বাড়ছে বেকারবাহিনী

আগামী মাসে অর্থাৎ নভেম্বরেই ভোট নেওয়া হবে বিহারে। ওই হিন্দিভাষী রাজ্যে এখন নীতীশ কুমারের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার চলছে। বিহারের নির্বাচন মিটিতে না মিটতেই চলে আসবে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কেরল ও তামিলনাড়ুর সরকার তৈরির ভোট। অর্থাৎ আগামী বছরের মো মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলির মরণ-বাঁচন সংগ্রাম চলবে।

মোদী সরকার যখনই বিপাকে পড়ে তখনই আঁকড়ে ধরে কিছু চমকের রাজনীতি। যেমন পিঠ বাঁচাতে এখন চলছে জিএসটি সংস্কারের বাগাড়ম্বর। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঘোষণা অনুযায়ী এটা নাকি দেশবাসীকে তাঁর দীপাবলির উপহার ২২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশবাসীকে ‘সাশ্রয় উৎসবে’ মেতে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে টালমাটাল অর্থনীতির অন্তঃসারশূন্যতা ঢাকা দিতে তিনি স্বদেশি পণ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছেন। এটা আবার, আরএসএস-কে খুশি করার জন্য। বিশ্বায়নের যুগে এই হুজুগের প্রাসঙ্গিকতা কতটা অবশিষ্ট রয়েছে, সেই কথা ভুলে এই মতোই অর্থনীতির রোডম্যাপ বানাতে চলেছে সরকারের প্রাণভোমরা আরএসএস বা সঙ্ঘ। এই কৌশল ভোটের বাজার দখলে কতটা সফল হবে তা জানার জন্য আমাদের আগামী নির্বাচনগুলির ফলাফলের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু কাজের বাজারের মন্দা কাটাতে এই দাওয়াই যে কোনও কাজে আসবে না চা এখনই হলফ করে বলে দেওয়া যায়। যে বেকারদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখল করেছিলেন, তাঁদের কল্যাণচিন্তা এখন আর তাঁকে করতে দেখা যায় না। কোটি কোটি যুবক-যুবতীর বিশাল বেকারবাহিনী নরেন্দ্র মোদীর ছলনায় আর কতদিন ভুলে থাকবেন।

বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি, কারখানা, অফিসে যেসব শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করেন তাঁরা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশনের (ইপিএফও) সদস্য। এই তহবিলে তাঁদের নামে প্রতিমাসে কিছু অর্থ সঞ্চয় হয়। সদস্যদের বেতন থেকে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয় এবং নিয়োগ কর্তার তরফ থেকেও সমপরিমাণ টাকা ওই তহবিলে জমা পড়ে। সদস্যরা অবসর গ্রহণের পর সুদসহ এককালীন মোটা টাকা ফেরত পান এবং ওই সঙ্গে প্রতিমাসে ন্যূনতম এক হাজার টাকা করে পেনশনও পেতে থাকেন। তাই শ্রমের বাজারে ইপিএফও সদস্য সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই তহবিলের সদস্য সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির বিচার-বিশ্লেষণ করা সহজ হয়। সেই কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের (ইপিএফও) গ্রাহক সংখ্যা মাত্র একমাসের ব্যবধানে কমে গিয়েছে প্রায় এক লক্ষ। ২২ লক্ষ থেকে কমে গিয়ে তা হয়েছে ২১ লক্ষ।


সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের ছবিটা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর, রেল, ব্যাঙ্ক ও বিমাসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে কর্মী নিয়োগ বাড়ছে না। জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সমানুপাতে কর্মচারী নিয়োগ বাড়ছে না, বরং বহু ক্ষেত্রেই তা কমে যাচ্ছে। গত দু’দশকে শূন্যপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার একেবারে নিশ্চুপ। দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ও অধিগৃহীত সংস্থাগুলির ছবিটাও একইরকম। সব মিলিয়ে দেশের বৃহত্তম বাহিনী এখন বেকারবাহিনী। আর এই পরিস্থিতিতে সামনে এলো কেন্দ্রের শ্রমমন্ত্রকের আওতাধীন ইপিএফও-র মন খারাপ করা পে-রোল ডেটা। স্বভাবতই উদ্বেগ বেড়েছে মোদী সরকারের। কারণ উৎসবের মরশুমে ইপিএফও-তে গ্রাহক অন্তর্ভুক্তি কমে যাওয়ার অর্থ, বেসরকারি সংস্থায় চাকরির আকাল।

ইপিএফও-তে গ্রাহক অন্তর্ভূক্তি কমে যাওয়ায় চিন্তা বেড়েছে মোদী সরকারের। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক সম্প্রতি প্রকাশ করেছে গত জুলাই মাসের ভিত্তিতে ইপিএফও পে-রোল ডেটা। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই মাসে সারা দেশে ইপিএফও-তে প্রায় ২১ লক্ষ ৪ হাজার গ্রাহক অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নতুন গ্রাহকের পাশাপাশি রি-জয়নিং শ্রমিক-কর্মচারীরা (অর্থাৎ একবার ইপিএফও-র তালিকা থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুনরায় সামিাজিক সুরক্ষা পরিষেবার অধীনস্ত হয়েছেন তাঁরা। জুলাই মাসের পর এক মাসের ব্যবধানে ইপিএফও-তে গ্রাহক অন্তর্ভূক্তির সংখ্যা সারা দেশে প্রায় ৮৫ হাজার কমে গিয়েছে। নতুন গ্রাহক অন্তর্ভূক্তিও আশাব্যঞ্জক নয়। গত জুন মাসে ইপিএফও-তে নতুন গ্রাহক নাম লিখিয়েছিলেন ১০ লক্ষ ৬২ হাজার। জুলাই মাসে তা কমে ৯ লক্ষ ৭৯ হাজারে নেমে এসেছে। এক মাসের ব্যবধানে এই কেন্দ্রীয় সংগঠনের হ্রাসপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। ২২ লক্ষ থেকে কমে হয়েছে ২১ লক্ষ। এই সদস্য সংখ্যা হ্রাসের বিচারেই বলা চলে দেশে বেকারবাহিনী বেড়েই চলেছে। ছল-চাতুরি করে এঁদের আর বেশিদিন ভুলিয়ে রাখা যাবে না।