শিল্পীর নবজন্ম

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

জানি না শেষ মুহূর্তে এই বাসনা সে পূর্ণ করিতে পারিয়াছে কিনা এবং এই অনিশ্চয়তার মধ্যে আমি তাহার অনেক বন্ধুর, যাহারা হয় ত’ তাহার মত আজ এ-জগতে নাই, মনোভাব আপনার নিকট ব্যক্ত করিয়া পারি না। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সংশয় ও সমালোচনার মনোবৃত্তি জাগাইয়া তুলিয়া যে-শক্তি ও বীরত্বকে প্রায়ই আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, এই প্রাণবান, হৃদয়বান তরুণেরা সেই শক্তি ও বীরত্বকে আপনার রচনার মধ্যে খুজিয়া পাইয়াছে। আপনার রচনা পড়িয়া তাহারা সত্যই আপনার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছে; আপনার প্রেরণার উত্তাপ তাহাদিগকে জীবনের সহজ বাস্তবতা হইতে ঊর্ধ্বে তুলিয়াছে। আপনার বাণী তাহাদের দিয়াছে সেই আনন্দময় আবেগ, যাহা বুকে লইয়া তাহারা এতখানি দৃঢ়পদে রনাঙ্গনোত্রা করিতে পারিয়াছে, পশ্চাতের আকর্ষণে এতটুকু বিচলিত হয় নাই। তাহাদের বিয়োগবেদনাকে আর এই ভয়াবহ যুদ্ধের অনুগামী দারুণ দুর্দ্দিনকে আমরা হাসিমুখে বহন করিব, তাহাদের আত্মবলিদানের সৌন্দর্যের কথা স্মরণ করিয়া। তাহারা আপনার কাছে যে, কতখানি ঋণী তাহা আপনাকে জানাইতে চাই, আার জানাইতে চাই তাহাদের কৃতজ্ঞতা…’’


এই কৃতজ্ঞতায় আমার বুক ভাঙ্গিয়া গেল। তারপর যখন শুনিলাম যুদ্ধের কল্যাণে আত্মবলিদানের গুণকীর্তনে বারেস ও বুর্জে মুখর হইয়া উঠিয়াছেন, তখন আমার বেদনাবিদীর্ণ অন্তরের তলদেশ মথিত করিয়া তাহাদের উদ্দেশ্যে এই আর্ত বাণী বাহির হইয়া আসিল: পাপিষ্ঠ তোমরা, এই তরুণ বীরদের হৃদয়ে আত্মবিনাশের বাসনার এই বীজ ত’ আমরাই রোপন করিয়াছি। এ বলি ত’ আমরাই প্রস্তুত করিয়াছি। কিন্তু তোমাদের জন্য, তোমাদের যুদ্ধের জন্য, ত’ ইহা আমরা করি নাই। তোমাদের যুদ্ধ কাহাকেও কিছু করিতে পারে নাই। তোমাদের যুদ্ধে তাহারা খুন হইয়াছে।…’’

যে মানুষ লিখিয়াছিল ‘সংগ্রামের ঊর্ধ্বে’ এই হইল তাহার ট্রাজেডি। ১৯১৪ সালের শৌর্যবান এই এক পুরুষ— আমাদের কনিষ্ঠ ভ্রাতাদের, শিষ্যদের, সন্তানদের লইয়া গঠিত. আমাদের শিক্ষাতেই ইহারা শিক্ষিত, কিন্তু এই শিক্ষার প্রয়োগপন্থা তাহাদের জানাইবার মত সময় আমরা পাইলাম না। পাইলেও জানাইতে পারিতাম না। কারণ, স্বীকার করিব, আমাদের নিজেদেরই ইহা জানা ছিল না। যেখানে দুই পথ আসিয়া মিশিয়াছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেখানে দাঁড়াইয়া আমরা ইতস্তত করিলাম।

আমার এই স্বীকারোক্তি জাতির এক পুরুষের স্বীকারোক্তি। অন্য কাহারও চেয়ে আমার নিজের অপরাধ কম নহে। পিতৃভূমি ও মনুষ্য সমাজ— এই দুই আদর্শ লইয়া মারাত্মক।

(ক্রমশ)