রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
‘‘ইহা কিছুতেই প্রকাশ করা চলে না, কারণ ফল হইবে শোচনীয়। আপনার যে সকল রচনা বারুদের গাড়িতে আগুন লাগাইয়াছে, আমার বিশ্বাস এই প্রবন্ধটি তাহার চেয়েও বিপজ্জনক। এ সম্পর্কে কাপ্যুস ও অন্যান্য বন্ধুদের সহিত পরামর্শ করিয়াছি; সকলেরই এই মত। প্রবন্ধটি প্রকাশ না করিতে, এমনকি বিদেশেও প্রকাশ না করিতে, আমি আপনাকে মিনতি জানাইতেছি। আপনার পক্ষ সমর্থন করিতে দিন অন্যদের, তাহারা চেষ্টা করিলে আপনি মুক্তিলাভ করিতে পারেন।’’
পরদিনেই (২৪শে নভেম্বর) আমি কিছুমাত্র ইতস্তত না করিয়া লিখিলাম, ‘‘যদি বিশেষ অবস্থার দোহাই দিয়া বন্ধুগণ আমার অপরাধ স্খালনের চেষ্টা করেন, তবে আমি প্রকাশ্যভাবে তাহাদের আমার পক্ষ সমর্থনের অধিকার অস্বীকার করিতে বাধ্য হইব।
আমার মত আমি কিছুতেই প্রত্যাহার করিব না, এবং এই মত প্রকাশের অধিকারও ছাড়িতে পারিব না। যদি দেখি আমার দেশ কোনো অন্যায় করিতেছে তবে তাহা নিঃশব্দে উপেক্ষা করিতে আমি পারিব না। ইহাতে যদি আমার প্রাণসংশয়ও হয়, তাহাও স্বীকার। আমি কোনো অজুহাত চাই না। আমার দেশের, আমার ফ্রান্সের জন্য আজ আমি লজ্জায় অধোবদন হইয়াছিঃ মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের কথা আজ এখানে এতই বিপজ্জনক হইয়া উঠিয়াছে। আত্মঘাতী অন্ধ উন্মাদনার হাত হইতে ফ্রান্সকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করিয়া আমি তাহারই সম্মানকে বাঁচাইবার, তাহারই ন্যায় ও মানবতার ঐতিহ্যকে বাঁচাইবার জন্য আমি তাহার বিরুদ্ধেই দাড়াইয়াছিলাম; আমার দেশ একদিন একথা বুঝিবেই এবং বুঝিয়া আমাকে আশীর্বাদ করিবেই।’’
আমার এই সংকল্পকে আরো স্পষ্ট, আরো দৃঢ়, আরো কঠোর ভাষায় প্রকাশ করিবার জন্য ৪ঠা ডিসেম্বর আমি ‘বিগ্রহ’ নামক প্রবন্ধ লিখি। ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবীশ্রেণীকে এত খোলাখুলি আক্রমণ ইতিপূর্বে কখনওই করে নাই।
‘‘ফরাসী বুদ্ধিজীবীদের জন্য আমি আর গর্ববোধ করি না। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের চিন্তানায়কেরা যে অবিশ্যস্য দুর্বলতা দেখাইয়া সমষ্টিগত নির্বুদ্ধিতার পায়ে আত্মসমর্পন করিয়াছেন তাহাতেও প্রমাণিত হইয়াছে তাহাদের মেরুদণ্ড বলিয়া কানো পদার্থ নাই।…
এই প্রবন্ধে পিতৃভূমিকে আমি এক পুতুলমূর্তিরূপে দেখাই।
(ক্রমশ)