রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
কিন্তু (ইউরোপের) জনতার এই বিশ্বাসের বল নাই। এই বিশ্বাসের বীজ তাহাদের বুকে পুঁতিয়া দেওয়াই আমার কাজ। কিন্তু এখন হইতে ফসল পাকা পর্যন্ত যে কাজ সে দীর্ঘ দিনের কাজ।’’
আজ যখন এই কথাগুলি আবার পড়ি তখন এ’কথা বলিতে পারি না যে, আমার সেদিনের সে নৈরাশ্যের কোনো ভিত্তি ছিল না; কারণ ইউরোপের পরবর্তী ঘটনাবলীই তাহার প্রমাণ দিয়াছে। কিন্তু এই নৈরাশ্য কর্মক্ষেত্র হইতে দূরে সরিয়া যাইবার কারণ হইতে পারে না; পরন্তু ইহাই কর্মক্ষেত্রে থাকিবার কারণ। এই জনতাকে নাড়া দেওয়া দরকার। যে সামাজিক বিশ্বাস আমাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছে সেই বিশ্বাসের বীজ ছড়াইতে হইবে এই জনতার জমি চষিয়া তাহার বুকে। তখন দেহে মনে গভীর অবসাদ লইয়া আমি দিন কাটাইতেছি। আগেই বলিয়াছি, যুদ্ধপরবর্তীকালের ফরাসীদের মধ্যে এই অবসাদ তখন সাধারণভাবেই দেখা দিয়াছে। যুদ্ধের মধ্যে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় ও শান্তির মধ্যে বিপুল আশাভঙ্গের সহজ স্বাভাবিক পরিণতিই এই অবসাদ।
আমার প্রশ্নকারীদ্বয় মনাৎ ও মার্তিনে তখন যে কোনও উপায়ে বিপ্লবকে বাঁচাইবার জন্য ইস্পাতকঠিন সংকল্প লইয়া মরিয়া হইয়া উঠিয়াছেন; কারণ, বিপ্লবকে বাঁচানো তখন তাহাদের নিকট জীবন মরণের প্রশ্ন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও নৈরাশ্য তাহাদেরও কম দেখা গেল না, সম্ভবত এ নৈরাশ্য আমার চেয়ে তাহাদের নিকট আরও বেশি ব্যথার বস্তু। আমি লিখিলামঃ
আজিকার যে ট্র্যাজেডি, যে ট্র্যাজেডি তাহাদের মনের উপর জগদ্দল পাষাণের মত চাপিয়া বসিয়াছে, রসনাকে বাঁধিয়াছে নানাভাবে, সে ট্রাজেডি আর কিছুই নহে, তাহারা যেন বুঝিতে পারিতেছেন রুশ বিপ্লবের ধ্বংস প্রায় সুনিশ্চিত। তাহাদের চোখে জেনোয়া সম্মেলন দ্বিতীয় ব্রেসট-লিটভস্কের রূপ ধরিয়া আসিতেছে ইউরোপের শক্তিগুলি রাশিয়ার উপর আবার যে শোচনীয় সন্ধি চাপাইতে চলিয়াছে তাহা রোধ করিবার শক্তি কেন রাশিয়ার নাই।
এই বিপর্যয় যতই কাছে আসিতেছে ততই ইউরোপের সোসিয়ালিস্ট ও এনার্কিস্ট পত্রিকাগুলিতে বিপ্লবের উপর আক্রমণ তীব্র হইতেছে। আজ বহু সোশিয়ালিস্ট সাময়িক পত্রিকায় রুশবিপ্লবের বিরুদ্ধে যতটা বিষোদগার করা হইতেছে বুর্জোয়া পত্রিকাগুলিতেও ততটা হইতেছে না। প্রতিক্রিয়াশীল গভর্ণমেন্টের নিকট ইহা এতই মুখরোচক যে মনাৎ এমন সন্দেহও প্রকাশ করিলেন যে,
(ক্রমশ)