নয়াদিল্লির রক্তচাপ ও উদ্বেগ বাড়িয়ে পাকিস্তান করাচি বন্দরকে বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহারের অনুমতি দিল বাংলাদেশের অগ্রবর্তী সরকারকে। এর ফলে চিন থেকে পণ্য এনে করাচি বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো যাবে। সেই মতো, বাংলাদেশের পণ্য করাচি বন্দর মারফত চিনে পাঠানো যাবে। পাকিস্তান সরকার বলেছে, এর ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক সুবিধা হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ আমাদের ‘ছোটভাই’, সুতরাং ওই দেশকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমাদের সাহায্য করা উচিত। তাৎপর্যভাবে, এই নতুন প্রস্তুতিটি চিনের মহা মহাযোগ নেমে প্রকল্প চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের সঙ্গে যুক্ত করে দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পটি নিয়ে ভারত সরকার অনেকদিন হল আপত্তি জানিয়ে আসছে। কারণ মোদী সরকার মনে করে এই অর্থনৈতিক করিডর যাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর দিয়ে। তাই বিষয়টি নিয়ে পাক সরকার চুপ করে আছে। এ ব্যাপারে কোনও আলোচনার পথও খোলা রাখছে না পাকিস্তান সরকার। আবার ভারত বিষয়টি নিয়ে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের ঘোরতর বিরোধী। ভারত একের অধিকবার আপত্তি জানিয়েছে এ ব্যাপারে।
কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান ভারতের অভিযোগ নিয়ে কোনও গুরুত্ব আরোপ করছে, গত এক বছরে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, অপারেশন সিন্দুরের পর সীমান্তে অশান্তির বাতাবরণ অব্যাহত। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সীমান্তে বিশেষভাবে সক্রিয়। সেনাদের নানা রণকৌশল শেখানো হচ্ছে। অবস্থা এমনই যে যে কোনও সময় ভারত পাকিস্তানের মধ্যে আবারও সংঘাত শুরু হতে পারে। ভারতও প্রস্তুত যে কোনও অবস্থার মোকাবিলা করতে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যেভাবে বন্ধুত্বের বন্ধন দিন দিন দৃঢ় করছে, তা নিয়ে ভারত চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। করাচি বন্দর বাংলাদেশ পাক সরকারের অনুমতির প্রেক্ষিতে ব্যবহার করবে তা ভারতের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যেদিকে গড়াচ্ছে তা ভারতের পক্ষে কোনওভাবেই স্বস্তিদায়ক নয়। নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিব্রত। এখন নানা কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আগের সেই মধুর সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা ভারত করলেও বাংলাদেশের কোনও সাড়া নেই।
গত নভেম্বর মাসে করাচি বন্দর থেকে পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছয়। এটি ছিল পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পর পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামগ্রিক যোগাযোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই জাহাজে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাদের ব্যবহারের জন্য নানা অস্ত্রশস্ত্রও ছিল। এই জাহাজে তল্লাশি চালাতে দেওয়া হয়নি বেশ কিছুদিন। তারপর আরও একটি জাহাজ করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রামে আসে। বলা হয়েছে, তাতেও নাকি বিভিন্ন পণ্য ছিল। ছিল নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য।
যে পাকিস্তান বাংলাদ্শের মুক্তিযুদ্ধকালে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে নিকেশ করে, মেয়েদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সখ্যতা বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক, কবি-সাহিত্যিকরা নিন্দা করেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তাতে কোনও গুরুত্ব দেননি! এখন পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ ছোট ভাই হয়ে দাঁড়াল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ বাঙালি হত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছিলেন। কিন্তু ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, এখন বাংলাদেশের বড় বন্ধু হল পাকিস্তান ও চিন। চিন ও পাকিস্তান উভয় দেশই বাংলাদেশকে নানাভাবে সাহায্য করছে— তার মধ্যে সমরাস্ত্র আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারতের সহ্গে একটি নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিরাজ করছিল। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল মধুর। কিন্তু বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের পর, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের একটি নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সেই বন্ধুত্ব দিনদিন বাড়ছে। আর চিন তো বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই এ দেশে এসে তার আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে নানাভাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য চিন যে শুধু লগ্নি করছে তা নয়, সমরাস্ত্র দিয়েও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার চেষ্টায় রত। ভারত বাংলাদেশের গতিবিধি লক্ষ্য করছে।