ভারতীয় শিক্ষার বিশ্বায়ন : যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতে শাখা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রতন ভট্টাচার্য

ভারতীয় শিক্ষার বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা আর কেবলমাত্র জাতীয় সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আজকের দিনে উচ্চশিক্ষা একটি আন্তঃজাতিক অভিজ্ঞতা, যেখানে বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রী, গবেষক এবং শিক্ষক একত্রিত হয়ে জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবনের আদান-প্রদান করেন। এই প্রেক্ষাপটে, যদি যুক্তরাজ্যের (ব্রিটেন ) কোনো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে তাদের শাখা খোলে, তবে তা শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই আন্তর্জাতিক সংযোগ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি শুধু ছাত্রদের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য একটি গৌরবজনক ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ। ভারতের University Grants Commission (UGC) এবং International Financial Services Centres Authority (IFSCA)-এর অনুমোদন অনুযায়ী, নিচের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে শাখা খোলার অনুমতি পেয়েছে।

সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় গুরগাঁও, হরিয়ানাতে সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে চালু করেছে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় মুম্বইতে ২০২৬ সালের গ্রীষ্মে শুরু করেছে । মুম্বইতে ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৬ সালে এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় শুরু ২০২৬ সালে শুরু করেছে। বেঙ্গালুরুতে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৬ সালে শুরু করেছে। ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় বেঙ্গালুরু অনুমোদিত, শীঘ্রই শুরু । গুজরাতে অনুমোদিত হয়েছে সারে বিশ্ববিদ্যালয় ও কুইনস এবং কোভেন্টরি বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকা অনুযায়ী, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গুরগাঁও ও গিফট সিটি হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার নতুন কেন্দ্র। এই সব উদ্যোগের পটভূমি ভারত সরকার ২০২৩ সালে একটি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে, যার মাধ্যমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে শাখা খোলার অনুমতি পায়। এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য: ভারতীয় ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিজ দেশে পৌঁছে দেওয়া।


গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। ভারতকে একটি গ্লোবাল এডুকেশন হাব হিসেবে গড়ে তোলা। এই নীতির আওতায়, শুধুমাত্র সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে শাখা খুলতে পারবে, যাদের বিশ্ব র‍্যাংকিং ৫০০-এর মধ্যে অবস্থান রয়েছে এবং যারা গবেষণায় অগ্রণী। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিকীকরণের উদ্দেশ্যে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেমন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (UCL) ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে তাদের শিক্ষার মান, গবেষণার গভীরতা এবং একাডেমিক সংস্কৃতির জন্য প্রসিদ্ধ। যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতে তাদের শাখা খোলে, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পাবে, তাও নিজের দেশে থেকেই। পাঠ্যক্রমে থাকবে বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি, যা ছাত্রদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসেবে গড়ে তুলবে। গবেষণার সুযোগ ও পরিকাঠামো হবে উন্নত, যা ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। এই আন্তর্জাতিকীকরণ ভারতীয় শিক্ষাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী করে তুলবে।
ছাত্রদের জন্য সুযোগের প্রসার

প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেনে যায়। কিন্তু বিদেশে পড়াশোনার খরচ অত্যন্ত বেশি — টিউশন ফি, আবাসন, যাতায়াত, ভিসা ইত্যাদি। অনেক ছাত্র আর্থিক কারণে বিদেশে যেতে পারে না, যদিও তাদের মেধা আছে।যদি ব্ৰিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে শাখা খোলে: খরচ অনেক কম হবে, কারণ ছাত্ররা নিজের দেশে থেকেই পড়াশোনা করতে পারবে। পরিবার ও সংস্কৃতির কাছাকাছি থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ মিলবে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা কমবে, ফলে “brain drain” হ্রাস পাবে।

গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অত্যন্ত অগ্রণী। ভারতে তাদের উপস্থিতি: ভারতীয় গবেষকদের সঙ্গে যৌথ গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রযুক্তি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি আসবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুদান ও প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়বে। বিশেষ করে STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics) ক্ষেত্রের উন্নয়নে এই সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি ও ভাষার আদান-প্রদানে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বহু পুরনো। কিন্তু আজকের দিনে সেই সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলার সময় এসেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের স্থান, যেখানে ভারতীয় ও ব্রিটিশ সংস্কৃতি একে অপরকে জানবে। সাহিত্য, ইতিহাস, ভাষা ও শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আদান-প্রদান হবে। ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যও আন্তর্জাতিক মঞ্চে উঠে আসবে।

এই প্রক্রিয়া ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক গর্ব বৃদ্ধি করবে। অর্থনৈতিক প্রভাব ও কর্মসংস্থান বাড়বে। একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ফলে: স্থানীয় অবকাঠামো উন্নত হবে — ক্যাম্পাস, হোস্টেল, গবেষণাগার, লাইব্রেরি ইত্যাদি। শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মী, প্রযুক্তি সহায়তা— বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শহর বা অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে বিকশিত হবে। এছাড়া, বিদেশি ছাত্রদের আগমন হলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বাড়বে এবং স্থানীয় ব্যবসা যেমন হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন ইত্যাদি লাভবান হবে। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে এলে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মানোন্নয়নের জন্য উৎসাহিত করবে। পাঠ্যক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, গবেষণা পদ্ধতি সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের চাপ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে যৌথ ডিগ্রি বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু হতে পারে।

এই প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা মিলিয়ে ভারতীয় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন ঘটবে। তবে এই উদ্যোগে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকবে। ভারতীয় শিক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে — UGC, AICTE, NEP ইত্যাদি। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও মান নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ফি কাঠামো, ভর্তি প্রক্রিয়া, ডিগ্রির স্বীকৃতি— সবকিছু স্বচ্ছ ও ন্যায্য হতে হবে। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রককে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

আঞ্চলিক ও ভাষাগত অন্তর্ভুক্তি ভারতের মতো বহুভাষিক ও বহুসাংস্কৃতিক দেশে: বিশ্ববিদ্যালয়কে আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। বাংলা, হিন্দি, তামিল, অসমীয়া, ওড়িয়া — স্থানীয় ভাষায় কিছু কোর্স চালু করা যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ ও বিশেষ সুযোগ দিতে হবে।
এই অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া প্রকৃত শিক্ষার প্রসার সম্ভব নয়।

ভারতে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, বরং বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা আর কেবলমাত্র জাতীয় সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আজকের দিনে উচ্চশিক্ষা একটি আন্তঃজাতিক অভিজ্ঞতা, যেখানে বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রী, গবেষক এবং শিক্ষক একত্রিত হয়ে জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবনের আদান-প্রদান করেন। এই প্রেক্ষাপটে, যদি যুক্তরাজ্যের (ব্রিটেন) কোনো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে তাদের শাখা খোলে, তবে তা শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। ভারতে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা। তবে এই উদ্যোগকে সফল করতে হলে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং ছাত্রসমাজ — সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এই প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হবে — যেখানে জ্ঞান, সংস্কৃতি এবং মানবিকতা একসঙ্গে বিকশিত হবে।

ভারতের মতো বহুভাষিক ও বহুসাংস্কৃতিক দেশে: বিশ্ববিদ্যালয়কে আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। বাংলা, হিন্দি, তামিল, অসমীয়া, ওড়িয়া— স্থানীয় ভাষায় কিছু কোর্স চালু করা যেতে পারে। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ ও বিশেষ সুযোগ দিতে হবে। এই অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া প্রকৃত শিক্ষার প্রসার সম্ভব নয়। ভারতে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বিশ্বায়ন শব্দটি আজকের দিনে বহুল ব্যবহৃত একটি ধারণা, যা অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, যার শিকড় প্রাচীন গুরুকুল থেকে শুরু করে আধুনিক ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষে বিস্তৃত, আজ বিশ্বায়নের প্রভাবে এক নতুন রূপ নিচ্ছে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব কীভাবে বিশ্বায়নের যুগে ভারতীয় শিক্ষা পরিবর্তিত হয়েছে, কী চ্যালেঞ্জ এসেছে, এবং কী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীন ভারতে গুরুকুল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা গুরুদের আশ্রমে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত। তক্ষশিলা, নালন্দা, বিক্রমশীলা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল নৈতিকতা, দর্শন, বিজ্ঞান এবং সাহিত্যভিত্তিক। ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশরা পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে, যার ফলে ইংরেজি ভাষা, আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রশাসনিক দক্ষতা শেখার সুযোগ তৈরি হয়। স্বাধীনতার পর ভারত সরকার শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সার্বজনীন শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়। বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ, সমাজ এবং সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এটি প্রযুক্তি, যোগাযোগ, অর্থনীতি এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে সম্ভব হয়।

শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব দেখা যায় আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতাতে, অনলাইন শিক্ষা ও MOOC (Massive Open Online Courses)-র প্রসার, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া, এবং গবেষণার আন্তর্জাতিকীকরণ। বিশ্বমানের শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে। NEP 2020 (National Education Policy) অনুযায়ী, শিক্ষাকে আরও নমনীয়, দক্ষতাভিত্তিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর করা হয়েছে। STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics) শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইন ক্লাস, স্মার্ট বোর্ড, ডিজিটাল লাইব্রেরি, এবং AI-ভিত্তিক শিক্ষাসহ প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভার্চুয়াল শিক্ষা বিশ্বায়নের বাস্তব রূপ দেখিয়েছে। ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণা, ছাত্র বিনিময় এবং দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে। IIT, IIM, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে স্থান পাচ্ছে। প্রতি বছর লক্ষাধিক ভারতীয় ছাত্র বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য যায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ভারতীয় ছাত্রদের উপস্থিতি বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সুযোগগুলো হল ,আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ, বৈশ্বিক চাকরির বাজারে প্রবেশ, বহুভাষিক ও বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশে অভিজ্ঞতা এবং গবেষণার উন্নত সুযোগ। চ্যালেঞ্জগুলো হল : উচ্চশিক্ষার খরচ বৃদ্ধি, সাংস্কৃতিক বিভাজন ও মানসিক চাপ,মেধা পাচার (Brain Drain) এবং স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন।
শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও অনেক বড়। বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষকরা শুধু তথ্য প্রদানকারী নন, বরং তারা গাইড, মেন্টর এবং প্রযুক্তি-সক্ষম প্রশিক্ষক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে— যেমন, গবেষণার মান উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, গ্লোবাল র‍্যাংকিংয়ে অংশগ্রহণ, বিদেশি ছাত্রদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি । ভারত সরকার শিক্ষার বিশ্বায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে: যাদের মধ্যে অন্যতম হল, Study in India প্রোগ্রাম: বিদেশি ছাত্রদের ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি উৎসাহিত করা, GIAN (Global Initiative of Academic Networks): বিদেশি শিক্ষক ও গবেষকদের আমন্ত্রণ, SWAYAM: অনলাইন শিক্ষার জন্য জাতীয় প্ল্যাটফর্ম, NEP 2020: শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তন। বিশ্বায়নের ফলে ভারতীয় সংস্কৃতি, যোগ, আয়ুর্বেদ, এবং দর্শন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমে এই মূল্যবোধ ও জ্ঞান বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

ভারতীয় শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলির অন্যতম হল, নৈতিকতা ও মানবিকতা, বহুভাষিকতা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ, আত্মনির্ভরতা ও উদ্ভাবন। বিশ্বায়নের ফলে কিছু নেতি। বাচক প্রভাবও দেখা যায়, স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন, বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষার মানহানি, ও প্রযুক্তির অতিনির্ভরতা। সমাধান হল, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার ভারসাম্য রক্ষা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মানোন্নয়ন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং গবেষণার উন্নয়ন ও উৎসাহ। বিশ্বায়নের যুগে ভারতীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে: উদ্ভাবনী চিন্তাধারার উপর, আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার উপর, স্থানীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার। ভারত যদি এই দিকগুলোতে মনোযোগ দেয়, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা আজ বিশ্বায়নের যুগে এক নতুন রূপ নিচ্ছে। প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, এবং নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাকে আরও আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈশ্বিক করা হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মূল্যবোধ, ভাষা, এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা করাও জরুরি। বিশ্বায়নের সুযোগ গ্রহণ করে ভারতীয় শিক্ষা যদি নৈতিকতা, উদ্ভাবন এবং মানবিকতার ভিত্তিতে এগিয়ে চলে, তাহলে তা শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে।