জীবনের ব্ল্যাকহোলে ‘হোয়াইট লাই’ সত্যমেব জয়তে

সেই ছোট্ট বেলায় আমরা সবাই পড়েছিলাম। বর্ণ পরিচয়। তার দ্বিতীয় ভাগে লেখা রয়েছে, ‘সদা সত্য কথা বলিবে। যে সত্য কথা বলে, সকলে তাহাকে ভালোবাসে। যে মিথ্যা কথা বলে, কেহ তাহাকে ভালোবাসে না, সকলেই তাহাকে ঘৃণা করে। তুমি কদাচ মিথ্যা কথা বলিও না।’
সেটা ছিল বই থেকে আমাদের শিখে নেওয়া এক নীতি বাক্য। যা জীবন চলার পথে এক অনন্য সুন্দর চরিত্র গঠনের উপাদান। তাই সত্য কথা বলা, সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। অন্তত আমরা যতদিন বাঁচবো ততদিন এর মূল্যয়ান করাটা আমাদের জীবন ধারণের একটা অন্যতম শর্তও হওয়া উচিৎ।

তাহলে তো এমন পরিস্থিতিতে সত্য আর মিথ্যার তফাৎ অবশ্যই আমাদের জানা দরকার। এটা ঠিকই অতি বড় নিরক্ষর মানুষেরাও এর ফারাকটা জানেন পুরোপুরি। কারণ এগুলো যেমন পুঁথিগত বিদ্যা থেকেও শেখা যায় তেমন সমাজের জীবন অভিযোজনও একটা মানুষকে আপনা আপনিই শিখিয়ে দেয় কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।

সত্য হলো এমন একটা উপলব্ধিগত দর্শন যেখানে কোনও বক্তব্য, ধারণা, ঘটনা, বিশ্বাসের মতো জীবন ভিত্তিক উপাদানগুলো পরিপূর্ণ রূপে বাস্তব নির্ভর ও ইতিবাচক ভিত্তিশীল। জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী এ’প্রসঙ্গে একটি সুন্দর প্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। সত্য সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘সত্য ক্ষয়হীন। এ যে চিরন্তনের। কারণ সত্য হলো বরাবরের জন্য সঠিক।’


তাহলে মিথ্যাটাই বা কি? মিথ্যা সেটাই যেটা হলো একটি কর্ম বা বক্তব্য পেশ করা যেখানে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হোক বা ভুলবশতঃ হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত হোক কিম্বা পরিকল্পিত অবস্থাতেই হোক তা আসলে কিন্তু সত্যের পূর্ণ পরিপন্থী। যার উদ্দেশ্য নিহিত থাকে ভুল বোঝানোয়, ক্ষতি সাধনে, ঠকানোয়, প্রতারণার মতো বহুবিধ নেতিবাসনায়। বিশ্ব বরেণ্য দার্শনিক প্লেটো একদা মিথ্যা বিষয়ক এক অপূর্ব উক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মিথ্যা শুধু নিজেদের খারাপ করে না সে তার নিজস্ব আত্মাকে সংক্রামিত করে ও ধ্বংস করে।’

নীতিমালা বা অনৈতিকতা নিয়ে আমরা অজস্র বিতর্ক করতেই পারি কিন্তু এটাই বাস্তবতা, সত্য ও মিথ্যা এই দুনিয়ার দুই মেরুর দ্বিমুখী বাসিন্দা তথাপি এরা আবার হরিহর আত্মা। আগুন ছাড়া যেমন ধোঁয়া উদ্গীরণ হতে পারে না তেমন সত্যের পরিপ্রেক্ষিত ছাড়া মিথ্যার স্ফূরণ হতে পারে না। অন্যদিকে মিথ্যার অন্ধকার বিদ্যমান বলেই সত্য তার পাশে বা মধ্যে এতো ঔজ্জ্বল। শুধু কি এই দুনিয়ায়? এই পারস্পরিক সহবস্থান তো মহাবিশ্বেও হাজির। ভয়ঙ্কর মিথ্যা আশার অশনি সম ব্ল্যাকহোল উপেক্ষা করে চিরসত্যের প্রতীক সূর্যের অস্তিত্বও তো আন্তঃনাক্ষত্রিক অন্দরমহলে আদি ও অনাদি এবং অনিঃশেষ।

এই চির পরম্পরার সহবস্থানের দুই লবকুশ সত্য ও মিথ্যার ব্যুৎপত্তিগত চরিত্র আমাদের সমাজ জীবনে কখনও কখনও গুলিয়ে যায়। সত্য কখনও মিথ্যার সংজ্ঞাকে আপন করে নেয়। আবার তেমন তেমন ক্ষেত্রে মিথ্যাই সত্যের রূপ ধারণ করে। এটাও এই জগৎ সংসারে প্রতিষ্ঠিত এক অপার মায়াজাল, যে সব সত্য সবসময় সবার সামনে প্রকাশ করা উচিৎ নয়। এটাও বাস্তব সব মিথ্যা সবাইকে বলাটা একইসঙ্গে সাংঘাতিক আর অমানবিক।

জার্মানির তান্ডবে ইহুদি নিধন নামক হলোকাস্টের সময় কি ব্যাপক হারে মিথ্যাচার প্রচার চালিয়ে ছিলেন হিটলারের মনপছন্দের ডান হাত গোয়েবলস। সেই সময়ে বিশ্বের একাংশ মানুষ তো তাঁর বক্তব্যকে বিশ্বাসও করেছিলেন। এ নিয়ে স্বয়ং গোয়েবলস বলেছিলেন, ‘আপনি যদি একটা মিথ্যা কথা বলতে শুরু করেন এবং তা বারেবারে নিয়ত বলতে থাকেন, তখন অবশ্যই কিছু মানুষ আপনার বক্তব্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করবেন।’ সুতরাং একটা মিথ্যাচার যে কতখানি সত্য হয়ে জনমানসে তার প্রভাব ফেলতে পারে তা কিন্তু গোয়েবলস সারা বিশ্বকে এক সময়ে চোখে আঙুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন। আবার সত্যও যে মিথ্যায় বশবর্তী হতে পারে তা সত্যবাদী যুধিষ্ঠির মহাভারতে সাক্ষী রেখে গেছেন। অশ্বত্থামা হত ইতি গজ, উপাখ্যানটি আমাদের কমবেশি সকলের জানা। স্রেফ ধাপ্পা নির্ভর বাচনভঙ্গি প্রয়োগ করে যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্যকে হাতি মৃত্যুর সত্যতাকে কি অদ্ভুত ভাবে চালিয়ে দিলেন অস্ত্রগুরুর পুত্র নিধনের মিথ্যা সমাচারে। তাইতো প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক জায়গায় লিখেছেন, ‘মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করিয়া দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্যে সত্য হইয়াও থাকিতে পারে মিথ্যা।’ অন্যদিকে স্বামী বিবেকানন্দ সত্য প্রসঙ্গে তীব্র দৃঢ়তা প্রকাশের সঙ্গে আমাদের শেখানোর চেষ্টা করে গেছেন, ‘সত্যকে হাজার আলাদা আলাদা উপায়ে বলা যেতে পারে, তারপরেও সব কিছু সত্যই থাকে। সত্যের জন্য সব কিছুকে ত্যাগ করা চলে, কিন্তু কোনও কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা চলে না।’

সত্য ও মিথ্যার এমন দ্বৈত উপাচারের অমিল উপকরণ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বহু উমপায় বিদ্যমান এমন বৈসাদৃশ্যগত নানান অধ্যায়। এহেন উদাহরণ তো আমরা হাসপাতাল প্রায়শই লক্ষ্য করি। কোনও হাসপাতালে যখন কোনও মৃত্যু পথযাত্রী রোগী চিকিৎসালয়ে ভর্তি হোন একবারে জীবনের শেষ মুহূর্তে, তখন চিকিৎসকও হয়তো নিশ্চিত হয়ে যান ওই রোগী আর বেশিক্ষণ বাঁচবেন না। অতি কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ ওষ্ঠাগত রোগী চিকিৎসককে সামনে পেয়ে অশক্ত শরীরে ক্ষীণ স্বরে পরম আর্তির সহকারে যদি আচমকা বলে ওঠেন, ‘ডাক্তারবাবু আমি বাঁচবো তো এ যাত্রায়?’ তখন কি বলবেন সেই চিকিৎসক?

ছোটবেলা থেকে শিখে আসা সদা সত্য কথা বলিবে অনুকরণে তিনি কি তবে বলবেন সেই রোগীকে, ‘না না, আপনি আর বাঁচবেন না অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে। আপনার মৃত্যু শুধু সময়ের অপেক্ষা।’ এটা কি কোনও ডাক্তার বলতে পারেন তাঁর চিকিৎসাধীন রোগীকে? হ্যাঁ এটা ঠিক রোগীর পরিজনদের তিনি এমন সম্ভবনার কথা জানিয়ে রাখতেই পারেন আলাদা ভাবে। কিন্তু তাই বলে কি এমন সত্য ভাষণ কোনও মুমুর্ষ রোগীকে কি কোনও ডাক্তারের পক্ষে বলাটা উচিৎ? সত্যের খাতিরে সেই বাল্যকাল থেকে শিখে আসা উচিতটা বাস্তবায়িত হয়ে উঠলে অবশ্যই সে সত্য নিশ্চিত পর্যায়ে পরিণত হবে একটা অমানবিকতার প্রতীকে। কিন্তু চিকিৎসককে তখন বলতে শোনা যায় একটা ছোট্ট মিথ্যা কথা, ‘চিকিৎসা তো চলছে। চিন্তা একদম করবেন না। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ সেই শুনে রোগীও একটু আশ্বস্ত হোন। কখনও মুচকি হাসার চেষ্টাও করেন প্রায় অন্তিম শয্যায় শুয়ে থেকে।

আসলে কিছু কিছু এমন পরিস্থিতির সামনে আমাদের জীবনকে নিয়ে এসে দাঁড় করায় যেখানে সত্য ও মিথ্যার অন্তর্নিহিত অর্থই বদলে যায়। সত্য সেখানে হয়ে ওঠে নির্মম অভিশাপে। আবার মিথ্যার ব্যঞ্জনা রূপান্তরিত হয়ে যায় ফুলের মতো হাস্যোজ্জ্বল এক সুন্দরতম বিন্যাসে।

এখানেই শুরু হয় এক সুগভীর চরিত্রের আত্মদ্বন্দ্ব। সত্যর ও মিথ্যার। কখন, কিভাবে, কাকে, কেন, কোথায় সত্যটা বা মিথ্যাটা বলা দরকার? যেখানে নৈতিকতার বিচ্যুতি তরান্বিত হবে না। সৌন্দর্যময় রুচির প্রকাশ অক্ষত থাকবে। অথচ দরকারে সত্য লুকায়িত থাকবে মিথ্যার অবয়বে। আবার মিথ্যা পরিহার হবে সত্যের ঔদার্যে। এমন শব্দময় সত্য ও মিথ্যার উথালপাথাল মিশেল সুনামি একদা যে মানুষের বিবেকের পরম স্পর্শে রূপান্তর ঘটিয়ে দেয় তা হয়তো আমাদের অন্তরাত্মার অবচেতন বা চেতনের সম্মতিতে। রচিত হয় নতুন সৃষ্টি গাঁথা। সত্যের ঔরসে মিথ্যের গর্ভে। সেই শব্দ ভ্রূণের নাম হোয়াইট লাই। বাংলায় যাকে বলা হয় সাদা মিথ্যা।

অতি সম্প্রতি ইউটিউবে একটা ভিডিও বেশ ট্রোল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এক অল্পবয়সী দম্পতিকে। দুজনেই বাসায় ছিলেন। আচমকা ভদ্রমহিলার মা ফোন করেন। ভদ্রমহিলা জানালেন তাঁরা রেস্টুরেন্টে এসে ডিনার খাচ্ছেন। ফোন শেষে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি অযথা মিথ্যে বললে কেন?’ স্ত্রী বলে ওঠেন, ‘তুমি শুনলে তো এটা শুনে মা কেমন খুশি হলো। আমি এটা মায়ের খুশির জন্য মিথ্যাটুকু বলেছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্যে নয়।’ এরপর স্ত্রী তাঁর স্বামীকে অনুরোধ করলেন, ‘প্লিজ তুমি এবার তোমার মাকে ফোন করে জানাও যে তোমার খুব মায়ের কথা এখন মনে পড়ছে।’

সেইমতো স্বামী বেচারা তাঁর মাকে ফোন করে জানালেন, ‘মা এমনি ফোন করলাম। এখন তোমাকে খুব মনে পড়ছে তাই।’ সেই শুনে মা একরাশ আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছেলেকে বললেন, ‘যাক তোর মনে পড়লো আমাকে। তোরা খুব ভালো থাকিস।’ ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। এরপর ভদ্রমহিলা তাঁর স্বামীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘এটা মিথ্যা হলেও একধরনের সুন্দর। যা নিরস সত্যের গভীরে ডুব দিলেও মিলবে না। কারও ভালোর জন্য, কাউকে ভালো রাখার জন্য মাঝে মধ্যে এমন মিথ্যা একটু বলতে হয়। এটাকে হোয়াইট লাই বা সাদা মিথ্যা বলে বুঝলে।’ এরপর স্বামী মন্তব্য করে ওঠেন, ‘তাই বলে আমরাও নিজেদের মধ্যেও মিথ্যা কথা বলবো?’ এর উত্তরে সেই সহধর্মিনী বলে ওঠেন, ‘মিথ্যা কথা তো আমি বলতে বলিনি। বলাটা শোভনীয়ও নয়। কিন্তু হোয়াইট লাই তো তুমিও বলো আমাকে হামেশা। তুমি যে আমাকে প্রায়শই বলো, তোমাকে কি সুন্দর দেখতে লাগছে, তুমি তো এও আমাকে বলে থাকো, তোমাকে দেখতে একদম মোটা লাগছে না। এগুলো কি তবে হোয়াইট লাই নয়?’

ভিডিওটা শেষ হতেই আরও একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। সে প্রায় বছর ষোল সতেরো আগেকার কথা। ঠিক দোলের পরের দিন সকালে দুর্গাপুরের পুলিশ প্রশাসনের এক বড় কর্তা একজন সাংবাদিককে ফোন করে একটি বিশেষ অনুরোধ জানান। ওই সাংবাদিক তখন এক সর্বভারতীয় বাংলা দৈনিকে কর্মরত। আসলে গভীর রাতে দুই নম্বর জাতীয় সড়কের উপর একটি গাড়ির সঙ্গে লরির ধাক্কায় দুর্ঘটনা স্থলেই মারা যান গাড়ির মধ্যে থাকা ছয়জন। মৃতদের পরিবারের আর কেউ বেঁচে ছিলেন না একমাত্র একটি ছোট মেয়ে বাদ দিয়ে। পরীক্ষার প্রস্তুতির পড়াশোনার কারণে বছর পনেরোর সেই মেয়েটি ঘরেই ছিল সেদিন। প্রবল বেগে গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন তাঁর পরিচয় এখানে নাই বা দিলাম।

কিন্তু তিনি যে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটিয়ে ছিলেন তা পুলিশি তদন্তে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। তবুও ওই পুলিশ আধিকারিক সাংবাদিকটিকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘আমরা সবাই জানি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর ফলে এই পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবুও রিকোয়েস্ট করবো, চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এটা দয়া করে লিখবেন না। স্বাভাবিক ভাবে গাড়ি ও লরির ধাক্কায় এমনটা ঘটেছে, সেটা খবরে লিখলে খুব ভালো হয়। আসলে পরিবারের সবাই তো মারা গেছেন। বাচ্চা একটা মেয়ে বেঁচে রয়েছে। আমরাও পুলিশের তরফ থেকে স্বাভাবিক দুর্ঘটনার রিপোর্ট তৈরি করছি। আপনারা আসল সত্যটা লিখলে এবং তা খবরে প্রকাশ হলে বীমা কোম্পানিগুলো ঝামেলা করবে ও মেয়েটি সমূহ বিপদে পড়বে। মেয়েটির সবই তো শেষ হয়ে গেছে। এইটুকু উপকার তো আমরা সবাই মিলে ওকে করতে পারি।’ পরদিন সকালে সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেই সংবাদ পরিবেশনে সুপ্ত অবস্থায় রয়ে গিয়েছিল একটি মাত্র হোয়াইট লাই। সদ্য পরিবার হারা একটি অনাথ কিশোরীর জীবন স্বার্থে। মানবিকতার অঘোম আকর্ষণে।

হোয়াইট লাই প্রয়োগ কখনই ক্ষতিসাধন করা বা প্ররোচিত করা প্রতারণার করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। অপরের মঙ্গলের জন্য, খুশি জন্য, উপকারের জন্য, সুখের জন্য, হিতের জন্য হোয়াইট লাই যে জীবন মাধুর্যে সত্যের অপরূপ মহিমা হিসেবেই আত্ম জাগরণ নিশ্চিত করে। তবে এই মতামতের বাইরেও হোয়াইট লাইয়ের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। অনেকের মতে, অর্ধ সত্য কথাও নাকি হোয়াইট লাইয়ের আরও এক বিকশিত পর্যায়। তবে অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানীর ধারণা, অর্ধ সত্য ও মিথ্যাচার একই কেন্দ্র বিন্দুর নানান পরিধি মাত্র। এসবই কয়লা খনির মতো চির অন্ধকার। তাই অর্ধ সত্য আর যাই হোক হোয়াইট লাই হতে পারে না। হোয়াইট লাইয়ের প্রধান শর্তই হলো, নির্মম নিষ্ঠুর সত্যের পরিবর্তে কিছুটা মিথ্যা পরিবেশন করা শুভ উদ্দেশ্য সহকারে। আসলে সততার সঙ্গে সততার মনষ্কে বিবেকের ডাকে মানবিক সততার প্রয়োজনে মিথ্যা বলাটাই যে প্রকৃতপক্ষে হোয়াইট লাই।

যতদূর জানা গেছে, ৯০০ সালে এই হোয়াইট লাই বিশ্বে প্রথম প্রচলিত হয়। অক্সফোর্ড ডিকশনারিতেও এই শব্দের সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় একটি চিঠির উপর ভিত্তি করে ১৫৬৭ সালে। সেই ঐতিহাসিক চিঠিটি রাল্ফ অ্যাডারলি লিখেছিলেন স্যার নিকোলাস ব্যাগনালকে।

বিশ্বনন্দিত কানাডিয়ান সুরকার স্টিভ কোভেন হোয়াইট লাই সম্পর্কে একটা সুন্দর উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারও জীবন বাঁচানোর জন্য যদি কোনও মিথ্যা বলে থাকো, তাহলেও কি বলবে এই মিথ্যা কথাটা বলা অন্যায় হয়েছিল? তোমার সাদা মিথ্যা বলার জন্য কেউ যদি বেঁচে থাকতে পারেন তাহলে আমি ভাবতেও পারি না যে ঈশ্বর তোমাকে মিথ্যুক মনে করবেন।’

পরিশেষে এটাতো বলা যেতেই পারে, হোয়াইট লাই হয়তো সত্য নয় পুরোপুরি। তো কি হয়েছে? হতেই পারে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কি ক্ষতি হলো তাতে? এই ভূবণ যজ্ঞে না হয় একটু ঘৃতাহুতি দিক না হোয়াইট লাই। কিছু মানুষ তো বাঁচবে তাতে। কিছু মানুষ তো হাসবে তাতে। কিছু মানুষ তো আনন্দ পাবে তাতে। কিছু মানুষ তো উপকৃত হবে তাতে। সাদা মিথ্যামেব জয়তে।