চ্যালেঞ্জের মুখে রাধা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

কঠিন এক খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে প্রতিদিন নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে। এবার যে অনায়াসে জয় আসবে না খেলার শুরুতেই বুঝতে পেরেছে সরকার পক্ষ। তাই উপরাষ্ট্রপতি পদে জয় ছিনিয়ে আনতে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে কৌশলে ময়দানে নামিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা। প্রতিপক্ষ ‘ইন্ডিয়া’ জোট জগদীপ ধনকড়ের সময় কিছুটা ছন্নছাড়া থাকলেও এবার অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এনডিএ জোটের প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণাণকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট প্রার্থী করেছে বি সুদর্শন রেড্ডিকে। দু’জনেই জন্মসূত্রে অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। কিন্তু আসল লক্ষ্য, দক্ষিণ ভারতের ভোট ব্যাঙ্কে অক্ষত রাখা।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতিতে মনোনয়ন জমা দেন রাধাকৃষ্ণাণ। আর সংসদের সেন্ট্রাল হলে সুদর্শনকে সংবর্ধনা দেয় ইন্ডিয়া জোট। সুদর্শন রেড্ডির সংবর্ধনায় বাংলায় বক্তৃতা করেন সাংসদ শতাব্দী রায়। তৃণমূলের ছ’জন সাংসদ এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন সুদর্শন রেড্ডি। বাংলাতেও সুদর্শন রেড্ডি প্রচারে আসবেন বলে জানা গিয়েছে।

২১ জুলাই রাতে আচমকাই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন জগদীপ ধনকড়। তারপর থেকেই ধনকড়ের পদত্যাগ এবং পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। এনডি়এ ও ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হিসাবে একাধিক নাম নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু সব কিছুকে ভুল প্রমাণ করে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা তাঁদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও সঙ্ঘ পরিবারের পছন্দের মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণাণকে প্রার্থী করেন। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে চমক দেয় ইন্ডিয়া জোট।


কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন দু’পক্ষই দক্ষিণ ভারতের অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করা দু’জনকে প্রার্থী করল। সূত্রের খবর, তৃতীয় মোদী সরকার গঠনের সময় লোকসভার স্পিকারের পদ দাবি করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু। কিন্তু লোকসভার অধ্যক্ষের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শরিকদের হাতে ছাড়তে চাননি মোদী-শাহরা। তাতে মুখে কিছু না বললেও মনক্ষুণ্ণ হন চন্দ্রবাবু। রাধাকৃষ্ণাণকে প্রার্থী করে মোদী-শাহরা ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মেরেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে পাল্টা সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কারণ জন্মসূত্রে তিনিও দক্ষিণ ভারতীয় এবং একসময় চন্দ্রবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই এবার এনডিএ প্রার্থীর জয় মসৃণ হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এর পাশাপাশি রয়েছে অঙ্কের খেলা। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদের দুই কক্ষের সদস্যরা। জগদীপ ধনকড়ের সময়ে লোকসভায় বিজেপির একাই সাংসদ ছিল ৩০২ জন। এর সঙ্গে শরিকদের সমর্থন ছিল। রাজ্যসভাতেও অনেকটাই এগিয়েছিল এনডিএ। এবার বিজেপির ২৩৫ সাংসদ। ফলে নির্ভর করতে হবে নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু, চিরাগ পাসোয়ানদের উপর। এছাড়াও ছোট ছোট শরিকদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে সমর্থনের জন্য। পাশাপাশি, এবার ইন্ডিয়া জোট আগের বারের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদআধ। গতবার লোকসভায় কংগ্রেসের আসন ছিল ৫৪। এবার বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ। আবার তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও ডিএমকে’র শক্তিও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ময়দানে নামিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। এরপরও রয়েছে নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি এবং জগনমোহনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস। যদিও দুই দলই এনডিএ প্রার্থী রাধাকৃষ্ণাণকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখনও নির্বাচনের আগে অনেকটা সময় রয়েছে। ফলে এই দুই দল অবস্থান পরিবর্তন করলে রাধাকৃষ্ণাণকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।