সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় বেরিয়েছে— তাতে ওই দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সহ একজন প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশ অফিসারের ফাঁসির হুকুম হয়েছে। কিন্তু এই রায় বের হওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তার জন্য বাংলাদেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার তেমন কোনও অবনতি হয়নি— ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন দু-চারটি ঘটনা ছাড়া। এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক স্তরে আবেদন রেখেছে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, যাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গত বছর আগস্ট মাসে গণ অভ্যুত্থানের পর, হাসিনা ভারতে এসে আশ্রয় নেন। এখনও তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। দিল্লির সাউথ ব্লক ঢাকাকে জানিয়ে দিয়েছে হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠাতে বাধ্য নয় ভারত। দুই দেশের মধ্যে যে প্রত্যর্পন চুক্তি রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে। সুতরাং এ ব্যাপারে কোনও প্রশ্নের অবতারণা করে বাংলাদেশের উচিত হবে না।
এদিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যাপারে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে। বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন যদি সবাইকে না নিয়ে করা হয়, তাহলে তা সঠিক কাজ হিসেবে মেনে নেবে না আন্তর্জাতিক মহল। এ কথা খুব স্পষ্ট ভাষায় ভারত বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে। উল্লেখ্য, নির্বাচনের বেশ কয়েকমাস আগে জামাতে ইসলামী মৌলবাদী সম্প্রদায় এবং পাকিস্তানপন্থীদের চাপে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, যে দল গঠন করেছিলেন বাংলাদেশের জনক মুজিবুর রহমান, নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান। যদিও বাংলাদেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করাকে সমর্থন করেনি। সুতরাং এখনও পর্যন্ত ওই বাংলায় যে পরিস্থিতি, তাতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য জামাত এবং আর কয়েকটি দল ইউনূস খানের ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে। ইউনূস খানও এই চাপের কাছে নত, কারণ তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দিন গুনছেন বর্তমান প্রেসিডেন্টকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে।
পাকিস্তান যেভাবে কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক প্রভাব বিস্তার করছে বাংলাদেশে, তা ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত— তাও সাউথ ব্লকের তরফে ঢাকাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশকে ভারত সবসময়ই অকৃত্রিম বন্ধু বলে মানতে চায়— এতদিন অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তা মেনেও এসেছে। কিন্তু পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশ তাদের ভাই বলে রব তুলেছে, তা কোনওভাবেই মানতে পারছে না ভারত। সম্প্রতি বাংলাদেশের নোট ছাপানো নিয়ে যেভাবে পাকিস্তান উদ্যোগ নিয়েছে, এটাও দিল্লির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ভারতে জাল নোট ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে।
অতীতের সবকিছু ভুলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন ভাই ভাই। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের একটি ছোট ভাইয়ের মতো। সুতরাং বাংলাদেশের উন্নতিকল্পে পাকিস্তান সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কারণ পাকিস্তান এখন অতীতে যা হয়েছে, তা ভুলে গেছে। তাই এখন পাকিস্তান চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। ভারতের দাদাগিরি আর বেশিদিন চলবে না। পাকিস্তানের এক রাজনৈতিক দল জমিয়েত উলমায়ের শীর্ষ নেতাও বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের এগিয়ে আসা উচিত। তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে— সম্প্রতি করাচি বন্দর বাংলাদেশকে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। আবার যতদূর সম্ভব অচিরেই ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হবে। তার সবরকম প্রস্তুতি চলছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণকারীরা মনে করেন চিন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ নানাভাবে, নানা ব্যবস্থা নিয়ে ভারতকে সবসময়ই উদ্বেগের মধ্যে রাখতে চাইছে। চিন পাকিস্তানকে যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোজাহাজ সরবরাহ করেছে। তাছাড়া আরও অস্ত্র দিয়েও চিন পাকিস্তানকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে। পাকিস্তান আবার কিছু সমরাস্ত্র বাংলাদেশে সরবরাহ করছে। এ সবই ভারতকে চাপে রাখার কৌশল।