শিল্পীর নবজন্ম

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

রিপাবলিকের উপাসনা মন্দিরে সর্বদা ইচ্ছা করিয়াই একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করিয়া রাখা হয়, এই বিভ্রান্তির জন্ম সুদূর অতীতে। এই বিভ্রান্তির কথা আবার ভাবিতে হইবে। আর্মিডোরের তরবারির দিন হইতেই ’৮৯ সালের বিপ্লবকে স্বার্থপর ভাগ্যান্বেষীর দল প্রতারিত করিয়া আসিতেছে। ইহারাই ঐ বিপ্লবকে প্রথম নেপোলিয়নের অধীনে ‘ড্রাইরেকটটরী’তে পরিণত করে। কিন্তু গিরোদিন ও আত্মবিক্রীত জ্যাকোবিনদের পুত্র, পৌত্র ও প্রপৌত্রগণ একদিন যাহাদের তাহারা গিলোটিনে বলি দিয়াছে তাহাদেরই সম্পত্তি ও টাকার থলির উপর দাঁড়াইয়া বিপ্লবের বাহিরের রূপ ও পদ্ধতি বজায় রাখিয়া আসিতেছিল। তারপর স্থূলকায় মেদস্ফীত হইয়া তাহারা কমিউনের ‘র্শীর্ণদেহ মানুষগুলি’কে পিষিয়া মারিয়া নিজেদের ‘পানামা’ খালের পায়ে বিক্রয় করিল।
হে অতীত, বিদায়


১৯১৪ সাল হইতে ১৯১৯ সালের মধ্যে প্রকাশিত আমার দুই সিরিজ প্রবন্ধ সম্প্রতি আবার পড়িতেছি। প্রবন্ধগুলি দুইটি বিভিন্ন নামে (ও-দস্যু দ্য লা মলে ও লে প্রেক্যুরসোর) সংকলিত ও প্রকাশিত হইয়াছে। প্রবন্ধগুলি একটি চিন্তাধারারই তথা একটি কর্মধারারই ক্রমবিকাশ; তখনকার দিনের ভাবাবেগকে তাই উহা গভীরভাবে আলোড়িত করিয়াছিল। আর পড়িতেছি যুদ্ধের কয়েক বৎসরের আমার ব্যক্তিগত ডায়েরী। এই ডায়েরীর ত্রিশটি অপ্রকাশিত খণ্ডে রহিয়াছে বহু চিঠিপত্র এবং পূর্বোক্ত প্রবন্ধাবলীর ভাষ্যরূপে আমার ভাববিবর্তনের পথরেখা; রহিয়াছে আমার অন্তর্দ্বগ্ধ নাট্যের চাবিকাঠি। এ যেন এক দীর্ঘ, ঝটিকাসংকুল সমুদ্রযাত্রা; যুদ্ধ শেষ হইয়াছে, কিন্তু এ যাত্রার শেষ হয় নাই। গত সতের বৎসর ধরিয়া এই যাত্রা চলিয়া আসিতেছে অবিশ্রান্তভাবে।
১৯১৪ সাল হইতে যাহারা আর আমার সন্ধান পায় নাই, ও-দস্যু দ্য লা মলে-র রচনাকালে, ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, আমি যে স্থানটি হইতে আমার এই যাত্রা শুরু করিয়াছিলাম আজ সেই স্থানে আসিয়া তাহারা যদি মনে করে যে, আবার আমাকে তাহারা খুঁজিয়া পাইয়াছে, তবে তাহারা খুব ভুল করিবে।

সেদিন এক অব্যাহত যাত্রার সবেমাত্র সূচনা। এই যাত্রাপথে আমি বহু সংস্কার, বহু মোহ, বহু বন্ধুত্ব পশ্চাতে ফেলিয়া আসিয়াছি। এই যাত্রা আমার আজও শেষ হয় নাই। এই যাত্রাপথের শেষপ্রান্তে মানুষ যখন, পৌঁছায়, তখন অঙ্গে, তাহার আবরণ থাকে না, কারণ মলিন মাটিতে সে তখন তাহার পাকা আসন পাতিয়া বসে; ধরিত্রীমাতার কাছে তার সব লেনাদেনা চুকাইয়া দেয়।

(ক্রমশ)