ডিয়ার ফ্রেন্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নরেন্দ্র মোদীর ‘মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড ডোনাল্ড’-এর ৫০ শতাংশ শুল্কের চাপে গত কয়েক মাসে একা ধাক্কায় আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি কমে ৩৭.৫ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এটাই রেকর্ড।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, মে থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাসে আমেরিকায় ভারতের বিপুল হারে রপ্তানি কমেছে। মে মাসে ভারত আমেরিকায় ৮৮০ কোটি ডলার পণ্য পরিষেবা রপ্তানি করেছে। তা সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৫৫০ কোটি ডলার। চার মাসে আমেরিকায় রপ্তানি কমেছে ৩৩০ কোটি ডলার, যা নজিরবিহীন।

রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশে শিল্পের সঙ্কট নেমেছে। চলতি ত্রৈমাসিকে মোদীর ঘনিষ্ঠ আদানি গ্রুপের মুনাফা কমছে রেকর্ড হারে। ৬৬.২ শতাংশ হারে তা হ্রাস পেয়েছে। গত ত্রৈমাসিকে মুনাফা ছিল ২ হাজার ৪০৮ কোটি তা চলতি ত্রৈমাসিকে কমে হয়েছে ৮১৪ কোটি টাকা। এদিকে আদানি গোষ্ঠী তার সহযোগী সংস্থা আদানি উইলমার লিমিটেডের শেয়ার বেচে দিয়ে মুনাফার ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক শাস্তির জেরে বিকশিত ভারতের অর্থনীতি নিয়ে মোদী সরকারের মিথ্যার ফানুশ যে ফেটে গিয়েছে, একথা অস্বীকার করা যায় না। তাতে মোদীর প্রিয় কর্পোরেট বন্ধু আদানির মুনাফাও কমেছে বিপুল হারে।

প্রসঙ্গত, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করলে আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি বন্ধ করতে ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক চাপানোর শাস্তি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যে শুল্ক প্রাচীর কার্যকর হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। জিটিআরআই তার তথ্যে জানাচ্ছে, এই শুল্ক প্রাচীরে ভারতের বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি কমে গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হীরা, গহনা, বস্ত্র, রেডিমেড পোশাক, সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য ইত্যাদি। এই সব পণ্যে বিপুল হারে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে তার রপ্তানি কমে গিয়েছে। এদিকে একইভাবে এই সময়ে ভারতের কষিপণ্যের রপ্তানিও কমে গিয়েছে। যেমন, কোকো রপ্তানি কমেছে ৯৯ শতাংশ হারে। দুগ্ধজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৫৯ শতাংশ হারে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং সবজি রপ্তানি কমেছে ৪৪ শতাংশ হারে। চা, কফি রপ্তানি কমেছে ৪০ শতাংশ হারে। মূলত বেশির ভাগ শ্রম নিবিড় শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে। এইসব শিল্প ছড়িয়ে আছে নাসিক, গুজরাত, কেরালা, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ে।


জিটিআরআই রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, গত দু’বছর এইসব শিল্পে বিপুল প্রসার ঘটেছে। এবারে আমেরিকায় রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এইসব এলাকায় শিল্পে চরম সঙ্কট নেমে এসেছে। শুরু হয়ে গিয়েছে শ্রমিক ছাঁটাই।

এদিকে আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের আওতার বাইরে ছিল ভারতের স্মার্ট ফোন এবং ওষুধ রপ্তানি। তাদের উপর কোনও শুল্ক চাপানো হয়নি। কিন্তু দেখা গিয়েছে এবারে আমেরিকায় স্মার্ট ফোন এবং ওষুধের রপ্তানিও কমে গিয়েছে। আমেরিকায় ভারতের স্মার্ট ফোনের রপ্তানি ৫৮ শতাংশ হারে কমেছে। মে মাসে আমেরিকায় ভারতের স্মার্ট রপ্তানি হয় ২২৯ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে তা কমে হয় ৮৮ কোটি ডলার। এই স্মার্ট ফোনের রপ্তানি ১৯৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধির পর এভাবে তার রপ্তানি কমে যাওয়ায় স্মার্ট ফোন শিল্পে বড় সঙ্কট নেমে এসেছে।

এদিকে জিটিআরআই মুখপাত্র অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছে, আমেরিকা ভারতের যেসব পণ্য শ্রমনিবিড় শিল্পের তাদের পণ্যে শুল্কের হার বিপুল হারে বাড়ানো হয়েছে। ফলে এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রম নিবিড় শিল্প। মোট রপ্তানি মূল্যের তিন ভাগের এক ভাগ হলো স্মার্ট ফোন এবং ওষুধ শিল্প পণ্যের রপ্তানি মূল্য। তাতে অতিরিক্ত শুল্ক না চাপলেও তার রপ্তানি কমেছে ৮৭ শতাংশ হারে। মে মাসে এগুলির রপ্তানি ছিল ৪০০ কোটি ডলার। তা সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ১৮০ কোটি ডলার। মোদী সরকারের তরফে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ও বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর আমেরিকার বাণিজ্য নীতি ভারতের স্বার্থরক্ষা করে বলে দাবি করলেও কার্যত তা ভারতের স্বার্থরক্ষা যে করছে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন ঘাটতি মেটাতে ইউরোপে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা দ্রুত ঘাটতি কাটাতে সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।