প্রিয় সখা তালিবান

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে রাস্তা হিসাবে আরএসএস খুঁজে নিয়েছে হিন্দুত্বকে। ধর্মবিশ্বাস, ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারা চায় হিন্দুদের জোটবদ্ধ করে হিন্দুত্বের রাজনৈতিক ছাতায় নিয়ে আসতে। দেশে হিন্দু জনসংখ্যা যেহেতু তিন চতুর্থাংশেরও বেশি, তাই ভারতীয় হিন্দুদের ৭০ শতাংশকেও ধর্মান্ধতায় ডুবিয়ে হিন্দুত্বের আফিম যদি গেলানো যায় তাহলে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে আর কোনও বাধা থাকে না। এটাই আরএসএস তথা বিজেপির রাজনৈতিক অভিমুখ। একাজ সফল করতে তারা মুসলিম বিদ্বেষ ঘৃণাকে প্রধান অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। ইসলাম অন্য আরও পাঁচটি ধর্মের মতোই একটি ধর্ম। তাঁদের ধর্মীয় প্রথা আছে, আচার আছে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম ধর্মকে দেখাতে চায় হিন্দু ধর্মের শত্রু হিসাবে। অর্থাৎ মুসলিমরা সংখ্যায় বেড়ে হিন্দুদের সংখ্যালঘু করে দেশছাড়া করবে ও তাঁদের সর্বনাশ করে ছাড়বে। মুসলিমরা হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করে মুসলিম সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এইভাবে তাঁরা হিন্দুদের জমিজমা, চাকরি-বাকরি দখল করে ফেলছে। সঙ্ঘ পরিবারের এইসব প্রচার বিজেপি নেতারা শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মুখেও শোনা যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত হিন্দুদের মধ্যে সীমাহীন মুসলিম বিদ্বেষ, আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে সঙ্ঘবাহিনী এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে চায় যাতে হিন্দুরা বাধ্য হয়ে হিন্দুত্বের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে তীব্র ও হিংস্র মুসলিম বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। যে কোনও ধরনের অপরাধ, অন্যায় ও বেআইনি কাজের সঙ্গে মুসলিমদের জড়িয়ে প্রচারের ঝড় তুলে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিভাজনকে তীক্ষ্ণ ও ব্যাপ্ত করে। এটাই পরে মেরুকরণ করে বিজেপির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরএসএস-বিজেপি সামগ্রিকভাবে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কোনওরকম বিরোধ করে না। বরং সেখানে সদ্ভাব, বন্ধুত্ব বজায় রাখে। আসেলে মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতা ছাড়া ভারতের সরকার সচল রাখা কঠিন। আর এস এস কেবল পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সংঘাতে থাকতে চায়। তাতে ভারতের হিন্দুদের সহজে খেপানো যায়। মোদী সরকার আরব দুনিয়ার মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চায় দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। সেখানে অর্থাৎ বিদেশে মুসলিম নেতাদের সঙ্গে গালাগালি কোলাকুলির নাটক চলে। সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতার পর্ব শুরু হয়েছে। যতদিন পাকিস্তানের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতার পর্ব শুরু হয়েছে। যতদিন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক ভালো ছিল ততদিন আফগানিস্তান ছিল পরিত্যাজ্য। ইদানিং আফগান-পাকিস্তান সম্পর্ক তিক্ত হতেই মুসলিম-বিদ্বেষী বিজেপি সরকার হঠাৎ তালিবানপ্রেমী হয়ে উঠেছে।


নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চরম শত্রুর সঙ্গে গোপনে যে হাত মেলানো যায়, তার ক্লাসিক উদাহরণ আরএসএস। হিন্দু ধর্মের রাজনীতিকরণের উদ্দেশ্যে আরএসএস যে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ বা দর্শন খাড়া করেছে বিজেপি তারই বাহক। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদ সম্পূর্ণ সম্পর্ক বর্জিত। হিন্দুত্ব একটি পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রকল্প। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের দিকে তাদের টেনে আনাই আরএসএস-এর কাজ। প্রকাশ্য রাজনৈতিক মঞ্চে একাজের দায়িত্ব বর্তেছে আরএসএস-এরই রাজনৈতিক শাখা বিজেপির ওপর। আসলে বিজেপি কোনও স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল নয়। আরএসএস-এর রিমোটেই পরিচালিত হয় বিজেপি। দলের সর্বস্তরে ৯০ ভাগ নেতাই এসেছেন আরএসএস থেকে। আরএসএস-এর কাঠামোর মধ্যে প্রশিক্ষিত ও পরীক্ষিত না হলে বিজেপির নেতা হওয়া যায় না।