ভয়ঙ্কর ছবি বিহারে

এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে মুজফফরপুরের হাসপাতালে। (Photo: IANS)

বয়স্করা শিশুদের বাঁচাতে ব্যর্থ এমন একটি রাজ্য যেখানে শিশুদের যত্ন শুন্যে পৌঁছেছে। বিহারে অসুস্থদের একটা মিছিল চলছেই যা মানব উন্নয়ন সূচকের একটা ভয়ঙ্কর ছবি তুলে ধরছে। ফলে বিহারে জনস্বাস্থ্য নিয়ে একটা গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে।

কেন্দ্র ও পাটনার প্রশাসন মৃত্যুমিছিল মােকাবিলার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। মুজফফরপুর জেলায় কঠিন এনসেফেলাইটিস রােগে এখন পর্যন্ত কম করে ১১৬টি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। আশপাশের জেলাগুলিতেও এই রােগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শিশুমৃত্যুর হার যেখানে পৌঁছেছে তার সঙ্গে একমাত্র সাব সাহারান আফ্রিকার সঙ্গে মৃদু তুলনা দেওয়া যেতে পারে। অপুষ্টিতে ভােগা বিহারের একটা ভয়ঙ্কর ছবি ফুটে উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের স্বাস্থ্য পরিচালন তথ্য ব্যবস্থার রিপাের্ট যদি কোনও ইঙ্গিত হয় তাহলে বলতে হবে চিকিৎসা তাে দূরস্থান রােগ মােকাবিলার ব্যবস্থারই অভাব রয়েছে।


আঞ্চলিক দারিদ্র্যের শিকার একটা অনুন্নত রাজ্যকে এর মােকাবিলা করতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এটা উল্লেখ করতে হচ্ছে যে। মুজফফরপুরে ১০৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একমাত্র সমষ্টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রােগ নির্ণয়ের প্রাথমিক ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। ২৪ ঘণ্টার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যেখানে অন্তত একজন ডাক্তার থাকবেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স ও সাহায্যকারী ও ল্যাবরেটরি থাকবে– এরকম একটা ব্যবস্থা জরুরি। কিন্তু তার অভাব রয়েছে। 

পাটনায় মাঝে মাঝে রাজনৈতিক খেলা হয় বটে, কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে উপদ্রুত জেলায় এমন একটা মেডিকেল সেন্টার নেই যা। শুন্যের চেয়ে বেশি রেটিং পেতে পারে। একটা হাসপাতালে শিশুদের জন্য। আইসিইউ আছে বটে, কিন্তু তার প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে নেই।

এবছর এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের ২৫ শতাংশেরই মৃত্যু ঘটেছে, যেখানে স্বাভাবিক গড় ৬ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে ঘােরাফেরা করে। ১০০টি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে রােগ নির্ণয় ও চিকিৎসার অভাবে।

ডাক্তাররাও এই রােগের কারণ খুঁজে পেতে হিমসিম খেয়েছেন। লিচুর বিষ থেকেই এই রােগ দেখা দিল? নাকি দাবদাহ এর কারণ? নাকি অপুষ্টি থেকে এই রােগের উৎপত্তি? অথবা জরাজীর্ণ পরিকাঠামাের কারণেই এত মৃত্যু? এইসব প্রশ্নের কোনও চটজলদি জবাব পাওয়া যাবে না।

শিশুরা রােগ নির্ণয় ছাড়াই মারা যাচ্ছে। বিভ্রান্ত ও অজ্ঞ সরকারি ব্যাখ্যা দিয়ে নির্মম সত্যকে চাপা দেওয়া যাচ্ছে না। একথা বলতেই হবে যে বিহার সরকার লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যুসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আশা করা যায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন অফ নিউট্রিশন ও রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাগুলির বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যে পাঁচটি দল গড়া হয়েছে তারা সঠিকভাবে চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। শিশুদের প্রতি বড়দের তাে একটা দায় আছে।