শিল্পীর নবজন্ম

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর…

এ সম্পর্কে আমরা দীর্ঘদিন যে আত্মপ্রবঞ্চনা করিয়াছি তাহার মূলে ছিল সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের ভ্রান্ত ধারণা। (কিন্তু ক’জন সমাজতন্ত্রীই বা উহা তখন বুঝিয়াছিল!) স্বাধীন ব্যক্তিমানুষের সহযোগিতা ও সম্মেলনের উপর যে সমাজ গড়িয়া ওঠে সে-ই সমাজতন্ত্রী সমাজ। মার্কস্ নিজেই ত’ বলিয়াছেন: ‘‘সকলের স্বাধীন বিকাশের জন্য প্রথম প্রয়োজন প্রত্যেকের স্বাধীন বিকাশ।’’


সম্প্রতি (২৩শে জুলাই, ১৯৩৪) এইচ.জি. ওয়েলসের সহিত সাক্ষাৎকালে স্টালিন ওয়েলসের মধ্যশ্রেণীসুলভ ভীতিতে সান্ত্বনা দিয়া তাহাকে দেখাইয়া দেন যে, ‘‘‘ব্যক্তিমানুষ ও সমষ্টিমানুষের স্বার্থের মধ্যে কোনো বিরোধ নাই, থাকা উচিত নয়। দু’এর মিলন ঘটাইতেই হইবে। কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজই প্রচুর পরিমানে ব্যক্তিগত স্বার্থের অনুকূল আবহাওয়ার সৃষ্টি করিতে পারে।’’

স্টালিন স্বার্থ সম্পর্কে যে কথা বলিয়াছেন, ভাবধারা সম্পর্কেও সেই কথাই বলিতে পারিতেন। বুর্জোয়া ব্যবস্থায় কঠিন মুঠিতে পিষ্ট হইয়া সমস্ত স্বাতন্ত্র্যবাদী, সংস্কৃতি আজ মরিতে চলিয়াছে। স্থবির কাপুরুষ পাশ্চাত্য সমাজ দীর্ঘকাল ধরিয়া এই বুর্জোয়া ব্যবস্থার হাতেই নিজের শক্তিশালী মনস্বীদের সঁপিয়া দিয়া আসিতেছে। আজ এই সমাজের নূতন জন্ম হইতেছে, মজুরশাসিত সমাজের উর্বর মাটিতে পুরাতন তরু নবজীবন লাভ করিতেছে; লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণরসে পরিপুষ্ট হইয়া এই তরু দ্রুত বাড়িয়া উঠিতেছে।

কয়েকমাস আগে (২০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩০) মস্কোতে পারস্যের প্রাচীন কবি ফের্দৌসীর সহস্রতম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হইয়াছে। লেনিনের এই বাণীকে স্মারক করিয়া উৎসব শুরু করা হয়ঃ
‘‘মানবসমাজের সমগ্র বিকাশের মধ্য দিয়া যে সংস্কৃতির সৃষ্টি হইয়াছে তাহার নিখুঁত জ্ঞানকে ভিত্তি করিয়াই শ্রমিকসংস্কৃতি গড়িয়া উঠিতে পারে।’’

এই প্রসঙ্গে সোভিয়েট গভর্ণমেন্টের প্রতিনিধি এনুকিজে বলেন যে, কয়েক বৎসর পূর্বে সোভিয়েট ইউনিয়ন গ্যায়টে ও বিটোফেনের শতবার্ষিকী উদযাপন করিয়াছে এবং আজ সে পুস্কিনের শতবার্ষিকী ও বিখ্যাত জর্জীয়ান কবি রুস্তাভেলির ৭৫০তম বার্ষিকী করিবার উদ্যোগ করিতেছে। তিনি ঘোষণা করেনঃ
‘‘মানুষের চিন্তা ও সংস্কৃতি তাহাদের সমগ্র বিকাশের মধ্য দিয়া যাহা কিছু সৃষ্টি করিয়াছে তাহার সবচেয়ে ভালোটুকু আমরা গ্রহণ করিয়াছি। কারণ নূতন সমাজের নির্মাণকার্যে আমরাই মানুষের চিন্তা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদের উত্তরাধিকারী।’’

চিরজীবন আমরা এই স্বপ্নই দেখিয়া আসিয়াছি— সর্বজনীন প্রাণের স্বপ্ন; এই স্বপ্নই আজ জয়ী হইয়াছে।

(ক্রমশ)