তিনদিনের মন্ত্রী

মেওয়ালাল চৌধুরী (File Photo: IANS)

বিহারে শপথ নেওয়ার তিন দিনের মধ্যে পূর্ব দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ করতে হল শিক্ষামন্ত্রী মেওয়ালাল চৌধুরীকে। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জেডি (ইউ) দলের অন্যতম সদস্য মেওয়ালালের বিরুদ্ধে ভাগলপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকার সময়ে বেআইনি নিয়ােগের মামলা চলছে।

মেওয়ালালের বিরুদ্ধে মামলা চালানাের অনুমতি স্বয়ং রাজ্যপাল দিয়েছেন এবং পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করে, ফলে ২০১৭ সালে তাঁকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট এপর্যন্ত দাখিল করা হয়নি। কারণ জেডি (ইউ) প্রধান নীতীশ কুমার ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর আরও আশ্চর্যের কথা বিহার বিধানসভায় কয়েকজন নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে মেওয়ালালও তাঁর নির্বাচনী ফর্মে জানিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই। 

আরও মজার কথা হল অ্যাসােসিয়েশন অব ডেমােক্রেটিক রাইটস এক সমীক্ষা রিপাের্টে জানিয়েছে, সদ্য নির্বাচিত বিধানসভা সদস্যদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, ৫১ শতাংশের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ইত্যাদি মারাত্মক অভিযােগ রয়েছে।


মেওয়ালালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযােগ নথিভুক্ত হয়ে থাকলে নির্বাচনী ঘােষণাপত্রে ইচ্ছাকৃত ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। এক্ষেত্রে বিগত তিন বছরে যেহেতু মেওয়ালালের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দাখিল করা হয়নি, তাই অ্যাপেক্স কোর্ট জানিয়েছে অভিযােগের পরেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দাখিল না হওয়ায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। 

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আদালত পুলিশ কেন চার্জশিট দাখিল করল না সেবিষয়ে কোনও জবাবদিহি চাইল না।

নীতিশ কুমারের জেডি (ইউ) দলের সদস্য মেওয়ালাল ও অন্যান্য বিজয়ী সদস্যদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। দলের অর্ধেকের কিছু কম সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং এক চতুর্থাংশ সদস্য মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। 

একইভাবে আরজেডি দলের তিন চতুর্থাংশ বিজয়ী সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। এদের মধ্যে ষাট শতাংশ মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত। অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচিত দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি অপরাধের অভিযােগ রয়েছে। অর্ধেকের বিরুদ্ধে অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযােগ রয়েছে। 

কিন্তু বিজেপি তার এনডিএ শরিক জেডি (ইউ)-এর সদস্য মেওয়ালালকে বাতিল করার প্রথম প্রচেষ্টায় সফল হয়ে নীতীশ কুমারকে চাপে রাখার চেষ্টা শুরু হয়েছে। যদিও মেওয়ালালের অপরাধ এতদিন ঠাণ্ডাঘরে কেন পচেছে তার জবাব কিন্তু নীতীশ প্রশাসন দেয়নি। 

বিরােধী আরজেডি শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করার অব্যবহিতভাবে পদত্যাগ পত্র দাখিল ও রাজ্যপাল কর্তৃক তা গৃহীত হওয়ার ঘটনার পিছনে যে বিজেপির মদত রয়েছে সেটা রাজনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট। ভবিষ্যতে নীতীশ কুমারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কোন পথে বাহিত হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।