হীরেন্দ্রনাথ দত্ত
পূর্ব প্রকাশিতর পর
বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হলেন উইলিয়াম কেরি। তিনি ইতিমধ্যেই বাংলাভাষায় কিঞ্চিৎ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। কেরি তাঁর কাজে সহায়তা করবার জন্য কয়েকজন দেশীয় পণ্ডিতকে নিযুক্ত করলেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষবাবে উল্লেখযোগ্য রামরাম বসু এবং মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার। কেরি তাঁর পণ্ডিতদের সর্বাগ্রে লাগিয়ে দিলেন বাংলা গদ্য গ্রন্থ রচনার কাজে। বৎসরকাল মধ্যেই প্রথম গ্রন্থটির রচনা সমাপ্ত হল। কাজেই এরূপ ধারণা হওয়া কিছু বিচিত্র নয় যে বাংলা গদ্যের সৃষ্টি হয়েছে ইংরেজের প্রয়োজনে এবং তাদেরই উদ্যোগে।
এরূপ ভাবাটা কিছুই অসঙ্গত নয়; তবে এর মধ্যে সামান্য যে ভ্রান্তিটুকু আছে সেটুকু এখানে বলে নেওয়া ভালো। যকনকার কথা বলছি—অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে প্রথম যখন বাংলা গদ্যের খোঁজ পড়ল তখন সত্যই তার অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য দেশীয় পণ্ডিতগণ শ্রমসাধ্য গবেষণা দ্বারা বাংলা গদ্যের কিছু পুরানো নিদর্শন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। এসব নিদর্শনের মধ্যে আছে কিছু চিঠিপত্র, কিছু দলিল-দস্তাবেজ, কিছু বা গ্রন্থাদির অংশবিশেষ।
গবেষকদের মতে চিঠিপত্রের প্রাচীনতম নিদর্শনটি ষোড়শ শতকে (১৫৫৫) কোচবিহারের মহারাজ নরনারায়ণ কর্তৃক আহোম-রাজকে লিখিত। পত্রটির কয়েক পঙক্তি এখানে উদ্ধৃত করছি—‘‘লেখনং কার্যঞ্চ। এথা আমার কুশল। তোমার কুশল নিরন্তরে বাঞ্ছা করি। অখন তোমার আমার সন্তোষ সম্পাদক পত্রাপত্রি গতায়াত হইলে উভয়ানুকূল প্রীতির বীজ অঙ্কুরিত রহে। তোমার আমার কর্ত্তব্যে বার্দ্ধতাকপাই পুষ্পিত ফলিত হইবেক। আমরা সেই উদ্যোগত আছি। তোমারো এগোট কর্ত্তব্য উচিত হয় না কর তাঁক আপনে জান। অধিক কি লেখিম।…’’
(ক্রমশ)