রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর…
সোভিয়েট ইউনিয়ন যাহার জন্য সংগ্রাম করিতেছে তাহাতে আমার পূর্ণ সহানুভূতি ও সমর্থন রহিয়াছে।
‘‘আন্তর্জাতিক বণিকস্বার্থের অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত সংবাদসরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলির অবিশ্রাম প্ররোচনার ফলে বিপ্লবী রাশিয়ার বিরুদ্ধে আজ যখন সমগ্র জগত জুড়িয়া একটা উদ্ধত জনমত সংহত হইয়া উঠিতেছে তখন স্বাধীন ফরাসী হিসাবে আমার কর্তব্য, যে প্রবঞ্চক প্রতিক্রিয়াশক্তি সারা ইউরোপের সমস্তক জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিতে উদ্যত হইয়াছে এবং রুশ বিপ্লবের অস্বস্তিকর মশালকে নিবাইয়া দিবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে তাহাকে আবার আমি আঘাত হানিতে চাই।’’
সোভিয়েট বিপ্লবের মধ্যে ‘‘যে মতের সংকীর্ণতা ও একনায়কত্বের মনোভাব’’ আমাকে প্রায়ই পীড়া দিত তাহার সমালোচনা হইতে আমি বিরত হইলাম না। সে সমালোচনা আমি পূর্বের মতই করিয়া চলিলাম বটে কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েট বিপ্লবের ‘‘ঐতিহাসিক প্রয়োজনে’’ আমার বিশ্বাস আমি পুনরায় ঘোষণা করিলাম এবং ‘‘ইহা যে মনুষ্য সমাজের শক্তিশালী অগ্রগামী দল’’ সে বিশ্বাসও ঘোষণা করিতে ভুলিলাম না।
এই পত্র বিনিময়, এই স্বীকৃতি ও ঘোষণা ১৯২৭ সালের ১৫ই অক্টোবর তারিখে ইউরোপ পত্রিকায় প্রকাশিত হইল। ঐ সঙ্গে লিবেরতের পত্রিকার জবাবটিও প্রকাশিত হইল। কারণ, এই জবাবটি হইতেই সমস্ত ব্যাপারের সূচনা।
তখন হইতে আমাদের মধ্যকার ব্যবধানের প্রাচীর ভাঙ্গিয়া গেল। রাকোভস্কি তখনও পারির সোভিয়েট দূতাবাসে ছিলেন। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে তৈলব্যবসায়ীগণের করতলগত সংবাদপত্রগুলির উন্মাদ চীৎকার অগ্রাহ্য করিয়া সোভিয়েট গণতন্ত্রের দশম বার্ষিকীতে উপস্থিত হইবার জন্য মস্কো হইতে আমাকে আমন্ত্রণ পাঠাইলেন। ১৪ই অক্টোবর তারিখে ইহার উত্তরে আমি একটি বাণী প্রেরণ করিলাম। বাণীটির নাম দিলাম ‘‘রাশিয়ার ভ্রতা ভগ্নীগণের প্রতি।’’ এই বাণীতে আমি জানাইলাম ‘‘সংগ্রামের’’ অর্ধস্ফুট প্রারম্ভকাল হইতেই রুশ বিপ্লবের প্রতি আমি আসক্ত। আজ যখন সমস্ত সাম্রাজ্যবাদ, সমস্ত ফ্যাশিস্টবাদ, সমস্ত যুক্তিহীন অবৈজ্ঞানিক মতবাদ ও সংবাদপত্রের প্রচারকার্য জনমতকে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করিয়াছে, যখন স্বর্ণস্বার্থের ক্রীড়ণক নিজ নিজদিগের গভর্ণমেন্টগুলিকে এই কার্যে তাহারা ভিড়াইতে পারিয়াছে তখন এই চরম সংকটের দিনে পশ্চিম ইউরোপে আমার যে সকল লেখক ও মনস্বীদের আমি বন্ধু বলিয়া পরিচয় দিতে পারি তাহাদের পক্ষ হইতে এবং আমার নিজের পক্ষ হইতে আমি পুনরায় আপনাদের নিকট ভ্রাতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিতেছি।
এই ভীষণ প্রসঙ্গে যে আকাঙ্ক্ষা আমি ব্যক্ত করিয়াছিলাম স্টালিনের দ্বিধাহীন দূরদর্শী নীতির ফলে তাহা আজ পূর্ণ হইয়াছে।
সেদিন হইতে আজ পর্যন্ত সোভিয়েট গণতন্ত্রের ‘‘সহযাত্রী’’ হইতে এবং তাহার পাশে দাঁড়াইয়া সংগ্রাম করিতে আমি কোনোদিন বিরত হই নাই।
(ক্রমশ)