শিল্পীর নবজন্ম

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

আমার মতে যে সকল শক্তি পৃথিবীর রূপান্তর আনে—বিবেকের শক্তি তাহাদের অন্যতম। অতএব, এই শক্তি প্রয়োগের কৌশল বিপ্লবকে শিখিতে হইবে। বিপ্লবের উদ্দেশ্যে আমি এই কথা বলি যে, তোমার শিবিরে আমাদের স্থান দাও, তোমার সংগ্রামে ও সংকটে আমাদের অংশ দাও, কিন্তু তোমার শিবিরে আমরা স্বাধীন সত্তা রক্ষা করিয়া বন্ধুর মত থাকিব, যাহা ন্যায় বলিয়া বুঝিব তাহার পক্ষে এবং যাহা অন্যায় বলিয়া বুঝিব তাহার বিপক্ষে স্বাধীনভাবে সংগ্রাম করিবার অধিকার যেন আমাদের থাকে।


জনসাধারণের যাহারা আমার কথা শুনিত তাহাদিগকে এবং লেখক বন্ধুদের যাহারা অন্তত প্রগতচিন্তার পুরোভাগে আছেন বলিয়া নিজেদের প্রকাশ করিতেন তাহাদের উদ্দেশ্যে আমি এই প্রশ্ন করিলামঃ
তাহারা কি বিশ্বাস করেন, বর্তমানে প্রত্যেক মননশীল মানুষের কর্তব্য সমগ্র দেহমন লইয়া বিপ্লবের বাহিনীতে যোগদান করা, কিম্বা বিপ্লব যদি ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রয়োজন বুঝিতে না চাহে তবে তাহার বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াও মনের স্বাধীনতা রক্ষা করিয়া বিপ্লবের আদর্শের, সমগ্র মানব সমাজের আদর্শের সেবা করিয়া যাওয়া? বিপ্লব যদি এই স্বাধীনতার মূল্য না বোঝে, তবে বুঝিতে হইবে নবজাগরণের প্রেরণার উৎস তাহার শুষ্ক হইয়া গিয়াছে, সে এখন নূতন ধরনের এক প্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নহে। বুদ্ধিজীবীদের সকলেই জবাব দিলেন। ব্রসেলস’এর লা’র লিবর্ পত্রিকার ১৯১২ সালের মার্চ সংখ্যায় তাহাদের বিবৃতিগুলি প্রকাশিত হইল; এপ্রিল সংখ্যায় কয়েকজন জার্মানলেখকের উত্তর বাহির হইল। বেলজিয়মের ডাক বিভাগের কর্তৃপক্ষ জার্মান লেখকদের চিঠিগুলি আটকাইয়াছিলেন।

ফ্রান্স, জার্মানী ও বিলজিয়মের ২৬ জন বিখ্যাত লেখক ও চিত্রকরের জবাব প্রকাশিত হইল। রেণে আর্কস, জর্জ ব্রাঁদ, লিয়ঁ বাজালজেৎ, জর্জ শেনভিয়ের, পল কল্যাঁ, জর্জ দ্যুআমেল, এদুয়ার দ্যুজারদ্যা, ল্যুক দ্যুরত্যা, গুস্তাভ, দ্যুপ্যাঁ, জাঁ দেব্রি, ক্যাজিমির এদশ্মিদ, ফেরনা গুৎনোয়ার দ্য তুরি, পিয়ের জাঁ জুভ, আনেৎ কলব, আন্দ্রেয়াস লাৎসকো, ফ্রানজ্ মাসেরেল, হাইনরিখ মান, মার্শেল মার্তিনে, জাগ মেনিল, জ্যুল রম্যাঁ , রেনে শিকেলে, ফ্রিৎস ফন উনরুশ, শার্ল ভিলদার্ক, হেনরি ভান ডের ভেল্ডে, লেয়ন ভেত, স্তেফান ৎসাইগ, ইহাদের সঙ্গে যোগ দিলেন নরম্যান এঞ্জেল, ফ্রেডেরিক ভ্যান এডেন, ডগলাস্ গোল্ডরিং, ই. ডি. মরেল ও বাট্রাণ্ড রাসেল। চিন্তার স্বাধীনতার আদর্শে ইহারা আস্থা জ্ঞাপন করিয়া পাঠাইলেন, হানস রিনের একই মত ব্যক্ত করিলেন কিন্তু আলাদাভাবে ১৯২২ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখের জুর্ণাল দ্যু পেপল পত্রিকায়।

এই বিতর্কে অধিকাংশই বিনাসর্তে চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষার স্বপক্ষে মত প্রকাশ করিলেন, কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার সকলেই সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করিলেন—চিন্তার স্বাধীনতার প্রতি যাহাদের অতিরিক্ত আসক্তি ছিল তাহারা পর্যন্ত করিলেন। নিম্নে ঐ বিতর্কের একটি সংক্ষিপ্তসার দিতেছিঃ মনের স্বাধীনতার ও স্বতন্ত্রতা রক্ষার পক্ষে যাহারা ছিলেন তাহাদের মধ্যে জর্জ দুআমেল ও স্তেফান ৎসাইগই সর্বাগ্রগণ্য।

(ক্রমশ)