রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
এই শোচনীয় ঘটনার আগে ও পরে লেনিন সম্পর্কে লিখিত তাহার চিঠিগুলিতে দেখা যায় তাহার আবেগ কতখানি তীব্র ছিল। তিনি নিজেই বলিতেন লেনিনকে তিনি প্রাণ দিয়া ভালবাসেন।
তাহার সহিত তিনি অবিরাম আলোচনায় প্রবৃত্ত হইতেন এবং যদিও তাহারা পরস্পরকে ভালোবাসিতেন তথাপি কেহ কাহাকেও ছাড়িয়া কথা কহিতেন না। কিন্তু লেনিনের মৃত্যুর পর লেনিনই জয়ী হইলেন, গর্কি স্বীকার করিলেন তিনিই ছিলেন নির্ভুল।
২০। এবার সত্যই পারি ছাড়িয়া যাইতেছি। এতখানি মানসিক নিঃসঙ্গতা লইয়া যাইতেছি যাহা জীবনে আর কখনও অনুভব করি নাই। ফ্রান্সের রাজনীতিতে ও চিন্তাজগতে প্রতিক্রিয়ার শাসন শুরু হইয়া গিয়াছে। আমি পারি পরিত্যাগ করিতেছি ঠিক জেনোয়া সম্মেলনের সময়, যে সম্মেলনে একমাত্র ফরাসী প্রতিনিধিরাই ইউরোপে শান্তি আনিবার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করিতেছে। জনসাধারণ উদাসীন। জাতি আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত; পয়্যাঁকারের সুবিধা অনুসারে এই যুদ্ধের দাবাগ্নি জ্বলিয়া উঠিবে। আজ হোক, কাল হোক দ্বিতীয় ওয়াটারলু অনিবার্য। বড়ই বেদনার সহিত স্বীকার করিতে হইতেছে, যখন ইহা আসিবে তখন ইহাকে প্রাপ্য হিসাবেই গ্রহণ করিতে হইবে। (রবিবার প্রভাত, ৩০শে এপ্রিল। আমার ডায়েরীর ৩২তম খণ্ডের শেষ কথা)।
২১। ইউরোপে পর্যন্ত আমি প্রেসিডেন্ট ম্যাসারিকের সহিত ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত হইলাম। ১৯২৪ সালের মে মাসে ইনি আমাকে প্রাগে নিমন্ত্রণ করেন। ১৯ সালের মে মাসে P.E.N. ক্লাবের প্রথম সম্মেলনে যোগদানের জন্য সমুদ্রপথে লণ্ডনে যাই। সেখানে টমাস হার্ডি, জন গলস্ওয়ার্দি, এইচ. জি. ওয়েলস্, বানার্ড শ’, জাংউইল প্রমুখ বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখকগণের সহিত আমার পরিচয় হয়।
২২। ১৯২১ সালের ১লা মে লণ্ডনে P.E.N. ক্লাবের যে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়, সেখানে সম্মেলনের পূর্বাহ্নে বেলজিয়াম দলের বিশেষ ক্ষমতার প্রয়োগ জার্মান জাতিকে সম্মেলন হইতে বহিষ্কৃত করা হয়। আমি সেখানে অন্যান্য জাতির সহিত জার্মানীর সহযোগিতার দাবী জানাই এবং একটি বিবরণীতে বেলজিয়ম দলের মনোভাবের খোলাখুলিভাবে তীব্র নিন্দা করি। বিবরণীটি ১৯২৩ সালের ১৫ই জুনের ইউরোপ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দুর্গত জার্মানদের জন্য একটি আবেদন বাহির করি। উহা ইউরোপ ও লিবর্ প্রোপো পত্রিকায় ১৯২৪ সালের ১২ই ও ১৫ই জানুয়ারী সংখ্যায় বাহির হয়। পারির বড় কাগজগুলির মধ্যে একমাত্র এ্যর নুভেল-এই উহা প্রকাশিত হয়। এই আবেদনে যে সাড়া পাই তাহা সত্যই বলিবার মত। একদিন এ কাহিনী যখন প্রকাশিত হইবে, তখন লোকে অবাক হইয়া শুনিবে যে, স্বাধীন বলিয়া সুখ্যাত বহু লোক কেহবা প্রকাশ্যে, কেহবা পরোক্ষে, কেহবা কাপুরুষের মত এই আবেদনে সাড়া দিতে অস্বীকার করিয়াছেন।
সেকুর আঁতেরনাসিয়নাল ও জাঁফাঁ-র ফরাসী কমিটি ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ফাদার লিয়ঁ বেরনার ও ফাদার কালামেৎ-এর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিতে হইয়াছিল একমাত্র এই কারণে যে,
(ক্রমশ)