সার্ধশতবর্ষে জিম করবেট শিকারি থেকে সংরক্ষক

ফাইল চিত্র

শোভনলাল চক্রবর্তী

এডওয়ার্ড জেমস করবেট, সংক্ষেপে জিম করবেট ১৮৭৫ সালে সেকালের হিমাচল প্রদেশ, আজকের উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল জেলায় এক ইংরেজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময় চারপাশের প্রকৃতি অন্বেষণ করে বড় হয়েছিলেন। জিম করবেট তাঁর জীবনের একটা বড় অংশ জঙ্গলের মধ্যে কাটিয়েছিলেন এবং জঙ্গলের পশু, পাখি, গাছপালা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি থেকেছেন নৈনিতালে অবস্থিত গার্নি হাউসে, তাঁর মা মেরি জেন ​​করবেট এবং তার দিদি মার্গারেট উইনফ্রেড করবেটকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর দিদিকে তিনি আদর করে ম্যাগি বলতেন, এই দিদিকে সঙ্গে নিয়েই তিনি শেষ জীবনে ভারত ত্যাগ করেন। জিম করবেটের বয়স যখন চার বছর, তখন নৈনিতালে পোস্টমাস্টার পদে চাকুরীরত অবস্থায় তাঁর বাবা মারা যান। করবেটের মায়ের উপর সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে। এক বিধবার সামান্য পেনশনে ১২ সন্তানকে লালন-পালন ও শিক্ষাদানের লড়াই শুরু হয়। অল্প বয়সেই জিম করবেটকে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়, তাই তিনি রেলওয়েতে চাকরি নেন, কুলি সর্দারের কাজ। বাকিটা ইতিহাস।

১৯০৭ থেকে ১৯৩৮ দীর্ঘ তিন দশক ধরে রাতের পর রাত হিংস্র শ্বাপদের সন্ধানে কেটেছে জিম করবেটের। একাধিকবার প্রায় অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। তথাপি বাঘকে ‘নিষ্ঠুর ও রক্তপিয়াসী’ বলতে ঘোরতর আপত্তি তাঁর। জিমের কথায়, ‘বাঘ উদারহৃদয় ভদ্রলোক। সীমাহীন তার সাহস। যে দিন বাঘকে বিলোপ করে দেওয়া হবে, যদি বাঘের সপক্ষে জনমত গড়ে না ওঠে বাঘ লোপ পাবেই, তা হলে ভারতের শ্রেষ্ঠতম প্রাণীর বিলোপে ভারত দরিদ্রতরই হবে।’ ভারতে দেশীয় রাজন্যদের ‘শিকার খেল’ নতুন কিছু নয়। এ দেশে ব্রিটিশরাজ কায়েম হওয়ার পর লাট-বেলাটের দলও শৌর্যের প্রতীক হিসাবে বিরাট দলবল নিয়ে গিয়ে অরণ্যে শ্বাপদ নিধনে মেতেছেন। পরবর্তী জীবনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে উঠেপড়ে লাগলেও তথ্য হিসাবে উল্লেখ করা দরকার যে এমন শিকারে রাজপুরুষদের সঙ্গ দিতে হয়েছে জিমকেও। ‘ডোমিসাইল্ড ইংলিশ’ জিম নিজের প্রভাব বাড়াতে রাজপুরুষদের তুষ্ট রাখতে চাইতেন এমন কথাও উঠেছে। তবে জিম ব্যাপারটা যে পরবর্তী জীবনে প্রসন্ন চিত্তে মানতে পারেননি সেটাও সত্য। শিকারি জিমের আড়ালে কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে এক চিরকিশোর। ফাটা নল গাদা বন্দুক নিয়ে যে একাই ঘুরে বেড়ায় বনে-পাহাড়ে। নকল করে পশুপাখির ডাক। আয়া-খানসামাদের কাছ থেকে শেখে হিন্দুস্থানি ও দেশি পাহাড়ি ভাষা। স্কুলের পর আর উচ্চশিক্ষার সুযোগ হয়নি। ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু বাড়িতে একগাদা লোকের অন্ন সংস্থানের জন্য যেতে হয় বিহারের মোকামাঘাটে। ২১ বছর ধরে মোকামাঘাটে রেল কোম্পানির হয়ে কুলির ঠিকাদারি। বয়সের ধর্মে ভাল লেগেছিল শ্বেতাঙ্গিনী এক কিশোরীকে। কিন্তু মা ও দিদির প্রবল বাধায় শুকিয়ে যায় সেই প্রেমের কলি।


করবেটের লেখার মধ্যে ‘মাই ইন্ডিয়া’য় তাঁকে ঘিরে থাকা দরিদ্র-অন্ত্যজ মানুষগুলিকে নিয়ে তাঁর লেখাগুলি সেরার সেরা। অন্ত্যজ শ্রেণির কুলি সর্দার চামারি শেষনিঃশ্বাস ফেলে জিমেরই হাত ধরে। বলে, ‘পরমেশ্বর, আমি আসছি’। শেষযাত্রায় উপস্থিত কাশীর এক মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। এই ২০২৫ সালেও এ ঘটনাকে মনে হয় ‘বিপ্লব’। এ ছাড়া ‘লালাজি’, বুদ্ধু, ডাকু সুলতানা— প্রতিটিই যেন উজ্জ্বল হীরক খণ্ড। কেউ কেউ মোকামাঘাট ও গাড়োয়াল-কুমায়ুনে দরিদ্র অন্ত্যজনের প্রতি জিমের দরদকে প্রশংসা করলেও সেটাকে ‘দরদী প্রভু ও অনুগত প্রজা’ সম্পর্কেই বেঁধে রাখার পক্ষপাতী। মনে রাখতে হবে ছোটা হলদিওয়ানি-কালাধুঙ্গি সাধারণ মানুষ জিমকে ‘শ্বেতাঙ্গ সাধু’ হিসাবেই দেখত। খুব গোঁড়া পরিবারেও জিমের সামনে মহিলাদের আসায় কোনও ‘পর্দা’ ছিল না। মোকামাঘাটে থাকার সময় স্থানীয় কুলিদের সঙ্গে মিশেছেন। স্কুল করে দিয়েছেন তাদের ছেলেদের পড়ার জন্য। হকি ও ফুটবল টিম গড়ে খেলেছেন এই ‘নেটিভ’-দের সঙ্গেও।নৈনিতাল, কালাধুঙ্গি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ঘর-জমি দিয়ে গিয়েছেন তাদের, এমনকী মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার খাজনা পর্যন্ত দিয়ে এসেছেন। স্থানীয় মানুষরা কষ্ট পাবে ভেবে প্রায় নীরবে নিঃশব্দে এ দেশ ছাড়েন জিম ও তাঁর দিদি ম্যাগি।

ভারত স্বাধীন হল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। আর তাঁরা ভারত ছাড়লেন ওই বছরই নভেম্বরে। ২১ নভেম্বর গার্নি হাউস বিক্রি হয়ে গেল। তার ক’দিনের মধ্যেই বাড়ির বাগানে একটি গাছের চারা রোপণ করে ও জঙ্গলে বন্দুকগুলি ‘সমাধিস্থ’ করে চিরদিনের মতো ভারত ছাড়লেন জিম ও ম্যাগি। প্রথমে লখনউ। সেখান থেকে মুম্বই। মুম্বই বন্দর থেকে ‘এস এস অ্যারোন্দা’ জাহাজে মোম্বাসা। লখনউ স্টেশনে সাহেবকে বিদায় জানাতে এসে কেঁদে ফেলে রাম সিংহ। জিম ও ম্যাগির চোখও শুষ্ক ছিল না। সাগরপাড়ি দিয়ে জাহাজ মোম্বাসা পৌঁছায় ১৫ ডিসেম্বর। করবেটরা এখান থেকে যান নাইরোবি। পরে আস্তানা গাড়েন নিয়েরে। জার্মানদের হাত থেকে দখলমুক্ত হয়ে ওই অঞ্চল তখন ব্রিটিশ উপনিবেশ। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের সূত্রে ও পরে লন্ডন-সহ ব্রিটেন সফর করলেও জিম বা ম্যাগি কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না খাঁটি ইওরোপিয়ানদের সঙ্গে। আসলে ‘ডোমিসাইল্ড ইংলিশ’ হিসাবে কোথাও একটা হীনমন্যতা হয়তো ছিল। কারও কারও অভিমত, সিপাহি বিদ্রোহের ‘ভূত’ ঘাড় থেকে নামেনি। আশঙ্কা ছিল, স্বাধীন ভারতে নতুন শাসক শ্রেণি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। সাত-পাঁচ ভেবে সে জন্যই ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্ত।

জিম করবেটের জীবন ছিল অ্যাডভেঞ্চার, সাহস এবং প্রজ্ঞার এক অনন্য মিশ্রণ। তিনি কেবল একজন কিংবদন্তি শিকারিই ছিলেন না, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একজন পথিকৃৎ ছিলেন। শিকারি থেকে সংরক্ষণবাদীতে তাঁর রূপান্তর ছিল প্রাকৃতিক জগত সম্পর্কে তাঁর ক্রমবর্ধমান বোধগম্যতা এবং একসময় তিনি যে প্রাণীদের অনুসরণ করতেন তাদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। আজ, জিম করবেট কেবল তাঁর মানুষখেকো শিকারের জন্যই নয়, বরং ভারতের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে তাঁর স্থায়ী অবদানের জন্যও স্মরণীয়। তাঁর লেখা, তাঁর সংরক্ষণ প্রচেষ্টা এবং জিম করবেট জাতীয় উদ্যানের আকারে তাঁর উত্তরাধিকারের মাধ্যমে, তিনি বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ইতিহাসে একজন প্রতীকী ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়ে গিয়েছেন।

যদিও করবেট তাঁর শিকার দক্ষতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, তবুও তিনি অবশেষে বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু করেন। মানুষখেকোদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে ভঙ্গুর ভারসাম্য সম্পর্কে বোধ তাঁর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আসল সমস্যাটি প্রাণীরা নিজেরা নয় বরং তাদের আবাসস্থলে মানুষের বসতি স্থাপনের অনুপ্রবেশ, যা প্রায়শই সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করে।

করবেট তাই অচিরেই ভারতের বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পক্ষে একজন প্রবক্তা হয়ে ওঠেন, শিকার, বন উজাড় এবং মানব বসতির বিস্তারের ফলে সৃষ্ট বিপদগুলি নিয়ে সরকারকে সচেতন করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করা উচিত, খেলাধুলার জন্য শিকার নয়। জীবনের শেষের দিকে, করবেট একজন শিকারী থেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ সংরক্ষণবাদী হয়ে ওঠেন, তিনি একসময় যে প্রাণীদের শিকার করতেন, তাদের আবাসস্থল রক্ষা করার জন্য কাজ করতেন। দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের ফলে করবেট ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান তৈরিতে জড়িত হন। ১৯৩৬ সালে, ভারত সরকার কুমায়ুন অঞ্চলে বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য হেইলি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠা করে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে তাঁর অবদানের সম্মানে এই উদ্যানটির নামকরণ করা হয় জিম করবেট জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানটি বাঘ, সেইসঙ্গে অন্যান্য অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য একটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এবং ভারতের অন্যতম প্রধান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী হিসেবে করবেটের ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে রয়ে গিয়েছে। শিকারি এবং সংরক্ষণবাদী হিসেবে তাঁর কাজের পাশাপাশি, জিম করবেট একজন প্রখ্যাত লেখকও ছিলেন। তাঁর বই, বিশেষ করে ‘ম্যান-ইটার্স অফ কুমায়ুন’ (১৯৪৪) তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। এই স্মৃতিকথায়, করবেট মানুষখেকো বাঘ এবং চিতাবাঘের খোঁজ এবং হত্যার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তবে, এটি কেবল একটি শিকারের গল্প নয়, বইটি করবেট যে প্রাণীদের অনুসরণ করেছিলেন, তাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান কৃতজ্ঞতা এবং মানুষের সম্প্রসারণের ফলে পরিবেশগত অবক্ষয় সম্পর্কে তাঁর উদ্বেগকেও প্রতিফলিত করে। করবেটের লেখায় ‘দ্য টেম্পল টাইগার’ এবং ‘মোর ম্যান-ইটার্স অফ কুমায়ুন’ (১৯৫৪) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে , যা বনে তাঁর জীবনের গল্প অব্যাহত রেখেছে। তাঁর রচনায় ব্যক্তিগত উপাখ্যান, তাঁর শিকারের বিশদ বিবরণ এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্যের প্রতিফলন একত্রিত করা হয়েছে। এই বইগুলি কেবল অ্যাডভেঞ্চারের অ্যাকশন-প্যাকড গল্প নয় বরং বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাবের উপর গভীরভাবে আলোকপাত করা লেখা।

যে লেখা বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। করবেট প্রাণী হত্যাকে মহিমান্বিত করেননি বরং মানুষ-প্রাণী সংঘর্ষের জটিল গতিশীলতা তুলে ধরেছেন। তিনি প্রকৃতির সঙ্গে আরও শ্রদ্ধাশীল সম্পর্কের পক্ষে ছিলেন, যেখানে মানুষ বন্যপ্রাণীকে ভয় বা শোষণ করার পরিবর্তে তাদের সাথে সহাবস্থান করবে।

জিম করবেটের উত্তরাধিকার বহুমুখী। যদিও তিনি একজন শিকারি হিসেবে তার কৃতিত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়, তবুও একজন সংরক্ষণবাদী হিসেবে তাঁর পরবর্তী কাজের ফলে ভারতে বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। জিম করবেট জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রচেষ্টা ভারত এবং বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের জন্য একটি মডেল তৈরি করেছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে করবেটের অবদান কেবল পার্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ভারতের বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদের উন্নত ব্যবস্থাপনার পক্ষেও কথা বলেছিলেন এবং বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানকে উৎসাহিত করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। করবেটের প্রভাব আধুনিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টার উপরও বিস্তৃত যা ভারত জুড়ে জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং সংরক্ষিত অঞ্চলগুলির ব্যবস্থাপনাকে রূপ দেয়। ইন্দোচিন হিমালয়ের বাঘ, প্যান্থেরা টাইগ্রিস করবেট্টি, তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে, যা ভারতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের একজন হিসেবে তাঁর মর্যাদাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে। জিম করবেট ১৯ এপ্রিল, ১৯৫৫ সালে মারা যান, কিন্তু তাঁর কাজ বন্যপ্রাণী উৎসাহী, সংরক্ষণবাদী এবং পরিবেশবাদীদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।