স্বপনকুমার মণ্ডল
উনিশ শতকেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী প্রকাশিত হয়। যোগেন্দ্রনাথ বসুর ‘মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত’ (১৩০০) প্রকাশের পরেই জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরের বছরেই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বিশ শতকেও বইটির জনপ্রিয়তা অব্যাবত থাকে। ১৯২০-তে নগেন্দ্রনাথ সোমের বহুল তথ্যসমৃদ্ধ মধুসূদনের জীবনী ‘মধুস্মৃতি’ প্রকাশের পরও তার সমাদর লক্ষণীয়। আবার প্রমথনাথ বিশী মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনভাষ্য রচনা করেন তাঁর ‘মাইকেল মদুসূদন’ (১৯৪১)। বইটির ভূমিকায় লেখক তথ্যের ক্ষেত্রে প্রথম দুটি মধুসূদন জীবনীর ঋণের সঙ্গে শশাঙ্কমোহন সেনের সুলিখিত ‘মধুসূদনের অন্তর্জীবন’ বইটির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। বিশ শতকে আরও একটি উল্লেখযোগ্য মধুসূদন জীবনী সুরেশচন্দ্র মৈত্রের ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত : জীবন ও সাহিত্য’ (মাঘ ১৩৭৭)। তাছাড়া উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে বহুমুখী প্রতিভাদীপ্ত মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে চর্চার পরিসর ক্রমশ বহুধাবিস্তৃতি লাভ করে। আবার তাঁকে নিয়ে জীবনীও লেখা হয়েছে অসংখ্য।
শুধু তাই নয়, সেই সব জীবনীর মধ্যে মাইকেলের জীবনের যথার্থ পরিচয়ের অভাববোধও নানাভাবে প্রকট হয়ে ছিল যেন কারও প্রতীক্ষায় তার অবসান ঘটবে। সুরেশচন্দ্র মৈত্র তাঁর মাইকেল-জীবনীর ভূমিকাতেও সেই তথ্যের অভাবের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘মধু-জীবনীর অনেক তথ্যই সন্দেহমুক্ত নয়।’ অন্যদিকে সেই জীবনীগুলি স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টির আধারেই স্রষ্টার আলোকিত জীবন নানাভাবেই প্রকাশমুখর। অথচ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিনিবদ্ধ থাকায় সৃষ্টার পরিচয় আড়ালে থাকায় তার মূল্যায়নেও ফাঁক ও ফাঁকি থেকে যায়। সেদিক থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের আধারে তাঁর জীবনীর অভাববোধের আঁধারেই গোলাম মুরশিদের ইতিহাস সৃষ্টিকারী গবেষণার আলো জ্বলে ওঠে। সেক্ষেত্রে মধুসূদনকে নিয়ে নতুন করে জীবনী লেখার ভাবনা কীভাবে তাঁকে প্রাণিত করেছিল, তা নিয়ে পাঠকের কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। সেকথাও তিনি অকপটে ব্যক্ত করেছেন। ‘বইয়ের দেশ’-এর সাক্ষাৎকারে তিনি তার হদিশ দিয়েছেন। ১৯৮৬-তে শিবনারায়ণ রায়ের কাছেই সে বিষয়ে গবেষণার কথা জানতে পারেন। তখন উইলিয়াম রাদিচে তপন রায়চৌধুরীর কাছে মধুসূদনের সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছেন বলে গোলাম মুরশিদ তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। অন্যদিকে শিবনারায়ণ রায় লন্ডনে গোলাম মুরশিদের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণের সময় উইলিয়াম রাদিচের মধুসূদনের সাহিত্য নিয়ে গবেষণার বিষয় জানিয়ে তাঁকে মধুসূদনের জীবনী নিয়ে গবেষণার পরামর্শ দেন। পরামর্শটি তাঁর মনে ধরে এবং অচিরেই তার তত্থ্যানুসন্ধান তিনি শুরু করেন। পরাধীন ভারতেই মধুসূদনের জীবন গড়ে ওঠে। সেখানে তাঁর জীবনের সঙ্গে লণ্ডন থেকে স্কটল্যাণ্ডের রাজধানী এডিনবরা, ফ্রান্সের ভার্সাই সর্বত্র সংযোগ ঘটে। গোলাম মুরশিদ তাঁর গবেষক অনুসন্ধিৎসায় ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গিয়েই ‘মধুসূদনের বিবাহ এবং সন্তানদের’ নিয়ে একেবারে নতুন তথ্য (যা আগের জীবনীগুলিতে নেই) পেয়ে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এভাবে জাহাজের যাত্রী তালিকা থেকে অক্সফোর্ডের লাইব্রেরি, ফ্রান্সের ভার্সাই, এডিনবরা নানা জায়গা থেকে নতুন নতুন তথ্যের সহযোগে গোলাম মুরশিদের মাইকেল জীবনী লেখার প্রয়াস জারি থাকে। অন্যদিকে যশোর থেকে কলকাতা, মাদ্রাজ প্রভৃতি স্থানেও মাইকেল জীবনকে নতুন করে খুঁজে ফিরেছেন তিনি। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলার পর গবেষণাটি শেষ হয় ১৯৯৪-এ।
‘দেশ’ পত্রিকায় গবেষণালব্ধ মাইকেলের জীবনীটি ‘আশার ছলনে ভুলি’ নামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশকালেই গোলাম মুরশিদের নামডাক ছড়িয়ে পড়ে, সমালোচকমহলে তাঁর গবেষক প্রতিভার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শুধু গবেষকের তথ্যের গুণই ছিল না, সবচেয়ে জোরালো তাঁর লেখার সৌরভ। নতুন তথ্যের চমক অচিরেই নিঃস্ব হয়ে পড়ে। লেখার মধ্যেই তার আবেদন চিরন্তনতা লাভ করে। সেদিক থেকে গোলাম মুরশিদের মাইকেল মধুসূদনের জীবনীটি তথ্যসমৃদ্ধ ও যুক্তিনিষ্ঠই শুধু নয়, জীবনকে দেখানোর অভিনব প্রয়াসও বর্তমান। আগের মধুসূদনের জীবনীগুলির মধ্যে তথ্যের অভাবের চেয়ে তাঁর জীবনের পরিচয়টিই ছিল মেঘে ঢাকা তারা। রক্তমাংসের সজীবতায় তাঁকে খুঁজে পাওয়ার অভাববোধ সেখানে তীব্র হয়ে ওঠে। প্রমথনাথ বিশীই সর্বপ্রথম সেদিকে দৃষ্টি দিতে চেয়েছিলেন। সেখানে যোগীন্দ্রনাথ বসুর লেখা ‘লোকপ্রিয়’ জীবনীটির মূল্যায়নে বিধর্মী মাইকেল মধূসূদন দত্তের সাফল্য-ব্যর্থতার একদেশদর্শিতার পরিচয় অত্যন্ত প্রকট। অন্যদিকে নগেন্দ্রনাথ সোমের লেখা জীবনীতে তথ্যের প্রাচুর্যে এমনই যে তাতে দশটি জীবনী লেখা যায় বলে প্রমথনাথ বিশীর মনে হয়ে হয়েছিল। সেদিক থেকে তাঁর ‘মাইকেল মধুসূদন’-এর লক্ষ্যটি তিনি ভূমিকায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন : ‘এই গ্রন্থে মধুসূদন ব্যক্তিটি কেমন ছিলেন— তাহাই প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিয়াছি।‘ এজন্য মধুসূদনের আগের জীবনীগুলির মধ্যে প্রমথনাথ বিশীর লেখা জীবনীটিই গোলাম মুরশিদের ভালো লেগেছিল।
প্রসঙ্গত, প্রমথনাথ মধুসূদনের পুরো জীবনীও লেখেননি। মধুসূদনের বাল্যকালকে বাদ রেখেছেন সেখানে। আবার নতুন কোনও তথ্যের মাধ্যমে নয়, আগের জীবনীগুলির তথ্যের মধ্যেই নতুন দৃষ্টিতে মধুসূদনের জীবনটি দেখিয়েছেন প্রমথনাথ। অন্যদিকে গোলাম মুরশিদ নতুন তথ্যের আলোকে মধুসূদনের জীবনকে অভিনব রূপে ও ভাবে প্রকাশ করেছেন। ফলের পরিচয়ে গাছের পরিচিতির গতানুগিতক ছকবন্দি চেতনা জীবনী লেখার ক্ষেত্রেও প্রচলিত। সেখানে গাছের গুণপনা ফলের প্রাচুর্য ও তার গুণের সৌরভে বিস্তার লাভ করে। শিল্পী-সাহিত্যিকের কেত্রেও সৃষ্টির পরিচয়ের আধারেই স্রষ্টার জীবনী লেখা হয়। তাতে জীবনীর বিশালত্বের অতিলৌকিকতা থেকে অলৌলিকতা বিস্তার করলেও স্রষ্টার রক্তমাংসের মানবিক জীবনকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, স্রষ্টার জীবনের আধারেই যে তাঁর সৃষ্টির প্রাচুর্য, বৈচিত্র ও অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় আন্তরিক হয়ে ওঠে, তা অজানা থেকে যায়। গোলাম মুরশিদ সেক্ষেত্রে স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য একাত্মকে নিবিড় করে মধুসূদনের জীবনীটি লিখেছেন।
সেখানে ‘আশার ছলনে ভুলি’তে মধুসূদনের পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক রচনার সঙ্গে তাঁর জীবনের যোগসূত্রকেই নিবিড় ভাবে তুলে ধরা হয়নি, পৌরাণিক চরিত্রের মধ্যেও রক্তমাংসের মাইকেল মধুসূদনের একাত্মতার সংযোগকেও নিবিড় করে তোলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগের জীবনীগুলির জনশ্রুতি বা অনুমান-নির্ভর তথ্য ও অতিরঞ্জিত বা কিংবদন্তীমূলক বিষয়গুলি গোলাম মুরশিদ যেমন সচেতনভাবে বর্জন করেছেন, তেমনই তথ্যানুসন্ধান করে অনালোকিত তথ্যের মাধ্যমে সত্যপ্রকাশের প্রতি সযত্ন প্রয়াসী হয়েছেন। সেখানে তাঁর নির্মোহ স্বচ্ছ দৃষ্টি, নিরাসক্ত প্রকৃতি ও নিরাবেগ তথ্য ও যুক্তিনিষ্ট ভাষা নির্মেদ গদ্যের চলনে সরসতার অভাববোধেও নির্ভার ও উপাদেয় হয়ে উঠেছে। সত্যই সবচেয়ে সুন্দরের নীতির প্রতিই গবেষকের অবিচল নিষ্ঠাই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি মনে হয়। সেক্ষেত্রে তাঁর নিরন্তর গবেষণাই তাঁর সহায়ক হয়ে উঠেছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ইংরেজিতে তুখড় ছিলেন, বা, অত্যধিক বনেদি ঘরে ও বিলাস-ব্যসনে মধুসূদনের শৈশব কেটেছে, এ সবের যে কোনও ভিত্তি নেই, তা গোলাম মুরশিদ গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে জীবনীটি লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর স্বকীয় চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য প্রভাব সক্রিয় হয়েছিল। সেখানে পাশ্চাত্যে জীবনী লেখার হদিশে ‘প্রিন্সিপিয়া বায়োগ্রাফিয়া’ বইটির কথা গোলাম মুরশিদ তাঁর সাক্ষাৎকারে ব্যক্ত করেছেন। বইটির জীবনী লেখার রীতিনীতি তাঁকে অভিনব জীবনীটি লেখার দিশা দিয়েছে। আসলে পাশ্চাত্যে ব্যক্তির প্রাধান্যে জীবনকে দেখার প্রয়াস বর্তমান। সময়ের পালাবদলে সেখানে ব্যক্তির ভূমিকাই অধিক গুরুত্ব লাভ করে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের আলোতেই তার বনেদি ভূমিকা বিস্তার লাভ করে। সমাজের বিবর্তনে বা ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে অথবা সময়ের চাহিদায় বা দাবির আলোকে ব্যক্তির বিস্তারকে তুলে ধরতে গিয়ে ব্যক্তিত্বের রক্তমাংসের সজীবতার যোগসূত্রটি যথাযথ ভাবে উঠে আসে না বা মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না ।
সেখানে গোলাম মুরশিদ পাশ্চাত্য রীতিতে মাইকেল মধুসূদনের ব্যক্তিজীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে তাঁর জীবনীটি লিখেছেন। তাঁর সমকালীন ইতিহাস বা সৃষ্টিকর্মের বিস্তৃত পরিচয়ের চেয়ে তাঁকেই সমূলে ফুলেফলে দেখানোর প্রতিই গোলাম মুরশিদের লক্ষ্য স্থির হয়ে ছিল । এজন্য মধুসূদনের যাপিত জীবনকে তুলে ধরতে তাঁর জীবনের অজানা তত্থ্যাদিই শুধুমাত্র তাঁর কাছে প্রাধান্য লাভ করেনি, মাইকেল মধুসূদন দত্তের উত্তরণের সোপানে কীভাবে তাঁর সৃষ্টি-কর্ম ও আত্মিক যোগসূত্রের পরিচয় মূর্ত থেকে মূর্তি হয়ে উঠেছে, তা-ই সেক্ষেত্রে লক্ষ্যভেদী হয়ে উঠেছে । এজন্য পাশ্চাত্য রীতিতে জীবনের আধারে জীবনী রচনায় মাইকেল মধুসূদনের জীবনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গাছের সঙ্গে ফলের যোগই প্রাধান্য দিয়েছেন গোলাম মুরশিদ। মধুসূদনের মাদ্রাজের জীবন তখনও অধরা মাধুরী এবং এখনও। তাঁর দাম্পত্য জীবন ও বিচ্ছেদের কারণ অনুমাননির্ভরের বিষয় হয়ে ছিল । মাইকেল নিকট আত্মীয় বলতে কেউ তখন বেঁচে ছিলেন না। মাইকেল ও হেনরিয়েটার মৃত্যুর সময় তাঁদের তিনটি সন্তান অত্যন্ত ছোট ছিল। তুলনায় মাইকেল-রেবেকার সন্তান বড় থাকা সত্ত্বেও মধুসূদনের কোনও জীবনীকার গোলাম মুরশিদের আগে যোগাযোগ করেননি। সেখানে জীবনীকারদের তথ্যের উৎস ছিল মধুসূদনের বন্ধুদের অনুমাননির্ভর ঘটনাপঞ্জি। সেই অজানা খনির পরশমণির অনেকটাই গোলাম মুরশিদ গবেষণা করে বের করেন নানা যোগসূত্রে। চার্চের কাগজপত্র থেকে মধুসূদনের পরিবারের পরিচয়, জাহাজের যাত্রী তালিকা থেকে তাঁর চলাফেরা, অক্সর্ফোডের একটি লাইব্রেরি থেকে বিশপস কলেজের নানাবিধ তথ্যই শুধু নয়, মাইকেলের পরীক্ষার খাতাও পেয়েছিলেন গোলাম মুরশিদ। সত্য যাচাইয়ে তাঁর ক্লান্তিহীন গবেষণা তাঁকে পবিত্র অসন্তোষে সক্রিয় করে রেখেছিল। প্রয়োজনে ছুটে বেরিয়েছেন লক্ষ্যভেদী অর্জুনের মতো।
হেনরিয়েটা যে ফরাসি নন, মদুসূদনের ইংরেজ সহকর্মীর কন্যা, তা আবিষ্কার করেছিলেন ফ্রান্সের ভার্সাইতে গিয়ে। মাদ্রাজের পত্রপত্রিকাও ছিল তাঁর আরও আরও একটি তথ্যের উৎস। অবশ্য তাঁর পক্ষে যে সব তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হয়নি, তাও জানিয়েছেন অকপটে। মাইকেলের সঙ্গে রেবেকার সম্পর্ক কখন এবং কীভাবে ভেঙে গেল, তা জোড়া লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল কিনা, তা গোলাম মুরশিদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। পূর্ণতার আভিজাত্যবোধে অপূর্ণতার পরিচয় প্রকট হয়ে ওঠে। সেখানে মধুসূদনের আসল জীবনকে খুঁজতে গিয়ে গোলাম মুরশিদের অভিযান আজীবন জারি ছিল। মাইকেল জীবনী ‘আশার ছলনে ভুলি’র পরেও তাঁর গবেষণা থেমে থাকেনি, তাঁর নিরন্তর গবেষণার ফসল ইংরেজিতেও একাধিক বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যদিকে, তাতে তাঁর মাইকেল মধুসূদনের অসাধারণ জীবনী ‘আশার ছলনে ভুলি’র অবদান যে কোনওভাবে ব্যাহত হয়নি, তা জীবনীটির ধারাবাহিক প্রকাশ থেকে তার বইয়ের সমাদরেই প্রতীয়মান। তার জনপ্রিয়াতাই আগেকার মধুসূদন জীবনীর নামগুলি পর্যন্ত আড়াল করে বিস্মৃত করে তুলেছে। অন্যদিকে মদুসূদনের ‘আশার ছলনে ভুলি’ই নামটি উচ্চারণের সঙ্গেই গোলাম মুরশিদের নামটি এসে জুড়ে যায় । সেখানে সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার একাত্মতাই বনেদি আভিজাত্য লাভ করে। মাইকেলের জীবনীতে তাঁর জীবনের সঙ্গে তাঁর স্বকীয় সৃষ্টির যোগসূত্রকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই গোলাম মুরশিদের অনন্যসাধারণ প্রয়াস বাংলায় জীবনী লেখার ধারাকেই মোড় ফিরিয়ে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুশো বছর পূর্তিতে (১৮২৪-২০২৪) গোলাম মুরশিদের ‘আশার ছলনে ভুলি’ই যে তাঁকে নিয়ে সেরা গবেষণা উপহার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।