দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়া সত্বেও এখনও ১০০ দিনের কাজ শুরু করার ইতিবাচক কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও সাজদা আহমেদের এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তারা হাইকোর্টের রায় খতিয়ে দেখছে। তবে এরই মাঝে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যেই খুলে গেল মোদীর মুখোশ। যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, জব কার্ড সংক্রান্ত দুর্নীতিতে অনেক এগিয়ে রয়েছে বিজেপির বিভিন্ন ডবল ইঞ্জিন সরকার। যার মগডালে বসে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ। সেখানে বাংলায় ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা অতি নগন্য। অথচ দুর্নীতির অভিযোগে বাংলায় বন্ধ থাকলেও রমরমিয়ে চলছে উত্তরপ্রদেশের ১০০ দিনের কাজ।
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, গত তিন বছরে কোন রাজ্য থেকে কত সংখ্যক ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে। এই দুর্নীতিতে কোন রাজ্য থেকে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে। রাজ্যের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও শিবরাজ সিংয়ের মন্ত্রক জানিয়েছে, গত তিনটি অর্থবর্ষে দেশজুড়ে মোট ১১ লক্ষ ৭ হাজার ৮১৪ টি ভুয়ো জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। যার মধ্যে শুধু উত্তরপ্রদেশেই বাতিল হয়েছে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ১৭২। অর্থাৎ প্রায় ৪১ শতাংশ। অন্যান্য ডবল ইঞ্জিন সরকারের সংখ্যাও চমকে ওঠার মতো। ওড়িশায় ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৮৪ (১৩.০২ শতাংশ), বিহারে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৪৯৪ (৯.৭ শতাংশ), রাজস্থানে ৬৮,৮৮৯ (৬.২২ শতাংশ), মধ্যপ্রদেশে ৫১,৭১৮ (৪.৬৭ শতাংশ), ছত্তিশগড়ে ২৯,৯৮০ (২.৭১ শতাংশ)। সেখানে বাংলায় ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হওয়ার সংখ্যা মাত্র ৫ হাজার ৯৮৪। শতাংশের বিচারে যা মাত্র ০.৫৪ শতাংশ। এমনকী বিজেপি নেতাদের স্বপ্নের গুজরাতও এগিয়ে বাংলার থেকে। সেখানে গত তিন অর্থবর্ষে মোট ৬ হাজার ৫৯২ (০.৫৯ শতাংশ) ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে।
কেন্দ্রের তথ্য সামনে আসতেই শুরু হয় বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, ফের প্রমাণ হয়ে গেল বিজেপি বাংলা বিরোধী। কেন্দ্রই বলছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা সব থেকে বেশি, শুধু অন্যায়ভাবে বাংলার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অবরোধ কি ইচ্ছাকৃতভাবে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, নাকি বিজেপি রাজ্যগুলি তদন্তের ঊর্ধ্বে। বিজেপির বাংলা বিরোধিতা, বাংলার সঙ্গে শত্রুতা, বৈষম্য, বঞ্চনা, বাংলাকে প্রতিহিংসার মধ্যে রেখে দেওয়া, এই সবকিছুই আবার প্রমাণ হয়ে গেল। বোঝা গেল নিজেদের রাজ্যে ঢালাও দুর্নীতি হলেও টাকা দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের এই পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
গত অর্থবর্ষে বাংলা থেকে মাত্র দু’টি ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে। আর গত তিন অর্থবর্ষে যত কার্ড বাতিল হয়েছে, তার ৪১ শতাংশ শুধু উত্তরপ্রদেশের। অথচ কেন্দ্রের অজুহাত দুর্নীতি হয় পশ্চিমবঙ্গে। যাঁর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সামনে এলো এত বড় ঘটনা, সেই সাংসদ মালা রায় বলেছেন, বাংলাকে যে পিছন থেকে ছুরি মারা হচ্ছিল, তা স্পষ্ট হয়ে গেল। কীভাবে বাংলার নামে মিথ্যা প্রচার ও অপবাদ চালিয়ে রাজ্যের দুর্নামের চেষ্টা করছিল বিজেপি, সেটাই প্রমাণিত হলো। আসলে চোরের মায়ের বড় গলা। ওরাই বলুক, কোনটা সত্যি, আর কোনটা মিথ্যে। ওদের এতদিনের দাবি, না ওদের দেওয়া তথ্য। ভুয়ো জব কার্ডের হদিশ খুঁজতে গিয়ে মোদী সরকারের মুখোশ খুলে গেল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যেই।