ঊর্ধ্বে’র আবেদনে প্রথম সাড়া আসিল বহুদূর হইতে ভাসিয়া আসা ইলিওনোরা ডিউসের সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে। ১৯১৪ সালের ১৩ই অক্টোবর রোম হইতে তিনি কয়েক লাইন লিখিয়া পাঠাইলেনঃ ‘‘আপনার হৃদয় যেন আপনার নিজের বাণীর মধ্যেই তাহার সান্ত্বনা খুঁজিয়া পায়…ও-দস্যু দ্য লা মলে…আপনার কণ্ঠস্বর যেন থামিয়া না যায়… জানি আপনার কণ্ঠস্বর থামিবে না…’’
সাড়া আসিল ইউরোপের অন্য প্রান্ত হইতে আর একটি রমণীর কণ্ঠস্বরে। ১৮ই ডিসেম্বর এলেন কে আমাকে অনুরূপ পত্র লিখিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ফ্রান্স হইতে বিভিন্ন কণ্ঠের বিভিন্ন বাণী আসিতেছিল। ওলার এবং পারির সংবাদপত্র-জগত আমার বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করিয়াছিলেন তাহাতে আমার এইটুকু সুবিধা হইয়াছিল যে, হতাশাক্ষুব্ধ নিঃসঙ্গ ফরাসী জনসাধারণের অন্তরে আমার বাণী পৌঁছিয়াছিল, কারণ এ ধরনের আক্রমণ আমার উপর না হইলে আমার আবেদন সম্পর্কে তাহারা কোনোপ্রকার কৌতূহল দেখাইত না। আমার আবেদনের সাড়া আসিল সর্বপ্রথম এই সকল বিখ্যাত ব্যক্তিগণের নিকট হইতেঃ মার্সেল মাতিনে (২৪শে অক্টোবর), আমেদে দ্যুনোয়া (৪ঠা নভেম্বর), টলস্টয়ের পুরাতন বন্ধু পল বিরুকফ্, বর্দোর দর্শনের অধ্যাপক দোদ্যাঁ, আঁরি গিলবো (ইনি ১৩ই নভেম্বর লা বাতাই স্যাঁদিকালিস্ত পত্রিকায় আমার উদ্দেশ্যে একখানি ‘খোলাচিঠি’ প্রকাশ করিয়া যথেষ্ট সৎসাহসের পরিচয় দেন।) শোভেল নামক লিসে ভল্ত্যার-এর একজন শিক্ষক, পি. জে. জুভ (২৫শে নভেম্বর), ম্যারসেরো, জর্জ পিয়শ, ফেরনাঁ দেপ্রেং, ফ্রাঞ্জ জুর্দা, এদুয়ার দ্যুজরদ্যাঁ, গুস্তাভ দ্যুপ্যা, জাক মেনিল, লিয় বাজলজেৎ, এমিলি ম্যাসন, গ্যাস্টন খিয়েসন, এ. প্রিভা, ফেলিসিয়াঁ শালে এবং অন্যান্য আরো অনেকে।
ইংলণ্ডেও ইউনিয়ন ডেমক্রেটিক কন্ট্রোল তখন ট্রেভেলিয়ান, ই.ডি. মারেল, নর্মান এঞ্জেল, বাট্রাণ্ড রাসেল প্রমুখ মনস্বীদের সহায়তা ও সমর্থন লাভে সমর্থ হইয়াছে। ১৪ই নভেম্বর কেমব্রিজ মেগাজিন পত্রিকায় ‘সংগ্রামের ঊর্ধ্বে’ প্রকাশিত হয়। পরে পুস্তিকাকারে ইহা ব্যাপকভাবে বিতরিত হয়। ইহা লইয়া ব্যাপক ও গভীর আলোচনার সূত্রপাত হয়,
(ক্রমশ)