ডাকঘরের জমিও নজরে

প্রতীকী চিত্র

মোদী সরকার রেল, বন্দর, টেলিকম, বিদ্যুৎ, বিমান সহ জমি বাড়ি বেচে দেওয়ার পর এবারে হাত দিচ্ছে ডাকঘরে। দেশে যে ১.৬ লক্ষ ডাকঘর রয়েছে তাকে এবার বাণিজ্যিক মডেলে গড়ে তোলা হবে। তাতে ডাকঘরের পরিষেবাও বাণিজ্যিক মডেলে গড়ে উঠবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ডাকঘরের জমিদে গড়ে উঠবে বিশাল মল বা শপিং কমপ্লেক্স। বড় শহর এবং আধা শহরের প্রধান প্রধান এলাকায় যে ডাকঘরগুলি রয়েছে তাদের জমিতে হবে পিপিপি মডেলে শপিং কমপ্লেক্স। একতলায় এক ধারে থাকবে ডাকঘর। আর পুরো বাড়ি জুড়েই ঝলমলে বাণিজ্য কমপ্লেক্স। সোজা কথায় ডাকগরের বাড়ি জমি এবার শপিং মলের প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোদী সরকার। তিলে তিলে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রায়ত্ত পরিকাঠামোর জমি বাড়ি বিক্রি মোদী সরকারের কাছে নতুন কিছু নয়।

কেন্দ্রের নীতি আয়োগ ২০২১ সালে ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জমি বাড়ি লিজের নামে বিক্রির সুপরিশ করে। সেই সুপারিশ মতো মোদী সরকারের আমলে চলেছে রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থা ও পরিকাঠামোর ঢালাও জমি বিক্রি ও বেসরকারিকরণ। তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে কোপ পড়ল ডাকঘরে। আশা করা হচ্ছে যোগাযোগ মন্ত্রক আগামী মাসে ডাকঘরের জমি লিজে দিতে প্রোমোটারদের দরপত্র চেয়ে নোটিশ জারি করতে পারে।

ডাকঘরকে এবারে লাভজনক বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্য ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, টেলিকম হোক বা ডাকঘরে যে জমি সম্পদ রয়েছে তার থেকে আয় করতে হবে। যৌথ উদ্যোগে বা পিপিপি মডেলে বাণিজ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। এতে মুনাফা হল মূল লক্ষ্য। বর্তমানে ডাকঘর পরিষেবায় কেন্দ্রের খরচ হয় ২৭ হাজার কোটি টাকা। আয় হয় ১২ হাজার কোটি টাকা। আয়ব্যয়ের ঘাটতি কমাতেই জমি-বাড়ি বিক্রির পরিকল্পনা বলে সাফাই দিয়েছেন মন্ত্রী। সরকারের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ডাকঘরের বাণিজ্য প্রকল্প থেকে সরকারের দ্রুত আয় বাড়ানোর। এই বাণিজ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, পুনে ও হায়দরাবাদ শহরকে। সরকারের তরফে শিল্প মহলের কাছে নতুন সুযোগ হিসাবে ডাকঘর বাণিজ্য কেন্দ্রের পরিকল্পনা ঘোষণা হলেও এখনও পর্যন্ত তেমন সাড়া মেলেনি। ইতিপূর্বে রেলের জমিতে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষিত হলেও হাতে গোনা কয়েকটি বড় শহর ছাড়া আর কোথাও বিশেষ সাড়া মেলেনি।


দেশের ডাকঘর পরিষেবার খোলনলচে বদল করে যে বাণিজ্য মডেলের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মত, ভারতের ৯০ শতাংশ ডাকঘরের পরিষেবা ছড়িয়ে রয়েছে গ্রাম এবং প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায়। গ্রামের গরিব, আদিবাসী মানুষের ডাকঘর থেকে অর্থ সঞ্চয় সহ নানা সরকারি প্রকল্পের সুযোগ মেলে। সেই ডাকঘরে বাণিজ্য কমপ্লেক্সে গরিব মানুষের কোনও সুবিধাই হবে না। বর্তমানে ভারতে সরকারের অধীনেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি জমি। তার পরিমাণ হবে ১৫ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এতে রেলের হাতে রয়েছে হাজার ৯০০ বর্গকিলোমিটার জমি। প্রতিরক্ষা দপ্তরের হাতে রয়েছে রেলের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি জমি। এই পুরো জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার সম্ভব নয়। কারণ সব জমির বাণিজ্যমূল্য নেই। মোদী সরকার ২০২০ সাল থেকেই রেলের জমিতে পিপিপি মডেলে বাণিজ্য প্রকল্প গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মাত্র ৮৮ বর্গ কিলোমিটার জমি রেল বণিজ্য প্রকল্পের নামে লিজে দিয়েছে, যা রেলের মোট জমির ২ শতাংশ মাত্র।

ভারতের ডাকঘর পরিষেবা হলো বিশ্বের অন্যতম ডাক পরিষেবা। ডাকঘর বেশির ভাগই রয়েছে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে। উন্নত দেশের তুলনায় ভারতে গ্রামের ডাক পরিষেবা সরকারি ডাকঘর নির্ভর। তাই বিদেশি ডাক পরিষেবা বেসরকারিকরণ মডেলে ভারত সরকারের ডাকঘর পরিষেবার দায় ঝেড়ে ফেলা উচিত হবে না বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্বের উন্নত ডাকগরের লেটার বক্সে চিঠি আদান-প্রদানের হার ক্রমশ কমছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমেই কাজ চালাচ্ছে মানুষ। মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে ডাকঘর এখন অচল। অবশ্য ডাকঘরের জমি এখন সোনা।