দিল্লির আফগান দূতাবাসে তালিবান প্রশাসনের বিদেশমন্ত্রী আমীর খান মুত্তাকির ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। তালিবানের এই আবদারে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ ধ্বজধারী মোদী বিরোধিতা করেননি। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর অবস্থান জানতে চাছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র একাংশ অবশ্য সাফাই দিয়েছে, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু করার নেই। আফগান দূতাবাস ওদেশের প্রশাসনের দখলে থাকায় সেখানে তালিবানের নিয়মকানুন চলে। ভারত সরকার সেখানে কিছু করতে পারে না। তাছাড়া এই ছোট্ট ঘটনার প্রতিবাদ না করাটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়। এই মুহূর্তে তালিবানদের বিরক্ত করলে ভারতের কূটনৈতিক ক্ষতি হতে পারে বলে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইে দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। আফগান দূতাবাসের অভ্যন্তরে সেদেশের নিয়মকানুন চললেও, ভারত কিংবা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। বিশেষ করে তা যদি স্থানীয় আইন ব্যবস্থা, মৌলিক অধিকার বা সংবিধান লঙ্ঘন না করে। অর্থাৎ মোদী সরকার চাইলে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে তালিবান প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিতে পারতো। তা না করে দায় এড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্র। তালিবান প্রশাসনের বিদেশমন্ত্রীকে তাঁদের দেশের রক্ষণশীল ও বৈষম্যমূলক আদর্শ ভারতেও লাগু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একে এক কথায় ‘নতিস্বীকার’ বলে।
আফগান দূতাবাসে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নিয়ে মোদী সরকারের নীরবতা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। তবে আরও হতাশাজনক এই যে, কেন্দ্রীয় সরকার তালিবানদের এই আবদারে প্রতিবাদ না করে প্রশয় জুগিয়েছে। উল্লেখযোগ্য, এমন ঘৃণ্য ঘটনা আন্তর্জাতিক কন্যা সন্তান দিবসের ঠিক আগের দিন ঘটেছে। তবুও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বিদেশমন্ত্রক। এই ধরনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নারী শক্তি স্লোগান কে আদতে ফাঁপা এবং উদ্দেশ্যহীন, তা এ ঘটনায় আরও একবার প্রমাণিত হলো।
মোদী সরকারের লজ্জাজনক নীরবতার নিন্দা করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উদ্দেশ করে সোশাল মিডিয়ায় কংগ্রেস নেতা লেখেন, ‘এমন এক প্রকাশ্য অধিবেশনে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার অনুমতি দিয়ে, দেশের মহিলারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না এমন ঘৃণ্য ধারণাকে আপনি প্রশয় দিয়েছেন। আমাদের দেশে মহিলাদের যে কোনও প্রতিষ্ঠানি ও কাজে অংশগ্রহণের সমান সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। এই ধরনের বৈষম্যমূলক ঘটনায় আপনার নীরবতা, ‘নারী শক্তি’ নিয়ে আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেওয়া স্লোগানের বাস্তবিক শূন্যতা প্রমাণ করে।’
ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি সংবাদকর্মী ইউনিয়ন। এক বার্তায় এই সংগঠন জানিয়েছে, ‘ভারত সরকার তালিবান প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই নীতি পরিবর্তনে হয়তো কিছু কৌশলগত কারণ আছে। তবে মহিলাদের অধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। মুত্তাকির সাংবাদিক সম্মেলনে মহিলাদের নিষিদ্ধ করার সরাসরি অনুমোদন না থাকলেও, মহিলাদের প্রতি তালিবানের বৈমষ্যমূলক আচরণের প্রতি কেন্দ্রের যে নীরব সম্মতি রয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। নারী স্বাধীনতা নিয়ে বিজেপির অবস্থান যদি কেবল নির্বাচনী স্লোগান না হয়ে থাকে, তবে দেশের অন্যতম দক্ষ মহিলা সাংবাদিকদের কেন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো, কেন্দ্রীয় সরকারকে তার জবাবদিহি করতে হবে।’
এই ঘটনার প্রতিবাদ না করে ভারত সরকার নিজের কূটনৈতিক ও নীতিগত অবস্থান নিয়ে আপস করেছে। এটা নিছক প্রক্রিয়া গত ভুল নয়, বরং বৈমষ্যহীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠায় ভারতের ঘোষিত দায়বদ্ধতার আত্মসমর্পণ। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং নারী অধিকারের অন্যতম রক্ষকহিসেবে যে ভারত একসময় গর্ব করতো, সেখানে এমন এক ঘটনা খুবই হতাশাজনক এবং রাজনৈতিকভাবে অদূরদর্শিতার প্রমাণ।