কোন রাজনীতি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। (File Photo: PIB)

গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় আসা মানে রাজ্য রাজনীতি চঞ্চল হয়ে ওঠা। এ রাজ্যে চলে আসার প্রাক্কালে তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছ থেকে এখানকার আইনশৃঙ্খলা সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জেনেছেন। রাজ্যপাল রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে চলে আসার পর থেকেই বর্তমান রাজ্য সরকারের সমালােচনায় মুখর। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সবসময়ই সরব– কারণে অকারণে তিনি সরকাবের নানা বিষয়ে ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখেন। ভালােটা তার চোখে কমই পড়ে। এমন ব্যস্তবাগীশ রাজ্যপাল এ রাজ্যে খুব কমই এসেছেন।

অর্থমন্ত্রী প্রথমেই পশ্চিমাঞ্চলের বাঁকুড়া জেলাকে নিশানা করে সেখানেই পা রাখলেন। বলে রাখা ভালাে, গত লােকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া এই দুটি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় বিজেপি নির্বাচনে ভালাে ফল করেছে। উত্তরবঙ্গেও এই দলের সাফল্য শাসক তৃণমূলকে অবাক করেছিল। সুতরাং গৃহমন্ত্রীর বাঁকুড়ায় এসে দলের হয়ে প্রচার করা, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে, দল ক্ষমতায় এলে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে কী কী কাজ করা হবে, তার কথা বলে জেলাবাসীর মন ভেজালেন।

তা ছাড়া দলের জেলাস্তরের নেতাদের সঙ্গেও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরলেন। পশ্চিমাঞ্চল বিজেপি’র শক্ত ঘাঁটি। নির্বাচনের ফল ভালাে হওয়াতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এখানে যাতে দলের ফলাফল আরও ভালাে হয়, তার জন্য স্থানীয় নেতাদের দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে এলেন।


বুধবার রাতে অমিত শাহ শহরে পা রেখে, রাত কাটালেন নিউটাউনের একটি অভিজাত হােটেলে। ওই হােটেলে বিত্তবানেরাই যান। কিন্তু বাঁকুড়ায় দলীয় কাজ সেরে তিনি মধ্যাহ্ন ভােজ সারলেন একটি আদিবাসী পরিবারে। তবে মন্ত্রীর ভােজ নিয়ে এই পরিবারে তিন-চার দিন আগে থেকেই সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লােকেরাও অতি সাধারণ এক আদিবাসী পরিবারে তিনি মধ্যাহ্ন ভােজ সারনে এই কথা চাউর হয়ে গেলে তাদের মনে কৌতুহল ছিল সীমাহীন।

রাজ্যের বিরােধী নেতাদের কথায় এই আদিবাসী পরিবারে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভােজ সারা নিছক চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই চমক দিতে তিনি ওস্তাদ। সাধারণ এক আদিবাসীর গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করে বােঝাতে চাইলেন, তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার জীবন নির্বাহ আদতে সাধারণ নয় তা বিলাসবহুল।

রাজনীতিতে এই ভােজের চমক তিনি শুধু এখানেই দিলেন না– এর আগে উত্তরবঙ্গে নকশালবাড়ি অঞ্চলে এসে একটি দরিদ্র পরিবারে মধ্যাহ্নভােজ সেরেছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে আহার গ্রহণ করেছিলেন। তখন অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তার এই মধ্যাহ্নভােজ নিয়ে ওখানেও দারুণ কৌতুহল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।

কিন্তু এই ভােজ নাটকের পরবর্তী অধ্যায় চমকে ভরা। ভােজপর্বের পরদিনই, ওই পরিবারের সদস্যরা তৃণমূলে যােগদান করেন। ঘটনাটি এমন চমক সৃষ্টি করে, যা নিয়ে বিজেপি নেতারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। তাদের অভিযােগ ছিল, তৃণমুলের স্থানীয় নেতারা ভয় দেখিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে ওই পরিবারের সদস্যদের তৃণমূলে যােগ দিতে বাধ্য করেছিলেন। এই নিয়ে রাজনৈতিক টানাপােড়েন চলে দীর্ঘদিন।

সফরের শেষদিন অর্থাৎ আজ অমিত শাহের রাজারহাটে গৌরাঙ্গনগরে এক মতুয়া উদ্বাস্তু পরিবারে তার মধ্যাহ্নভােজে অংশ নেওয়ার কথা। মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার জন্য বিজেপি অনেক দিন থেকেই সক্রিয়। আবার তৃণমূলও এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভালােমন্দের সঙ্গে জড়িত। তাদের উন্নততর জীবনযাপনের জন্য নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে এই সরকার।

এটাই রাজনীতি। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে এসে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নতির জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা ঘােষণা করেন। একটা সময় খেদের সঙ্গে বলেন, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে এত করলাম, কিন্তু উত্তরবঙ্গ আমাদের কী দিল?’ জঙ্গলমহল নিয়েও সেই একই আপসােস মুখ্যমন্ত্রীর। জঙ্গলমহলে ঢেলে উন্নয়ন করেছে তার সরকার। সুযােগ পেলেই তিনি জঙ্গলমহলে ছুটে আসেন, এখানকার মানুষের কোনও সমস্যা থাকলে, তার সমাধানে সর্বশক্তি নিয়ােগ করেন। তিনি ভালবাসেন জঙ্গলমহল। তাই তার প্রতি তার এত টান। কিন্তু ভােটের ফলাফল জঙ্গলমহলও তাকে আঘাত দিয়েছে। বিজেপির প্রতি সমর্থন বাড়ায় তিনি অবাক।