দীর্ঘ যন্ত্রণা

bilkis bano

আতঙ্কের কাহিনির সঙ্গে যে কলঙ্ক যুক্ত থাকে তা সময়ের সঙ্গে ম্লান হয়ে যায় না।ন্যায়বিচার দেওয়ার ভারতীয় ব্যবস্থায় এটা একটা কলঙ্কচিহ্ন হিসাবেই থেকে যাবে।যদিও হিংসাত্মক অপরাধের কোনও শিকারের ক্ষেত্রে অর্থ কোনও পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ হতে পারে কিনা তা নিয়ে শীর্ষ আদালত সন্দেহ প্রকাশ করেছে।মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ২০০২ – এর গুজরাত গণহত্যার শিকার বিলকিস বানুকে ক্ষতিপুরণ হিসাবে ৫০ লক্ষ টাকা,একটি বাড়ি ও একটা চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যকে।বিলকিসের কাহিনি সারা বিশ্বকে জম্ভিত করে দিয়েছিল।১৭ বছরের যন্ত্রণার পর তিনি আদালতের এই রায় পেলেন।তার জন্য তাকে এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে দৌড়তে হয়েছে, লড়তে হয়েছে ব্যাপক লড়াই।গুজরাত সরকারের পক্ষের কৌসুলি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ,বিচারপতি দীপক গুপ্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্না স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ হন।বিচারপতিরা তাকে সাবধান করে বলেন,ভাগ্য ভাল যে তারা রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না।

গােধরায় ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর যে মনােভাব নিয়ে গুজরাতে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তা একটা কালাে অধ্যায় হয়ে আছে এবং সেটা এমন একটা রাজ্যে ঘটেছিল যা মহাত্মা গান্ধির পুণ্যভূমি হিসাবে বন্দিত।আদালত কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে আদেশ পালনের জন্য একটা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।আশা করা যায় এই বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখা হবে যাতে যন্ত্রণা আর দীর্ঘায়িত না হয়।আদালত বলেছে,’এটা খুবই পরিষ্কার যে যা ঘটা উচিত ছিল না তাই ঘটেছে।তাই রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।’

তবে বিলকিসকে যে দুর্বিপাকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে,অর্থ তার সেই ক্ষতিপূরণ করতে পারে কিনা তা নিয়ে আদালত সংশয় প্রকাশ করেছে এবং আরও বেশি কিছু করতে না পারার জন্য দু:খপ্রকাশ করেছে।


বিচারপতিরা যেমন অতীত আঁকড়ে বসে থাকার বিরুদ্ধে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন,তেমনি এটা ভুলে যাওয়ার নয় যে অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন,তাঁর চোখের সামনেই মেয়ের মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল,তাঁর পরিবারের কয়েকজনকে কোতল করা হয়েছিল। বিলকিসকে মৃত ভেবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু আদিবাসী তাঁর ত্রাণে এগিয়ে এসে তাঁকে রক্ষা করে।গােলমালটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি।পুলিশ এই ঘটনা সম্পর্কে উদাসীন ছিল।ফলে বিলকিসকে বিচারপর্বটা গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্রে সরানাের অনুরোধ জানাতে হয়।তারপর সেই লড়াইকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হয়।

একজন সহানুভূতিশীল কৌসুলি ও কয়েকটি এনজিও একমাত্র বিলকিসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সম্প্রতি এক শুনানির সময় তাঁর কৌসুলি বলেন,‘প্রত্যেকটি স্তরের মর্যাদা থেকে তিনি বঞ্চিত, ভরণপােষণের কোনও ব্যবস্থা নেই তাঁর, তাঁকে যাযাবরের জীবন কাটাতে হচ্ছে।সুপ্রিম কোর্টের রায় জানার পর বিলকিস বলেছেন,“আমি এখনও দুঃস্বপ্নের মধ্যে রয়েছি।কয়েক বছর আমি এক নাগাড়ে আতঙ্কের জীবন কাটিয়েছি।সুপ্রিম কোর্টকে আমি ধন্যবাদ জানাই,আইন আমাকে সুবিচার দিয়েছে,কিন্তু আমার ক্ষত কেউ দুর করতে পারবে না।যারা রাষ্ট্রীয় তাণ্ডবের শিকার তারা সকলেই একথার প্রতিধ্বনি করবেন’। রাজধানীর কিছু মানুষের কাছে ১৯৮৪-র স্মৃতি এখনও আতঙ্কের।দিল্লির ও গুজরাতের হত্যালীলার নাটের গুরুরা কিন্তু এখনও যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ।